সিনেমার পৃথিবী – ৩
এবার জীবন ও কিছু
চড়াই উৎরাইয়ের শেষে তার উপভোগ্যতা নিয়ে হলিউডের কয়েকটা ক্লাসিক সিনেমা আলোচনা করার
পালা। পুজোর আবহে যাতে মন ভাল হয়। যাতে আমরা সবাই মাথায় রাখি যে, মেঘ আর কুয়াশা জীবনের শেষ কথা নয় – ঝলমলে রোদ
একদিন উঠবেই। সেটা কোভিড প্রসঙ্গেও সত্যি।
আমরা আজ আলোচনা করব ফ্রাঙ্ক কাপরা-র ‘ইটস্ এ ওয়ান্ডারফুল লাইফ’ (১৯৪৬), হ্যাল অ্যাশবি-র ‘হ্যারল্ড অ্যান্ড মড’ (১৯৭১), স্টিভেন স্পিলবার্গ-এর ‘দ্য কালার পার্পল’ (১৯৮৫) আর ফ্রাঙ্ক ডারাবন্ট-এর ‘দ্য শ্যশঙ্ক রিডেম্পশন’ (১৯৯৪) নিয়ে। এগুলো বেছে নিয়ে আলোচনা করার দুটো উদ্দেশ্য। এক, এগুলো সত্যিই ভাল সিনেমা (আমার মতে) এবং আমি মনে করি জীবনের ইতিবাচক দিক ফুটিয়ে তোলার জন্য এইরকম ছবি আরো হওয়া দরকার। দুই, এই চারটে ছায়াছবির এক অদ্ভুত যোগসূত্র আছে। তা হল, এগুলো খুব ভাল সিনেমা হওয়া সত্বেও কোন অস্কার পায়নি। এর থেকে একটা ব্যাপার পরিষ্কার। অস্কার পেলে তবেই সেই ছবি দারুন, নচেৎ নয় – এই ধারণা ভুল। বরং এভাবে বলা উচিৎ, অস্কার কমিটির সদস্যদের মনের ভেতর কিছু স্থিরচিত্র গাঁথা থাকে। তার সঙ্গে ফিট করলে তবেই সেই সিনেমা সেরা ছবি হিসেবে অস্কার পায়, নইলে ভাল সিনেমা হলেও পুরস্কার জোটার সম্ভাবনা কম। এবং অনেক বড় বড় চিত্র-সমালোচক অস্কার পাওয়া নিয়ে বহুবার বহু বিতর্ক তৈরি করেছেন, বারবার তাঁরা একটাই কথা বলেছেন – অস্কার পাবার সমীকরণ খুব জটিল। এই চারটে সিনেমা নিয়েও সমালোচকরা বলেছেন যে, এইসব ছবির সমসাময়িক যে ছবিগুলো সেরা ছবির অস্কার পেয়েছে - ‘বেস্ট ইয়ারস অফ আওয়ার লাইভস্’ (১৯৪৬), ‘ফ্রেঞ্চ কানেক্শন’ (১৯৭১), ‘আউট অফ আফ্রিকা’ (১৯৮৫) ও ‘ফরেস্ট গাম্প’ (১৯৯৪) – সেইবছর এগুলোর অস্কার পাওয়া উচিৎ ছিল। আমি দুটো ছবির বিষয়ে একটু ভিন্নমত পোষণ করি, কারণ আমার মতে ১৯৭১ সালে কিউব্রিকের ‘ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ’ ছিল সেরা সিনেমা আর ‘হ্যারল্ড অ্যান্ড মড’ তারপরেই। এই দুটো সিনেমাই সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে তৈরি। আর ১৯৯৪ সালের ‘ফরেস্ট গাম্প’ আমার খুব প্রিয় ছবি, কিন্তু ‘শ্যশঙ্ক রিডেম্পশন’ যে একটাও অস্কার পায়নি, সেটা সেই কমিটির অত্যন্ত ভুল সিদ্ধান্ত। এবং পাঠক, আমার এই ধারাবাহিক লেখা যত এগোবে, তত দেখবেন আমি মাঝে মাঝেই হয়ত অস্কার কমিটির সিদ্ধান্ত নিয়ে রাগ বা ক্ষোভ প্রকাশ করব। কিন্তু সেগুলো আমার ব্যক্তিগত মতামত। ওগুলো মনে রাখবেন না। কারণ আপনারাও যখন নিয়মিত সিনেমা দেখতে শুরু করবেন, তখন বুঝবেন আপনাদেরও নিজস্ব এক মতামত তৈরি হচ্ছে – কোন্ ছবির পুরস্কার পাওয়া উচিৎ আর কার পুরস্কারপ্রাপ্তি ভুল, সেই নিয়ে।
যাইহোক, আমরা সিনেমায় ফিরি। ‘ইটস্ এ ওয়ান্ডারফুল লাইফ’ জীবনের এক মন ভাল করা গল্প। বাস্তব ও অলৌকিক জগৎ যেখানে মিলেমিশে একাকার। মুখ্য চরিত্রে জেমস স্টুয়ার্ট ও ডোনা রিড। খুব ভাল অভিনেতা-অভিনেত্রী। দুজনেই একবার করে অস্কার ও গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার পেয়েছিলেন। অনেকেই হয়ত জানেন না, অভিনয়ের পাশাপাশি জেমস স্টুয়ার্ট ছিলেন একজন পাইলট ও পরবর্তীকালে আমেরিকান সেনা বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনেরাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে ফিরে এসে উনি এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। সিনেমা শুরু হচ্ছে ক্রিসমাসের সন্ধেবেলা স্টুয়ার্টের (এই সিনেমার একজন সফল ব্যবসায়ী) জন্য অনেকের প্রার্থনা দিয়ে। এই ছবিতে ব্যবসায়ীর ভূমিকায় স্টুয়ার্ট বেডফোর্ড ফল্স নামক এক শহরে সারাজীবন সবার ভাল করেছেন, কিন্তু তার এক পারিবারিক শত্রু পটার তাকে পথে বসানোর জন্য এমন কিছু কাজ করে যে স্টুয়ার্টের মনে হয় তার এবার মরে যাওয়াই ভাল। তবেই ইন্সিওরেন্সের টাকায় তার বউ-ছেলে-মেয়ে ভালভাবে বেঁচে থাকবে। সে ব্রীজের মাথা থেকে নদীতে ঝাঁপ মারবে বলে এগোয়। সেই সময় সবার সম্মিলিত প্রার্থনায় স্বর্গ থেকে একজন অ্যাঞ্জেলকে পাঠান হয় স্টুয়ার্টকে বাঁচানোর জন্য। সেই অ্যাঞ্জেল স্টুয়ার্টকে বোঝায় যে সে গোটা জীবনে অনেকজনের ভাল করেছে, সুতরাং তার যদি কোন অস্তিত্ব না থাকে তাহলে এই সব জীবনগুলো অন্যরকম হয়ে যাবে। স্টুয়ার্ট বুঝতে পারে যে বেঁচে থাকার আসল অর্থ পরিবারের সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেওয়া। সে খুশিমনে আবার তার বউ-ছেলে-মেয়ের কাছে ফিরে যায়।
এই ছবি রিলিজ করেছিল ক্রিসমাস সিনেমা হিসেবে। প্রথমে এই ছবি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। প্রচুর লোকসান হয়। সেই সময় প্রচার এখনকার মত হত না। ফলে কাপরা অন্য সিনেমায় হাত দেন। এই ছবিও অন্ধকারেই পড়ে থাকে। বহু পরে, এই সিনেমা যখন পাবলিক ডোমেনে আসে, তখন ক্রিসমাসের ছবি হিসেবে এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। দেখুন, এখানে মাথায় রাখতে হবে যে ফ্রাঙ্ক কাপরা হলিউডের খুব বিখ্যাত পরিচালক। ওনার ছবি ৩০-৪০এর দশকে দুবার সেরা ছবির অস্কার পেয়েছে, উনি নিজে তিনবার সেরা পরিচালকের অস্কার পেয়েছেন। ফলে ‘ইটস্ এ ওয়ান্ডারফুল লাইফ’ বক্স অফিসে হিট হল কী হল না, অস্কার পেল কী পেল না, তাতে ওনার কিছু যায় আসে না। কিন্তু স্টুয়ার্ট ও ডোনার মনকাড়া অভিনয় সত্বেও দর্শক ও সমালোচক যেভাবে এই সিনেমা থেকে প্রথম দিকে মুখ ফিরিয়েছিল, সেটা বেশ অবাক ব্যাপার। এটা ঠিক, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ফ্রাঙ্ক কাপরার কোন ছবি আর বক্স অফিসে হিট হয় নি। এবং সমালোচকরাও এই ছবি নিয়ে সেই সময় বিশেষ কোন মন্তব্য করেন নি। অনেক পরে, ১৯৯৮ সালে, আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট এই ছবিকে শেষ ১০০ বছরের সেরা ১০০ ছবির তালিকায় স্থান দেয়। এবং ২০০৭ সালে এই সিনেমাকে আমেরিকার সর্বকালের সেরা অনুপ্রেরণাদায়ক ছবি হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়।
‘হ্যারল্ড অ্যান্ড মড’ আবার একদম অন্যধারার ছবি। একে ডার্ক কমেডি বলাই ঠিক হবে। এক ২০ বছরের ছেলে হ্যারল্ড, যার ভূমিকায় বাড কর্ট, আর এক ৮০ বছরের বৃদ্ধা মড, যার অভিনয়ে রুথ গর্ডন, এদের নিয়ে এই সিনেমা। হ্যারল্ড বন্ধুবিহীন এক যুবক যার সারাক্ষণের ইচ্ছে সুইসাইড করা, আর তার জন্য সে কখনো গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়ে, কখনো স্প্রিং লাগানো ছুরি দিয়ে নিজেকে হত্যা করার সিন তৈরি করে। হ্যারল্ডের মা তার জন্য চিন্তিত হয়ে মাঝে মাঝে যুবতী মেয়েদের এনে হ্যারল্ডের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতানোর চেষ্টা করে, কিন্তু হ্যারল্ডের তাতে কোন উৎসাহ নেই। এইসময় এক শবযাত্রায় হ্যারল্ডের আলাপ হয় চটপটে আর পাগলাটে এক বৃদ্ধার সাথে। মড। মড হ্যারল্ডকে বিভিন্ন রকম পাগলামোর মধ্যে দিয়ে আস্তে আস্তে শেখায় জীবনের প্রতি ভালবাসা। এবং এক সময় সে হয়ে ওঠে হ্যারল্ডের ‘গার্লফ্রেন্ড’। মডের হাতে আঁকা ট্যাটু থেকে হ্যারল্ড জানতে পারে সে ছিল নাৎজি ক্যাম্পের থেকে বেঁচে ফেরা একজন। হ্যারল্ড জীবনের প্রতি আবার উৎসাহ পায়। সেই সময় হঠাৎ মড ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করে। শেষ সিনে দেখা যায় হ্যারল্ড সমুদ্র উপকূলে নিজের গাড়ি ফেলে দিয়ে ব্যাঞ্জো বাজাতে বাজাতে ফিরে আসে। ব্যাকগ্রাউন্ডে গান ‘ইফ ইউ ওয়ান্ট টু সিং আউট, সিং আউট...’। বিষয়বস্তু দারুণ। এই সিনেমার শুটিং হয়েছিল সান ফ্রানসিস্কোর উপকূল এলাকায়, ফলে সিনারিও দারুণ। এবং এই সিনেমা নিজের সময়ের থেকে অনেক এগিয়ে ছিল এক ২০ বছরের ছেলে আর ৮০ বছরের বৃদ্ধার পাগলামোয় ভরা রোমান্টিক জুটি তৈরি করে। হয়ত সেজন্য অস্কার কমিটির বাঁধা চিন্তাধারায় এই সিনেমার নাম আসেনি। অবশ্য পরবর্ত্তীকালে আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট এই ছবিকে সর্বকালের সেরা ১০০ কমেডি ছবির তালিকায় ৪৫ নম্বর স্থান দেয়।
১৯৮২ সালে পুলিৎজার প্রাইজ পাওয়া অ্যালিস ওয়াকারের উপন্যাস অবলম্বনে স্পিলবার্গের সিনেমা ‘দ্য কালার পার্পল’। সেই সময়ের তুলনায় এগিয়ে থাকা ছবি। হ্যারল্ড অ্যান্ড মড-এর মত। বিশ শতকের শুরুতে একজন কালো মহিলাকে আমেরিকায় বছরের পর বছর কীভাবে সামাজিক ও যৌন নিপীড়ন করা হয়েছে সেই নিয়ে এই সিনেমা। এবং সবশেষে সেই মহিলা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কীভাবে নিজের কন্ঠস্বর ফিরে পাচ্ছে। এর মাঝে অনেক নাটকীয়তা আছে, অনেক টানটান মুহূর্ত আছে। শেষে মন ভাল করা মুহূর্ত আছে। দেখলে বুঝতে পারবেন। এই সিনেমা কিন্তু প্রকৃত অর্থেই আমেরিকার ইতিহাসের এক প্রামাণ্য দলিল। এবং সেই সময় এই বিতর্কিত বিষয় নিয়ে কেউ আমেরিকায় মুখ খুলতে চাইত না। হয়ত সেজন্যই ১১টা বিভাগে নমিনেটেড হয়েও এই সিনেমার ভাগ্যে একটাও অস্কার জোটে নি। তবে এটা ঠিক, এটাই ছিল স্পিলবার্গের প্রথম সিরিয়াস ছবি। তার আগে উনি শুধু গ্রীষ্মকালীন বক্স অফিস হিট সিনেমা তৈরি করতেন। এই ছবিতে এমন কিছু কথাবার্তা আছে, এমন কিছু দৃশ্য আছে, যা অনেকদিন মনে থাকে। দেখুন, পরবর্ত্তী কালে ‘টুয়েলভ ইয়ারস এ স্লেভ’ কালো মানুষদের দুর্দশা দেখিয়ে সেরা ছবি হিসেবে আকাদেমী পেল, অথচ তার বহু বছর আগেই এই এপিক সিনেমা পেল না। কেন? কোন্ দিক থেকে ‘আউট অফ আফ্রিকা’ এই ছবিকে টপকে গেছিল? এগুলোর উত্তর আজও কেউ জানে না।
‘দ্য শ্যশঙ্ক রিডেম্পশন’এ মুখ্য চরিত্র দু’জন – টিম রবিন্স আর মর্গান ফ্রিম্যান। পুরো ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে ফ্রিম্যানের গলায় ধারাবিবরণী। টিম রবিন্স এই ছবির একজন হতভাগ্য ব্যাঙ্কার। শ্যশঙ্ক জেলে আসা থেকে শুরু করে তার খুন না করেও খুনের আসামি হয়ে যাওয়া আর আজীবন সাজাপ্রাপ্ত হয়ে আস্তে আস্তে শ্যশঙ্ক জেলের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া, পুরোটাই ফ্রিম্যানের ভাষ্যে। ফ্রিম্যান সেই জেলে ‘রেড’ নামক এক কয়েদি যে বাইরে থেকে বিভিন্ন ছোটখাট জিনিস স্মাগল করে জেলের ভেতর আনতে পারে। সিনেমা যত এগোয়, আমরা দেখতে পাই রবিন্স আর ফ্রিম্যান দুজনেই মূলত ভাল স্বভাবের দুজন মানুষ যারা বন্ধুদের সাহায্য করে। রবিন্স বইপত্র নিয়ে থাকতে ভালবাসে, জেলের লাইব্রেরী সে পুরোদস্তুর সাজিয়ে তোলে। এর মাঝে জেলর আর তার কয়েকজন সহযোগীর অসাধুচক্রে রবিন্স ফেঁসে যায়। বেরিয়ে আসতে চাইলেও পারে না। এমনকি অন্য এক কয়েদি রবিন্সের নিরপরাধ হবার প্রমাণ দিলেও জেলর তা মানতে চায় না, উল্টে সেই কয়েদিকেই মেরে ফেলে। রবিন্স সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। এবং ২০ বছর পর সুযোগ পেতেই জেল থেকে পালিয়ে মেক্সিকো চলে যায়। যাবার আগে ফ্রিম্যানকে বলে যায়, সে ছাড়া পেলে যেন মেক্সিকো এসে রবিন্সের সঙ্গে ব্যবসায় হাত লাগায়। অনেকদিন পর ফ্রিম্যান প্যারোলে ছাড়া পায়। আর সোজা মেক্সিকো গিয়ে পুরনো বন্ধু রবিন্সের কাছে ওঠে।
এই সিনেমাও বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। কারণ সহজেই বোঝা যায়। জেলের ওপর এই ছবি তৈরি, নায়িকা নেই। অতএব ফিল্ম হিট হতে পারে না। তাছাড়া, সেই সময় লোকেরা এই সিনেমার নামের মানে ঠিক বুঝতে পারে নি। ‘শ্যশঙ্ক জেল থেকে মুক্তির স্বপ্ন’ – এইরকম গোদা নাম রাখলে হয়ত কারো বুঝতে অসুবিধে হত না। আমার আক্ষেপ দুটো কারণে। এক, এই ছবির সিনেমাটোগ্রাফি তারিফ করার মত। বিশেষ করে ক্লোজ শটগুলো। দুই, অনবদ্য সংলাপ। মর্গান ফ্রিম্যানের শেষ প্যারোল ইন্টারভিউতে রিহ্যাবিলিটেশন নিয়ে সংলাপ আমাদের সভ্য মানুষ হিসেবে চুপ করিয়ে দেয়। এবং সবার ওপরে এই সিনেমার থিম - মানুষ প্রতিকূল পরিবেশে ফেঁসে গেলেও আশা নিয়ে বেঁচে থাকে। সে একদিন কোন এক জিহুয়াটানেহো বা শান্তির জায়গায় পৌঁছবে, এটাই প্রত্যেকের স্বপ্ন থাকে। এত বড় এক স্বপ্ন দেখানোর পরেও এই সিনেমার অস্কারের ঝুলি রইল শূন্য। যদিও আকাদেমী না পেলেও শেষ হাসি কিন্তু হাসল এই ছবিই। ২০০৮ সাল থেকে আজ অব্ধি এই ছবি IMDB-র টপ রেটেড মুভিজ-এর ১ নম্বরে। কেউ নড়াতে পারে নি। এরপরেও কি অস্কার নিয়ে আর কিছু বলা উচিৎ?
এই প্রসঙ্গে আরেকটা সিনেমার কথা দু’এক লাইন বলে বিদায় নেব। স্টিভেন স্পিলবার্গের ‘শিন্ডলার্স লিস্ট’ (১৯৯৩)। এই ছবি নিয়ে আমার এক নস্টালজিয়া আছে। আমার কলেজ জীবনে সিনেমা হলে গিয়ে দেখা প্রথম ইংরাজি ছবির নাম ‘শিন্ডলার্স লিস্ট’। ১৯৯৪-এর জানুয়ারি মাসে ব্যারাকপুরের ‘দেবশ্রী’ নামক এক হলে এই সিনেমা এসেছিল (এখন আর সেই হল নেই)। তখন ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। সেই সময়, এর গভীরতা না বুঝলেও একজন টিনেজার হিসেবে ছবিটা বেশ ভাল লেগেছিল। অনেক বছর পরে, গুয়াহাটিতে নিজের কোয়ার্টারে একা এই সিনেমা দেখে কোন খুঁত ধরতে পারিনি বলে তারিফ করেছিলাম। বলতেই হয়, যোগ্য সিনেমা হিসেবেই এ ছবি সাতখানা অস্কার পেয়েছে, এগারোটায় নমিনেটেড হয়ে। আমি খুশি যে এই ছায়াছবি সেরা সিনেমাটোগ্রাফি বিভাগেও অস্কার পেয়েছে কারণ সাদা-কালো এই সিনেমার ক্যামেরার কাজ চুপ করে দেখার মত। এক জার্মান ব্যবসায়ী অস্কার শিন্ডলার পোল্যান্ডে কীভাবে প্রায় ১১০০ জন ইহুদিকে নাৎসি ক্যাম্প থেকে বাঁচায়, সেই নিয়ে তৈরি এই ছবির মুখ্য চরিত্রে লিয়াম নিসন, বেন কিংস্লে আর র্যালফ্ ফিনেস। এই ছবির কাহিনি ভেঙে বলব না, চাইব পাঠক-পাঠিকা নিজে দেখুন। সিনেমার শেষদিকে শিন্ডলারকে যখন তার কর্মচারীরা সবাই মিলে একটা সোনার আংটি দেবে যেখানে হিব্রুতে ছোট করে লেখা - ‘হুএভার সেভস্ ওয়ান লাইফ, সেভস্ দ্য ওয়ার্ল্ড এন্টায়ার’, তখন দেখবেন মন ভাল হয়ে যাবে। এই সিনেমা দেখে আমার শঙ্খ ঘোষের ‘ধূম লেগেছে হৃদকমলে’র প্রথম কবিতা মনে পড়ে গেছিল – ‘দেখে এসেছি ক্যানসার হাসপাতালে সকলেই আজ বেশ হাসিখুশি’।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন