বুধবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২০

শাহনাজ নাসরীন

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৯


সুইসাইড নোট

 

অনেকদিন কথা বলো না তুমি। প্রচন্ড ক্রোধের শিলা চুঁইয়ে এক বিন্দু লোনা জল গলাতে পারেনি তোমাকে! তোমার ভেতরের আলোড়ন কখনোই বুঝতে দিতে চাও না, তবু তো জানি আমি, আকণ্ঠ বিষপান করে নীলকণ্ঠ হয়ে নিঃশব্দে কান্না লুকাও।  

তাহলে কি অন্তর্গত বিষাদ তোমায় পুড়িয়ে দিলো? খুব প্রতিশোধপ্রবণ করে ফেললো? আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছ বুঝি!  ঝাঁকে ঝাঁকে প্রশ্ন যখন তীরের মতো বিঁধবে আমায়, আমি কী পারবো এই বিপর্যস্ত শরীর মনকে সামলে নিতে!

একদিন তোমাকে বলেছিলাম, আমি মরে যা্‌ তোমাকে জানতেও দেবো না। আই  মিন ইট নিঝুম। এই যে আমাকে মেঘের মতো ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমি জানি  এই যাত্রাই শেষ যাত্রা।  আত্মহত্যার প্ররোচনা বলে একটা কথা আছে, তুমি কি তা বিশ্বাস করো? নিশ্চয়ই করো না। আমিও করতাম না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, আমি তো কখনোই আত্মহত্যা করতে চাইনি, তাহলে এখন কেন সুইসাইড নোট লিখতে হচ্ছে?

কখনো কখনো আত্মহত্যা স্বাভাবিক মৃত্যুর মতো দেখায়, জানো কি? নাহ, কোথাও কোন সুইসাইড নোট থাকবে না। পুলিশ আত্মহত্যার প্ররোচনার ফাইল খুলে দু’পয়সা কামানোর জন্য আসামী খুঁজে পাবে না। আমার শরীর জুড়ে অযত্নের ছাপ। আমার উচাটন মন, আমার আর্তি, নির্ঘুম রাত স্মৃতিচিহ্ন রেখে গেছে চোখের কোলে। এগুলো কি আর মৃতদেহ খুঁজে বের করা যায়?

স্বাভাবিকভাবে হুটহাট মরে গেলে তা খবর হয় না কখনো। তাই ফেসবুকেও এ  নিয়ে ঝড় উঠবে না। আত্মহত্যার উচিৎ-অনুচিৎ ঠিক-বেঠিক বিতর্কে আবার দু’ভাগ হবে না জনতা। যারা ফেসবুকে বেমক্কা কিছু বলে ঝড় তোলে, তারাও মনোযোগ  আকর্ষণের সুযোগ পাবে না। এভাবেই নটেগাছ মুড়িয়ে যাবে দ্রুত।

রাজা দুষ্মন্তের মতো তোমারও একদিন বিস্মরণের কাল ফুরাবে নিশ্চিত। তখন তুমি আমার খোঁজে পথে নামবে। জানি নামবেই। দু'দন্ড বসে দু'জনের কাছে দু'জনের যত কথা জমা ছিল, তা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে লাগাম ছেড়ে উজাড় করে  দিতে  তুমি ছুটে আসবে একবুক আকাঙ্ক্ষার আগুন নিয়ে। নিঝুম আমার নিঝুম সুনসান নীরব সে ঘরে তুমি আর রাগে অন্ধ হবার সুযোগ পাবে না।

একটা শীতল স্রোত কি কাঁপিয়ে দিচ্ছে তোমায় সোনা? ভয় পেয়ো না। জেনো, তখনো আমি প্রাণপণে তোমার জন্য উষ্ণতা ভিক্ষে করছি।


 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন