সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২০

শুক্লা গাঙ্গুলি

 

কবিতার কালিমাটি ১০৬


পূর্বসূরী

 

একটা দ্বিপাক্ষিক আলোচনার সময় রাখি

টেবিলের এপাশে আমি ওপাশেও আমি

বন্ধুরা ওয়ান্স ইন এ ব্লু মুন-এর ছবি পাঠায় আজ-

 

দিশেহারা চাঁদ একাকী স্হির খন্ড খন্ড

মেঘেরা ছুটেছে প্রাণপণ

কিসের তাড়া - কে জানে

 

দাদু কোর্ট থেকে ফিরে টিকায় আগুন

দিয়ে খড়ম খোঁজেন ঠাকুমা বাসক গাছের

নীচে গুটিকয় সাপ দেখে আঁতকে বলেন-

এরা আমাদের পূর্বজ

 

কুমার নদের ধার ঘেঁষে যে শ্মশানভূমি

কত কত বছর হল তারা মিশেছেন-

মাটিতে সেখানে

 

বছরে একবার সগোত্র তাঁদের স্মরণ করি

বিমানে উড়ে আসা গঙ্গাজলে মন ধুয়ে

পরিত্যক্ত সিন্দুকে দেখি-

 

খড়ম-দাদু কাঠের সিঁড়িতে আর ঠাকুমা

বাসকের রস মিশিয়ে চামচে তুলছেন কিছু

গাছ সহ চার পোঁতার ঢেউ - টিনের ঘর

 

আমি বহু যত্নে সাপেদের মণিগুলো অরণ্যে

রেখে আসি - শ্মশানের সেই পুরনো পাকুর লাগা বৃদ্ধ বট সেগুলো কুড়িয়ে আলো জ্বালেন অন্ধকারে-

 

আগুন নেভার প’র!

 

দ্রৌপদী

 

পারিষদ যত মন্ত্রপূত জল আচমনে

তাপে তাপিত পিপাসার্ত সোমরসে

মহামান্য রাজা কিছুটা আনমনে

হোমাগ্নি জাজ্বল্যমান কর্পূর ঘি অন্তরীক্ষে

 

সহসা হোমশিখায় প্রতীয়মান এক অযোনিসম্ভুতা সুন্দরী পূর্ণা নারী-

যৌবনা মদালসা তপ্ত বর্ণা বিদূষী

বাকপটু প্রথিতপ্রাণা -

 

নামকরণে পিতা দ্রুপদ তাই দ্রৌপদী

মঙ্গল কলসে পঞ্চ পল্লব - পুত্তলিকা

পঞ্চ প্রদীপ হেন পঞ্চ স্বামিনী

 

অগ্নিকন্যা অগ্নি দহন অগ্নি লেহন

অগ্নি সারাৎসার-

 

আহুতিতে পদ্মাসনে নিমগ্ন সব্যসাচী -

বাকী ধর্ম ভাগে পঞ্চধারা-

মাতৃ আদেশে

 

পুরুষকারে অপমানিতা শঙ্খিনি মানিনী

প্রেরণার দ্যুতি মহাযুদ্ধের - অধিকার থেকে আধিকারিক মহাকাব্যের সুর নায়িকা। কৃষ্ণসখী কৃষ্ণা -

ভাগে ভাগ হওয়া এক চিত্রল হরিণী

 

হরিণা তেরি নীলয় ন জানি...

 

মাদুলি

 

দু’হাত বাড়িয়ে অধোমুখীকে ধরি হাতের কোমল পেলবে। 

মুখখানি বড্ড ম্লান যেন। চোখের কোলে চিকচিক জল। কিছুটা শুকিয়ে গালে  শুকনো, ঠোঁটের কষ বেয়ে দু:খ নামে-

 

সোজা করি মুখ চোখের ভেতর চোখ নিয়ে

দেখি এক টুকরো মরা নদী বাঁক নিয়ে-

বয়ে যায় ঢালুতে

 

হেমন্তের বিকেল দু:খগুলি জমিয়ে কবুতরের ঘরে খিল তুলি। হাঁসেদের

খোঁয়ারে তখনও তই তই টইটম্বুর

সুর্য কি ডোবে লিচু গাছের ফাঁকে?

 

ডুরে শাড়ির আঁচলে বাঁধা তাবিজটি

জানান দেয় অপারগতার ক্ষমা। মোম

খুঁটে আবারও সব দু:খ ভরি। বাঁধি তার

বাজুতে - কালো কারে

 

আশ্বাস দিই - দা হাতুড়ি কুড়ুল সব ভরেছি মাদুলিতে। ভয় পাসনি

সুখ এবার আসবেই-

রাত পোহালে পাতা সংসারে

ভাঙ্গা স্বপ্নে রক্ষা কবচে

 

হেসে খেলে।

 

 


1 টি মন্তব্য: