কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৮ |
এয়ারপোর্টের বেড়াল
ছোট এয়ারপোর্ট। সারাদিনে আটটা কি দশটা উড়োজাহাজ নামা-ওঠা করে। এই সাড়ে আটটায় দিল্লী যাবার জাহাজ আসবে, তাই কিছু লোকজন দেখা যাচ্ছে। কিরণ শর্মা ঢুকল সাড়ে সাতটায়। কাল সকালেই ফিরবে, তাই একটা হাতব্যাগ ছাড়া আর কিছু নেই সঙ্গে। এত সকালে চা ছাড়া কিছু খেয়ে বেরোতে পারেনি, খাবারের দোকানে স্যান্ডুইচ আর কফি নিয়ে বসল।
কিরণের একটা
ছোট কারখানা আছে, রেলেওয়ের কিছু যন্ত্রপাতি তৈরি হয়। কোনোরকমে গড়িয়ে গড়িয়ে চলে। কিন্তু
এখন একটা মুশকিল হয়েছে। দিল্লীর যে দপ্তর থেকে
বরাত দেয়া হয়, তার বড়বাবু পাল্টে গেছে। আগের
জনের সঙ্গে ‘সেটিং’ ছিল, এ নতুন বাবু কেমন
লোক কে জানে! আজ দেখা করার কথা।
খাবারের দোকানের
কাচের জানালা দিয়ে একটা পাঁচিল দেখা যাচ্ছে। কিরণ দেখল সেখানে একটা সাদা বেড়াল বসে আছে চোখ বুঁজে। হয় ঝিমোচ্ছে
নয় কীকরে দু-একটা খাবারের টুকরো পাওয়া যায়, তাই ভাবছে।
আসলে পরেরটাই
সত্যি। এই মার্জার-শাবকটি এখানে বেশ কিছুদিন খাবার পেয়ে এসেছে, কারণ দোকানদারটা ভালো
ছিলো। মাঝেমাঝে মাছের চপের টুকরো দিত। তাছাড়া
লোকেরা বিশেষ করে বাচ্চাগুলো পুরোটা খেতে না পেরে একটু এগরোল, একটু পাউরুটি, এমনকি গলে যাওয়া আইসক্রীমও ফেলে রাখে।
ভিড় কমে এলে সে চলে আসত, লোকটা কিছু বলত না।
চেটেপুটে খেয়ে যেত।
কাল থেকে নতুন
দোকানদার এসেছে। ঠিক বোঝা যাচ্ছে না লোকটা কেমন হবে! তার ছোট মাথায় যতটুকু বুদ্ধি আছে
সবটা কাজে লাগিয়ে চোখ বুঁজে সে ভাবছে কী করা যায়। যদি আগেরটার মতো না হয় তাহলে চুরি
করতে হবে।
উড়োজাহাজ এসে
গেল, লাইন দিয়ে সকলে উঠল। ঘন্টা দুয়েকের যাত্রা। সেই ভোরে উঠতে হয়েছে, উড়োজাহাজে বসে
থাকতে থাকতে কিরণের চোখ লেগে গেল। পাঁচিলের ওপর বেড়ালটাও ভিড় কমার অপেক্ষায় বসে থাকতে
থাকতে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিল।
হালকা ঘুমের
মধ্যে কিরণ একটা স্বপ্ন দেখল। সাদা বেড়ালটা বসে আছে চোখ বুঁজে। ব্যাটা জেগে আছে কি? কে জানে! এদিকে আরেকটা কেউ যেন
তাদের দুজনকে কিছু বলতে এসেছে…
বেড়ালরাও স্বপ্ন
দেখে। সাদা বেড়াল দেখল একটা মানুষ, টেবিলে বসে মশলা-ভরা পাউরুটি চিবোচ্ছে… পায়ের কাছে
একটা কালো ব্যাগ রাখা… এ তো সেই সকালের লোকটা…
*****
ঈশ্বর বলে কেউ
আছেন কি? থাকলে তাঁর কাছে অবশ্য প্যান্ট-পরা-ব্যাগ-হাতে-নেওয়া মানুষও যা বেড়ালও তাই।
প্রথম প্রাণীটিকে সৃষ্টি করে তাকে একটাই মন্ত্র দিয়েছিলেন… বেঁচে থাকার জন্য সব সময়
যুদ্ধ করবি, করতে হবে। সেই থেকে পোকা-মাকড়, হাতি-ঘোড়া, গাছপাল্ ইঁদু,-প্রজাপতি, ব্যাক্টেরিয়া-ভাইরাস
সবাই তাই মেনে চলে। ওই লোকটা, কী যেন নাম… চার্লস ডারউইন… সে কিন্তু এই গূঢ় মন্ত্রের
ব্যাপারটা ধরে ফেলেছিল।
দুটো প্রাণীকে
স্বপ্নে একসঙ্গে এনে একটু সাহস দিলেন আর কী… তোদের দুটোরই অবস্থা তো একই রকম। তা এরকম সময় এক-আধটু বাঁকা রাস্তায়
যদি যেতে হয়, যেতে পারিস। আমার সায় আছে। বেঁচে
থাকাটাই যে আসল কথা রে…
জীবনে অনেকবার এইরকম ভাবনা আসে। নতুন জায়গায় প্রতিবেশী। বিয়েতে স্বামী বা স্ত্রী। নতুন কলেজ। অথবা শেষ জীবনে নতুন পরিবেশে থাকা।
উত্তরমুছুন