কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৮ |
বেলাভূমিতে পায়ের দাগ
ভীষণ ব্যস্ত সাহিত্যিক অজাতশত্রু দেবপ্রিয়।
এটা তাঁর ছদ্মনাম। কর্মক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের
বড় আধিকারিক। সেখানে অন্য নাম, অন্য পরিচয়। আর সাহিত্যের জগতে তিনি অজাতশত্রু নাম নিয়েই
প্রথম থেকে লিখছেন। ঔপন্যাসিক এবং প্রাবন্ধিক।
তিরিশটির মতো উপন্যাস লেখা হয়েছে, নামীদামি শারদ পত্রিকায় এবং পরবর্তীতে বই
আকারে। পুরস্কৃতও হয়েছেন। ফেসবুক একাউন্ট নেই, ইচ্ছে করেই করেননি। এতে মনোযোগ নষ্ট হয়। হোয়াটস্ এপ এবং ইমেইল
তো আছেই, রাখতেই হয়।
কিছুদিন আগেও পাঠক পাঠিকাদের চিঠি আসত,
এখন ইমেইল পান। সেক্রেটারি রেখেছেন, উত্তর দেওয়া এবং অন্যান্য কাজকর্ম দেখার জন্য।
তিনি খুব চরিত্রবান লোক। সামান্য কালির ছিটে যাতে না লাগে ওনার গায়ে, সে বিষয়ে খুব
সতর্ক। বছর শেষে ডিসেম্বর মাসে প্রত্যেকবার তিনি স্ত্রীকে নিয়ে বেড়াতে যান। কর্মব্যস্ততাকে
দূরে সরিয়ে বছরে অন্তত দু’সপ্তাহ কেবল তিনি আর তাঁর সহধর্মিণী বিষ্ণুপ্রিয়া। বিষ্ণুপ্রিয়ার স্বামীকে
নিয়ে অহংকারের শেষ নেই। এবার সমুদ্র, কেরালার
তিরুবনন্তপুরম। কোভলম বীচের মনোরম বেলাভূমিতে বসে সূর্যাস্ত দেখছেন দুজনে, আর ফ্রুটজুসে
নরম চুমুক। হঠাৎ অজাতশত্রু দেখলেন, তাঁদের দিকে আসছেন এক নারী। লাল শাল গায়ে, খোলা
চুল। নীল শাড়ি পরা দীর্ঘাঙ্গী এই মহিলা অপূর্ব
সুন্দরী। ঠিক তাঁর সামনে এসে দাঁড়ালেন তিনি। গভীর চোখে অজাতশত্রুর দিকে তাকিয়ে বললেন,
"বলেছিলে, জীবন ক্ষণিকের, দেখা হবে দ্রুত, কোনো সমুদ্রের ধারে গোধূলি বেলায়। কীভাবে
কথাটা মিলে গেলো, দেখলে!”
ব্যস্ আর একটি কথাও না বলে, দুজনকে স্তব্ধতায়
ভাসিয়ে সেই নারী আবার চলে গেলেন। বেলাভূমিতে তাঁর পায়ের দাগ যেন খুব গভীর হয়ে পড়তে
লাগল...
অজাতশত্রু ভাবছেন, খুব জোয়ার আসুক এখনি,
যাতে দাগগুলো মুছে যায় খুব তাড়াতাড়ি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন