মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০

<<<< সম্পাদকীয় >>>>

 

কালিমাটি অনলাইন / ৮৫

 

বিগত শতাব্দীর প্রথমার্ধে এবং তারও আগে যাঁরা জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তাঁরা প্রত্যক্ষ করেছিলেন ১৯২০ সালে সারা বিশ্ব জুড়ে অতিমারির ভয়ংকর তান্ডব। আমরা যারা বর্তমানে জীবিত আছি, ১৯২০ সালের সেই তান্ডব দেখার দুর্ভাগ্য হয়নি ঠিকই, কিন্তু ঠিক একশ বছর পরে ২০২০ সালে সম্ভবত তার থেকেও ভয়ংকর তান্ডবের মুখোমুখি হয়েছি। বিশ্বের এত এত মানুষের অকাল মৃত্যুর ভয়াবহতা এবং ঘনিষ্ঠ স্বজন হারানোর বেদনা থেকে এখনও পর্যন্ত মুক্ত হতে পারিনি। সেইসঙ্গে প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে বিশাল সংখ্যক মানুষের কর্মহীনতা এবং তারই প্রেক্ষাপটে অনাহারে অপুষ্টিতে জীবন বিপর্যয়ের এক অসহনীয় চিত্রনাট্য। বিষাক্ত ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিজেদের বাঁচাতে সবাইকে নিজের নিজের ঘরে থাকতে বলা হয়ছিল। একে একে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল অধিকাংশ বড় মাঝারি ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠান, যাবতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, পরিবহন ব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক কার্যকলাপ। নিঃসন্দেহে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ছিল। এবং এর দরুণ প্রায় সব দেশেরই অর্থনৈতিক কাঠামো বেহাল হয়েছিল। কিন্তু আসল কথাটা হচ্ছে, যাঁরা পুঁজির ব্যাপারী, তাঁদের মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন কারণে এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সংকটের সম্মুখীন হতে হয়। মুনাফার ঘাটতি হয়। কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূল হলে তারা আবার হারানো জমি ফিরে পায়। নতুন নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে লাভের কড়ি ঘরে তুলে আনে। কিন্তু এই অর্থনৈতিক সংকটের কারণে যারা কর্মচ্যূত হয়, তারা কিন্তু সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তাদের বিপদ উভয়মুখী, কর্মক্ষেত্রে থাকলে ভাইরাসের মার, আর ঘরে থাকলে নিতান্তই অনাহার। বস্তুত পক্ষে, মেহনতী মানুষের কাছে লকডাউন ব্যাপারটাই একটা নির্মম প্রহসন। বরং যাদের ঘরে খাবারের অভাব কখনও অনুভূত হয় না এবং সঞ্চিত যথেষ্ঠ অর্থ, তাদের ক্ষেত্রে লকডাউন একটা মানসিক উৎপাত বলে মনে হলেও, অন্তত অনাহারে মরার কোনো আশঙ্কা থাকে না। যত অনিশ্চয়তা, অসহায়তা ও অপরাগতা দিন আনি দিন খাই মানুষের।

 

এভাবেই একে একে অতিক্রান্ত হয়েছে ২০২০র দিনগুলি। আর কয়েকটা দিন পরেই সূচনা হবে ২০২১এর। এবছর ৩১শে ডিসেম্বরের রাতে যখন ঘড়ির কাঁটা স্পর্শ করবে ১২ নম্বর অঙ্ক, তখন কি বিশ্বের মানুষ আগের মতোই উচ্ছ্বসিত উল্লসিত হয়ে পরস্পরকে অভিবাদন ও অভিনন্দন জানাবে নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময় করে? কৃত্রিম আলোর রোশনাইতে আলোকিত হবে আকাশ? শব্দবাজির বিকট আর্তনাদে গাছে গাছে নিদ্রিত পাখিদের ঘুম যাবে ভেঙে? আর যাঁরা স্বজন হারানোর বেদনায় মুহ্যমান হয়ে আছেন, তাঁদের ক্ষততে কি একটুও স্নিগ্ধ প্রলেপ বুলিয়ে দিতে পারবে নতুন বছরের ১লা জানুয়ারী? বাস্তব বড় নির্মম। সে কোনো হাস্যরস ও কোমল রসের ধার ধারে না। কারও বেদনায় ব্যথিত হয় না। তীব্র নিদাঘ এবং তীক্ষ্ণ শৈত্যের মতোই আমাদের সামগ্রীক জীবনযাপনে তার অনুপ্রবেশ ঘটে। এটাই তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।

 

সবাই সুস্থ থাকুন। সুস্থ থাকার জন্য যে বিধি নিষেধ মেনে চলা প্রয়োজন, তা কখনই অবহেলা করবেন না।   

 

 

আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা : 

kajalsen1952@gmail.com / kalimationline100@gmail.com 

                                                                                                   

দূরভাষ যোগাযোগ :           

08789040217 / 09835544675 

                                        

অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ :

Kajal Sen, Flat 301, Phase 2, Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main Road, Pramathanagar, Jamshedpur 831002, Jharkhand, India.

 

 

 


1 টি মন্তব্য: