শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০

শুভ্রনীল চক্রবর্তী

 


আসগার্ডিয়া – মহাকাশে ভাসমান এক দেশ




দেশ, আবার তা ভাসমান? এও কি সম্ভব নাকি? হ্যাঁ, সম্ভব এবং আমার  আজকের এই লেখা এমনই এক পৃথিবীর বাইরের মহাকাশের দেশ নিয়ে। না, তবে সিনেমায় দেখানো কোনো ইউ. এফ. ও-র গল্প নয়, সে দেশের বাসিন্দারা আমার আপনার মতই মানুষ এবং মজার বিষয়টা হলো, চাইলে আপনিও হতে পারেন আসগার্ডিয়া তথা স্পেস কিংডমের নাগরিক। বলাই বাহুল্য, ইতিমধ্যেই মহকাশপ্রেমী মানুষজন একটু নড়ে চড়ে বসেছেন। আসুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক সে দেশের রীতি নীতি ও ব্যবস্থা সম্পর্কে.

শুরুতেই যে কথা না বললেই নয়, তা হল্‌ এই স্পেস কিংডমের গোড়াপত্তনের ইতিহাস। আসলে আসগার্দিয়া নামকরণের পিছনে এক নর্সে মাইথলোজির কাহিনী জড়িয়ে আছে, যেখানে বলা হয়েছে পৃথিবীর বাইরের শত্রুদের থেকে  পৃথিবীকে বাঁচানোই এদের মূল লক্ষ্য। নর্স পুরাণ থেকে সংগৃহীত এই দেশের নামের বাংলা হলো ‘ভগবানের বাগান’। 

আসলে আসগারদিয়া হলো কিছু মানুষজনের দ্বারা সৃষ্ট একটি মাইক্রো নেশন, যাঁরা লো আর্থ অর্বিটে তাঁদের উপগ্রহ ‘আস গার্ডিয়া ১’ পাঠান এবং সেই উপগ্রহ অধিকৃত এলাকাকে নিজেদের রাষ্ট্র হিসেবে দাবী করেন।

২০১৬ সালের ১২ই অক্টোবর আইগর আশুরাবেলি, যিনি এই স্পেস স্টেশনের প্রতিষ্ঠাত্‌ তিনি প্যারিসের এক প্রেস কনফারেন্সে একে প্রথম দেশের তকমা  লাগান এবং স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন। আশুরাবেলি  হলেন এ আই আর সি- আস গর্ডিয়া স্পেস রিসার্চ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা এবং এর প্রধান কার্যনির্বাহী দপ্তর অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায়। আইগরের এই প্রজেক্টের মূল উদ্দেশ্য ছিল আউটার  স্পেসে ফ্রী একসেস পাওয়া অর্থাৎ বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো, যেখানে বিশ্বের অন্য কোনো দেশ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না এবং তার জন্য  তিনি আউটর স্পেস ট্রিটি বলে একটি আইন প্রণয়ন করেন, যেখানে আস গার্দিয়া সরকার সমস্ত রকমের মহাকাশ কার্যকলাপ বিচার করবে।

এবার আসুন দেখে নেওয়া যাক তাদের সংবিধান ব্যবস্থা ও কার্য উপদেষ্টা মন্ডলীর প্রক্রিয়া-

মূলত আসগারডিয়া ত্রিস্ত্ররীয় সংবিধান ব্যাবস্থার উপর দাঁড়িয়ে আছে – (১) একটি লেসিলেটিভ ব্রাঞ্চ অথবা পার্লামেন্ট (২) একটি এক্সিকিউটিভ ব্রাঞ্চ অথবা গভর্নমেন্ট এবং (৩) একটি জুডিসিয়াল ব্রাঞ্চ অথবা কোর্ট।

(১) পার্লামেন্ট মূলত তৈরি হয় দেড়শোজন এম পি নিয়ে এবং প্রতি এম পি নির্বাচনের দ্বারা একজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন। পার্লামেন্টের এই মুহূর্তে ১২টি কার্যনির্বাহী সমিতি আছে এবং বর্তমানে আসগারডিয়া পার্লামেন্টের চেয়ারম্যান হলেন লেম্বিট ওপেক।

(২) হেড অফ নেশন মূলত স্থির হয় এক্সিকিউটিভ ব্রাঞ্চ অথবা গভর্নমেন্ট দ্বারা।  হেড অফ নেশন পরিবর্তিত হয় প্রতি পাঁচবছর অন্তর। হেড অফ নেশনের ক্ষমতা বেশ অনেকটাই বেশি, তিনি চাইলে যখন তখন ভেটো প্রয়োগ করে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন ঘোষণা করতে পারেন। বর্তমানে হেড অফ নেশন আইগোর আশুরাবেলি নিজেই। 

(৩) সর্বশেষে আসি জুডিসিয়াল ব্রাঞ্চের কথায়। জুডিসিয়াল ব্রাঞ্চ একজন প্রধান বিচারপতি বা সুপ্রিম জাস্টিস-এর দ্বারা পরিচালিত হয়, যিনি চারটি প্যানেলের  উপর নজরদারি করেন – (১) কনস্টিটিউশনাল প্যানেল (২) সিভিল প্যানেল (৩) অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ প্যানেল এবং (৪) ক্রিমিনাল প্যানেল। প্রধান বিচারপতি মূলত নির্বাচিত হন হেড অফ নেশন দ্বারা। বর্তমানে এদেশের সুপ্রিম জাস্টিস হলেন ঝাও ইউন।

আসগারডিয়ার মূল উদ্দেশ্য বেশ কিছু কৃত্ৰিম উপগ্রহ পৃথিবীর লো অরবিটে ছেড়ে একটি স্পেস কলোনি বানানোর। তাঁরা প্রথম সেটেলাইট লঞ্চ করেন ২০১৭ সালের ১২ই নভেম্বর। ভবিষ্যতেও আউটার স্পেস ট্রিটির মাধ্যমে সিরিজ অফ স্যাটেলাইট লঞ্চের ইচ্ছা আসগরডিয়া জানিয়েছে তাদের এরিয়া বিস্তৃতি এবং গবেষণা এগিয়ে নিয়ে যেতে। আসগার্ডিয়া ইতিমধ্যেই বিভিন্ন আন্তর্বিশ্ব  দেশের সঙ্গে বৈদেশিক সম্পর্ক স্থাপনের কথা ঘোষণা করেছে এবং আশুরাবেলি নিজে ভিয়েনায় একটি সম্মেলনে আসগারডিয়াকে ইউ এনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার মত প্রকাশ করেছেন। 

তবে এই মুহূর্তে প্রধান প্রশ্ন হচ্ছে, তাঁরা স্পেসকে কতটা মানুষের বসবাসযোগ্য করে তুলতে পারবেন। বর্তমানে আসগার্ডিয়ার জনসংখ্যা প্রায় আড়াই লক্ষ এবং আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই সংখ্যা প্রায় চারগুণ হতে চলেছে, এমনই জানিয়েছে আসগারডিয়ার মিডিয়া সংস্থা।

প্রতিবেদনটি রূপকথার মত মনে হলেও তথ্য সাপেক্ষে এটা যে চরম সত্যি, তা বলাই বাহুল্য এবং সর্বোপরি আমার আপনার মত সাধারণ মানুষও চাইলে হতে  পারেন এদেশের নাগরিক। এবং তার জন্য তাঁদের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনাকে আবেদপত্র জমা দিতে হবে, ঠিক যেমনটি করেন বিদেশে যাওয়ার ভিসা পেতে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন