শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০

গোলাম কিবরিয়া পিনু

 

কবিতার কালিমাটি ১০৪


অধরসুধা

 

অধরসুধায় লোহিতকণিকা নাচে

মানবমানবী ভালোবাসা নিয়ে বাঁচে।

 

কেউ কি সুধায়? এমন সুধায় নাচবে না কেউ?

পিছে  লেগে থাকে যদিও একটা ফেউ!

তবুও শিরদাঁড়ায় সোজা হয়ে দাঁড়ায় না কেউ?

ক্ষুধায় ক্ষুধায় অধরসুধায় তোমার মধ্যে কি নেই ঢেউ?

 

আগুনের আঁচে

পুরবাসিও নাচে।


 

সুধাসমুদ্র

 

কাড়া নাকাড়া বাজিয়ে

        পুরিয়াধানশ্রী শুনে

সদরদরোজা পার হয়ে যাই

        সরোবরে-

        কাঁপা-জ্বরে,

তবুও বাজে না তারযন্ত্র!

মন্ত্র দিয়ে চৈতলিপি লেখা হলো নাকি?

চোখও চড়কগাছ --

খেলা করে সুধাসমুদ্রে অন্য কোনও মাছ!


 

অগ্নিপাত

 

নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাস মিশে হয় অগ্নিপাত

        এমনই রাত

        --থাকে না জাতপাত,

কী রসায়নের মধ্যে পাথর গলিয়ে

         দেখি-আকস্মৎ

         খরস্রোত-ধারা,

মুহূর্তেই ধ্বসে যায় শৃঙ্খলের কারা--

তা কি বলা যায়  কলবলিয়ে?

        --আমিও মনুষ্যজাত!

 

        ঋতুধর্ম

 

ঋতুপতি ঋতুধর্ম জানে

        গানে গানে মুষলধারায়

                এমন দাঁড়ায়

        উলটকম্বল

                যদিও সম্বল,

        তা উল্টিয়ে, দু’হাতে হঠাৎ

ভেঁপু বাজানোর অগ্নিপক্ক

        করে ফেলে মাৎ,

                কী অরণ্যজাত!

        কাকে বলে সখ্য?

তা জানার আগে--কোন্ রাগে?

হয়ে পড়ি ছন্দ-অনুগামী

        ছন্নছাড়া আমি!

 

 

অর্থালংকার

 

এ কোন্ অর্থালংকার? শঙ্কার ভেতরও-

অর্থ খুঁজে পেলে সুরসুধা কূলপ্লাবী হয়ে ওঠে,

যুগলসংগীত টেনে নিয়ে যায়--

        ঘূর্ণায়মান মঞ্চে!

 

মিশ্রকলাবৃত্ত জানে শুধু রসগ্রাহী? ত্রাহী মধুসূদনও--

ক্ষুধা-সুধা একাকার করে ফেলে,

মেলে ধরে পুরো ডানা, কানা লোকও--

লিপিকুশলতা না জেনেও, বর্ণ না চিনেও

            ভাঁজে ভাঁজে সুর ভাঁজে।

 

যতই ভাষান্তর হোক না এই গান

মূলাশ্রয়ী হয়ে ঠিকই অর্থ-দ্যোতরা সৃষ্টি করে,

       ভেতরে ভেতরে

          সপ্তসুরের ঐকতান।


 

জ্বর

 

তারপর জ্বর এলো তোমাকেই ভর করে

জ্বরে কাঁপাকাঁপি!

        কিছুক্ষণ আগে ছিল পুষ্পবনে ঝাঁপাঝাঁপি!

এখন জ্বরের কত ডিগ্রি?

ওষধে সারে না! খোলা থাকে না কোনও দোকানও--

এ প্রহরে ওষধ হয় কি বিক্রি?

মেরুবৃত্ত ভেঙে--

এঁটেল মাটির কন্ঠলগ্ন হয়ে কোন্ লগ্ন এলে

আগ্নেয়গিরির মধ্যে হয় বীজবপন!

কতক্ষণ থাকে ভূকম্পন?

 

 

বনফুলের সৌরভ

 

উদ্যানের চেয়ে জঙ্গলের তরুতে ফুটেছে

                বিস্ফোরিত ফুল,

সমৃহবিপদ-বিপন্নতা  মনে রেখে

আমি সেই ফুলের সুগন্ধি নিতে হই কী ব্যাকুল!

 

বিস্ময় ও অস্থিরতা থাকে

                তবু ছন্দায়িত হয়ে যাই

                   পর্ব ভেঙে ভেঙে

                    সুর-সঙ্গীতের মধ্যে যাই,

ইতস্তত ভ্রমণের বদলে হয়েছি আজ থিতু

কোন সংকেতের উদ্দীপনায় জেগে উঠে ঋতু!

অতিরিক্ত ধ্বনি নেই, নেই বাদ্যযন্ত্র--

জলকপাট খোলার পেয়ে যাই মন্ত্র!

 

বানানপদ্ধতি জেনে লিখে যাই তৃষ্ণার-গৌরব

মধুপুরের জঙ্গলে শুধু বনফুলের সৌর

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন