কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৯ |
ফেসবুকের বন্ধু
ফেসবুকের বেশির ভাগ বন্ধুই রিন্টির অচেনা। একসময় র্যানডম বন্ধুত্ব করত। মানে নানা পেশার নানা কলাকার নানা বয়সের মহিলাদের ও পুরুষ নির্বিশেষে বন্ধুত্ব চলত। এই সেদিন ওমলেট বিশ্বজিৎ নামের এক ভদ্রলোকের সঙ্গে পরিচয় হল। ভদ্রলোক ফ্রেন্ড রিকু পাঠিয়েছিল। বর্ধমানে থাকে। কলকাতার এক নামি হোটেলে শেফ-এর কাজ করে। অবশ্যই সাদিসুদা। বালবাচ্চাসহ সংসার আছে। রিন্টিই বা কোন ছোটোখুকি! বেশ কয়েকটি বিয়ে পেরিয়ে এখন সিঙ্গল মল্ট। চিন মালয়েশিয়া বালি একা একাই ঘুরে এসেছে।
আসলে যে বন্ধুর থ্রু দিয়ে বিশ্বজিৎ-এর সঙ্গে আলাপ হল সে রিন্টির কলেজবেলার বন্ধু পাপড়ি। পাপড়ি ফিলোসাফি নিয়ে পড়ত। আর লম্বা লম্বা ঢ্যাঙা ফর্সা হাত নেড়ে কথা বলত। প্রায় দশ বছর ধরে প্রচুর ঝগড়াঝাঁটি করে প্রেম করার পর বিয়ে হল প্রেমিকের সঙ্গে। মানে হিরণ্ময়ের সঙ্গে।
যাইহোক এসব ঘটনা তো প্রিফেসবুক জমানার। পাপড়ির সঙ্গে যোগাযোগটা থেকে গিয়েছিল রিন্টির প্রাকবিবাহ পাড়াতুত বন্ধু হিসেবে। তবে পাপড়ির সঙ্গে ফেসবুকে আর কথা হয় না সে অনেক বছর হল। পাপড়ির বিয়েতে ভীষণভাবে অ্যাটাচড ছিল রিন্টি। খাওয়া দাওয়া শ্বশুরবাড়ির লোকদেরকে সেবাযত্ন করা বাসর জাগা সব করেছিল। সেভাবে মনে পড়ত না বিশ্বজিৎকে যদি না বিশ্বজিৎ ওকে আবিষ্কার করত। প্রোফাইল অনেক খুঁটিয়ে দেখে রিন্টি বুঝতে পারল এই সেই বিশ্বজিৎ যে ভোরবেলার শিশির রিন্টির মুখে মাখিয়ে দিয়েছিল কাটাপুকুরের ধারে বেড়াতে গিয়ে পাপড়ির বিয়ের পর দিন। আর সারাক্ষণ দুজনের চোখাচোখি। একটুকু ছোঁয়া লাগে। বিশ্বজিৎ-এর লাজুক মধুর হাসি এবং রিন্টিকে যে কোন কাজেই সাহায্য করা। রাতের গান বিশ্বজিৎ-এর রিমঝিম গিরে শাওন। আর অষ্টমঙ্গলায় তো বিশ্বজিৎ-এর আসার কথাই নয়। শুধু রিন্টিকে দেখবে বলে এসেছিল। আকাশে বাতাসে একটা সম্পর্ক তৈরির গন্ধ দারচিনি এলাচের সুবাস। সবাই তাতে ফোঁড়ন দিচ্ছে। পাপড়ির গুরুজনরাও। রিন্টির বোবা একটা সমর্থন ছিল শুধু। কালো, স্বাস্থ্য ভাল, খুব মিষ্টি মুখের বিশ্বজিৎ থেমে গিয়েছিল অষ্টমঙ্গলার পরই। রিন্টির আলগা মুঠি থেকে বিশ্বজিৎ হারিয়ে গেল স্বাভাবিক ভাবেই।
মেসেজ ভেসে যায় ভেসে আসে। কেন পিছিয়ে গেলেন আপনি? বিশ্বজিৎ বলতেই পারত আপনার নীরবতা দেখে। বরং সে লিখল : আমার মা রাজি হল না, আপনার বাবা পুলিশ ছিলেন, তাই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন