সমকালীন ছোটগল্প |
ডি. এস. আর.
একেবারে আড্ডা প্রিয় বলে পরিচিতি না থাকলেও এত লম্বা লক
ডাউনের বন্দীপ্রায় দশার শেষে প্রথম আনলক শুরু হতেই অনুভব গুপ্ত গিয়েছিল তাদের
জম্পেশ আড্ডার ঠেকে। আর ওখানেই এই দারুণ আইডিয়াটা পেয়েছিল। সাবধানতার জন্য পোশাকের
নবতর আবতার মাস্ক মুখে লাগিয়ে এবং পকেটে একটা স্যানিটাইজারের শিশি নিয়ে গিয়েছিল
সে। বেরোবার আগে, একেবারে বাইরের গ্রিলের গেটের কাছে আধ বালতি জলে দু চামচ ডিটারজেন্ট ফেলে
বেরিয়েছিল। লুঙ্গি, গেঞ্জি, গামছা আর সাবানের কেসটা সাজিয়ে রেখে গিয়েছিল - যাতে যাবতীয় স্বাস্থ্যবিধি
মেনেই ঘরে ঢুকতে পারে।
আগে হলে এসব সুতপাই করত। ইদানিং সুতপা যেন সেবা জিনিসটার সাপ্লাই কমিয়ে এনেছে। আনছেও। ধীরে ধীরে এমন হয়েছে যে অনুভবও যেন, প্রায় সমানুপাতিক, ওসব আশা করাও কমিয়ে দিয়েছে। সুতপা আরথ্রাইটিসের কথা বলে। বলে, সিঁড়ি ভেঙ্গে নেমে এসে সে এসব করতে পারে না। কিন্তু ওটুকুই তো সব নয়। আগে পরে সব মিলিয়ে অনুভবের মনে হয় সুতপার দেখানো কারণটা সত্যি হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে, মানে অজুহাতও হতে পারে। সত্যি হতে পারে, কারণ আরথ্রাইটিসটা তো বেশ কিছুদিন ধরেই ধরেছে সুতপাকে। অনুভব ওকে নিয়ে গিয়ে নামী ডাক্তার দেখিয়েছে। ওষুধ প্রেসস্ক্রাইব করার পর ডাক্তার বুঝিয়েছেন, "আপনার হাঁটু দুটোর কথা একটু ভেবে দেখুন ম্যাডাম। সারাটা জীবন ধরে শরীরের ভার বয়ে বয়ে ওদেরও তো বয়সের ক্ষয় আসতে পারে। এখন যদি ওদের ঘাড়ের বোঝা ক্রমাগত বাড়িয়েই চলা যায় তাহলে তো ওরা একটু বেগড়বাই, একটু কান্নাকাটি করবেই। আপনার ওজনটা কিন্তু কমাতে হবে ম্যাডাম।"
ভাগ্যিস এই সব খতরনাক প্রজাতির কথাগুলো ডাক্তার বলেছিল। সম্প্রতি ক্রমশ ধারালো তলোয়ার হয়ে ওঠা সুতপার সুবচন অনুভবকে যেন বেশ একটু কুঁচকেই রাখে। ধড়ের ওপর সবেধন নীলমণি একটা মাত্র মাথা নিয়ে বুদ্ধিমান পুরুষেরা আর যাই করুক বৌয়ের বাসনা যাপনে ঘা লাগে এমন বাক্য পরিহার করেই চলেন। তাই বৌয়ের নয় নিজের ক্লাস নিয়েছেন আড্ডার সুপুরুষ চৌকস গুপ্তদা মানে অনুভব গুপ্ত মশাই।
এখন অনুভবের যখন মনে পড়ে, আগে কত সিরিয়াস ব্যাপারেও ঠাট্টাচ্ছলে সুতপাকে কত কিছু বলা যেত, সুতপাও ছেড়ে কথা বলতো না। যদিও অনুভবের বলা কথাগুলো নিঃশব্দে বাস্তবায়িত হয়ে যেত। যেন মোমের পুতুল মাখনের ওপর নেচে যেত। একটা অম্লমধুর অদৃশ্য টান ঘুমহীন ক্রিয়াশীল থাকত; যেটা এখন নেই। অনুভবের মনে হয় দামী একটা কিছু বোধহয় হারিয়ে গেছে। এখন বাইরে যতই চকচকে রোদ উঠুক, সুতপার সঙ্গে অনুভবের সম্পর্কের মাঝখানটায় অনেকটা কালো মেঘ জমে গেছে। সুতপার মুটিয়ে যাওয়া শরীরের সমানুপাতিক বাত ধরেছে ওদের সিলভার জুবিলি ছুঁই ছুঁই করা সম্পর্কের গাঁটে গাঁটে। তবুও অনুভবের মনে হয় বাতের - না না, বাত বলা যাবে না, ওটা সুতপার অতীব অপছন্দ, বলতে হবে আরথ্রাইটিস। হ্যাঁ আরথ্রাইটিসের ব্যথার কথা বলে সুতপা যেন পাশ কাটিয়ে থাকতে চায় অনুভবের ইচ্ছে-অনুরোধ-আবদারগুলো থেকে। এই পরিবর্তনের একশোটা কারণের মধ্যে লম্বায় যেটা সবচেয়ে বড়, সেটা হল কাজের মাসি সেবতীকে নিয়ে। যেটুকু সময় সেবতী ঝড়ের বেগে কাজ করে অন্তত সেই সময়টুকু অনুভবের যতটা গম্ভীর, মানে রামগরুড়ের ছানা হয়ে থাকা উচিত ছিল সেটুকু সে থাকেনি বলেই সেবতীর সাহস বেড়েছে। কিছু একটা এক্সট্রা ফাইফরমাশ সুতপা করলেই ও বলে দেয়, "আমার সময় হবে না কাকিমা; চার বাড়ির কাজ করে পোড়া সংসারটার পেটগুলো টানি। আমাকে দু মিনিটেরও হিসেব করে চলতে হয়।"
কিন্তু খবরের কাগজে ডুবে থাকা অনুভবের আঙুলের ফাঁকের না ধরানো সিগারেটটা দেখে কাকিমার রান্নাঘর থেকে দেশলাইটা এনে সোফার হাতলে রেখে দিয়েছিল সেবতী। অনুভব ব্যাপারটা খেয়ালই করেনি। কিন্তু সুতপা করেছিলো। সেদিন সেবতী চলে যাবার পর বাঘিনীর মতো থাবা মেরে খবরের কাগজটা কেড়ে নিয়ে গোল থেকে আরও গোল হয়ে যাওয়া চোখ দুটোর দুপাশের সবকটা পেশী কুঁচকে সুতপা কোমরে হাত দিয়ে কাঁপছিলো। এটাকেই বোধহয় নারীর রোষানল বলে! অনুভব গুপ্ত অনুভব করলো। তাপটা আঁচ করতে পারলেও কারণটা অনুমান করতে পারলো না খবরের কাগজে ডুবসাঁতারে নিমগ্ন অবস্থা থেকে হঠাৎ উঠে আসায়। ফলে বোকার মত বলে ফেলল, "হয়েছেটা কী, বলবে? ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন?"
হ্রস্ব ই নামক স্বরবর্ণটাকে টেনে যতটা লম্বা করে উচ্চারণ করা যায় সেটা প্র্যাকটিস করে সুতপা আগুন উগরে বলেছিল, "কী হয়েছে তা আবার জিজ্ঞেস করছ? ছি, তলে তলে এতদূর! ছিঃ!"
“আরে বলবে তো ব্যাপারটা কী?" সরল সুবোধ মুখ অনুভব জানতে চায়।
এবার সোফার হাতল থেকে সেবতীর রেখে যাওয়া দেশলাইটা তুলে নিয়ে
অনুভবের মুখে ছুঁড়ে মেরে একটা গা রিরি করে ওঠা চিৎকার সহযোগে সুতপা বলে, "আমি
কিছু বুঝি না ভেবেছ? আমি বললে সময় হয় না, আর তুমি না
বলতেই দেশলাই এগিয়ে দেয়! তলে তলে এতদূর এগিয়েছো! ধরেই নিয়েছো, আমি কিছু বুঝবো না, তাই না?" - মাথার দুপাশে করতল দুটোকে থাবার আকৃতি দান করে সে দুটোর
কম্পমান দশার ফ্রেমে নিজ মুখমণ্ডলটি স্থাপন করে গলাটা সামান্য খাদে নামিয়ে সুতপার
অগ্নিবর্ষণ জারি থাকে, "অ্যাই, অ্যাই দ্যাখো, তুমি ঐ নকল বোকাটে মুখ করে নিজেকে যতটা সিম্পল বলে চালাতে
চাইছো ততটা সিম্পল তুমি কিন্তু মোটেই নও। তুমি হচ্ছ একটা ঘাপটি মারা
কালপ্রিট!"
সেদিনের মতো রান্নাবান্না শিঁকেয় উঠলো। খাওয়া দাওয়াও তথৈবচ। এরকমই, সুতপা ক্রমশ বদলে যাচ্ছিল। অনুভব মনে মনে চাইতো কাজের লোক ছাড়িয়ে দিতে। কিন্তু একটা ছাড়লেই টপাক্ করে আরেকটি পাওয়া যাবে এমন তো মোটেই নয়। তাই তোয়াজ করে চলা ছাড়া অন্য কোন উপায় মাথায় আসেনি। কখনো হয়তো বলেছে, "আহা, কাকিমা যখন বলছে তো যাও না একটু কাকিমার সঙ্গে ছাদে, টবগুলো একটু দাও না সরিয়ে। জানোই তো তোমার কাকিমার হাঁটু কোমরে ব্যথা। যাও, একটু কাকিমাকে সাহায্য করে দাও। আমি না হয় তোমাকে পান খাওয়ার পাঁচ টাকা দেব।"
অবিশ্বাস্য তৎপরতায় অনুভবের কথা রেখেছিলো সেবতী। ছাদের প্রায় গোটা তিরিশেক টব সুতপার নির্দেশ মতো সরিয়ে এবং গুছিয়ে রেখে আবার ছাদটা ঝাড়পোঁছ করে দিয়েছিলো। এজন্য প্রায় মিনিট চল্লিশেক সময় বেশী লেগেছিল সেবতীর তার নির্ধারিত সময়ের চাইতে। দ্রুত বেরিয়ে যাবার সময় দায়িত্বশীল নাগরিক অনুভব পেছন থেকে ডেকে পান খাওয়ার পাঁচ টাকা নিয়ে যেতে বলেছিলো। ডান হাতের তর্জনীতে শাড়ির আঁচলটা প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে অধোমুখী সেবতী বলেছিল, "থাক না কাকু, আপনি যে বলেছেন এটাই যথেষ্ট। কাজের লোক বলে আমাদের সঙ্গে তো কেউ ভালো করে কথাও বলে না। টাকাটা থাক কাকু।" একটুও না থেমে বেরিয়ে গিয়েছিলো সেবতী, আর গভীর মনোযোগে পাক্কা গোয়েন্দার মতো এই সংলাপ এবং সেবতীর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ নিজস্ব অভিধান অনুযায়ী পড়ে নিয়েছিলো সুতপা।
এভাবেই বিছানার অনীহা ক্রমশ দৈনন্দিন দাম্পত্যের মাঝেও নিঃশব্দে ঢুকে পড়ে একটা জায়গা নিয়ে বসেছিল। শুধু কথাবার্তায় নয়, রোজানা আচরণের মাঝেও ডিপ ফ্রিজের দরজা খোলা হিম ধোঁয়াগুলো ঠাঁই করে নিয়েছিলো দুজনের মাঝে। অনুভব অবশ্য লক ডাউনের প্রথম দিনেই এই বর্ফিলি ধোঁয়ার ওপারের সুতপাকে বলেছিল, "আমার তো অফিস যাওয়া বন্ধই থাকছে, আমি তো ঘরেই থাকবো; যতদূর পারি ঘরের কাজ আমিই করে দেব।" একটু থেমে ওপারের মানুষটির অনুমোদন আদায়ের জন্য জুড়ে দিয়েছিল, "তাছাড়া সবাই বলছে কাজের লোক, খবরের কাগজ দেবার লোক এরা সব করোনা ভাইরাসের ক্যারিয়ার হতে পারে। তাই সেবতীকে ছাড়িয়ে দেওয়াই ভালো। রিস্ক নেওয়া ঠিক হবে না।"
"ঠিক
আছে।" সুতপা যেন অবিশ্বাস্য তাৎক্ষণিক অনুমোদন দিয়ে দিল! এত সহজে, এরকম চট করে
সুতপার মসৃণ সম্মতি পাওয়া অনুভবের কাছে ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাই বেশ
একটা তৃপ্তির অনুভুতিকে বেশ তারিয়ে তারিয়ে চেটে খেতে ইচ্ছে করছিলো। ফুরফুরে অনুভব
ব্যালকনিতে গিয়ে সিগারেট ধরায়। দুটো লম্বা সুখটান। আমেজে দুচোখ বন্ধ হয়ে আছে
অনুভবের। চোখ খুলতেই, আকাশ কী দারুণ বেশী গাঢ় নীল! আহ্, নীরবতাটা কী দারুণ সুস্বাদু!
দুচোখ আবার বন্ধ হয়ে আসে। নিঃশব্দে পাশে এসে দাঁড়িয়ে সুতপাই সেই নীরবতাটা ভেঙেছিলো।
"লকডাউন ফুরোলে
কাজের লোক কোথায় পাব? তোমার তো অফিস শুরু হয়ে যাবে। আমার চোখের আড়ালে তুমি ফ্রিডম এনজয় করবে। আর
আমি? এবার
থেকে তাহলে এই করোনার বাহানায় মেইড সার্ভেন্টের কাজগুলো আমাকে দিয়েই করাবে, ঠিক করে রেখেছ?"
সিগারেটের ধোয়াগুলো কেন যে এত বিচ্ছিরি রকমের তেতো হয়!
অনেকটা জীবন বাকি থাকতেই অনুভবের আঙুলের ফাঁকে ধরা সিগারেটটা ছিটকে গিয়ে পড়লো
নিচের শুনশান রাস্তায়। ঠিক যেভাবে কেউ ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। তার
হাতের দশ আঙুল রেলিঙে ঢুকতে চাইছিল। উত্তপ্ত যে শব্দ কটা মুখ দিয়ে বেরিয়ে পড়তে
চাইছিল সেগুলো স্বাস্থ্য রক্ষায় লোকেরা নিমপাতা যেভাবে খায় সেভাবে খেয়ে ফেলেছিল
অনুভব। কিন্তু সবটুকু না জেনে সুতপা তো থামতে পারে না! তাই যোগ
করেছিলো, "তারপর আমি এই শরীর নিয়ে তোমার সাংসারের পুরো বোঝাটা টানতে গিয়ে হস্পিটালাইজড
হয়ে গেলেই তোমাদের গেম প্ল্যান সাক্সেসফুল! তাই তো?"
“আঃ, থামো তো!"
প্রায় ধমকের মতো উচ্চারিত শব্দগুলো যেন অনুভবকেই হকচকিয়ে
দিয়েছিলো এই আচমকা পৌরুষ পুনরুদ্ধারের
আকস্মিকতায় এবং জাহাজের শিকল ছেঁড়া একটি বন্ডিলের মতো তার ব্যালকনি ফেরত
শরীরটা ধপাস করে সোফায় খসে পড়বার পর সে সময় নষ্ট না করে পাঞ্জাবীর কোণাটা দিয়ে চশমা
মুছতে লেগে গেল। প্রায় এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলল, "তাহলে তোমার যা ইচ্ছে করো গে যাও। যেটা
করলে তুমি ভালো থাকবে, খুশি থাকবে ভেবে চিন্তে তাই করো গে যাও।"
বিপজ্জনক রকম হুড়মুড়িয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে কম্পাউন্ডের গেটটা খুলেই সম্বিৎ ফিরল অনুভবের। বাইরে তো বেরোনো যাবে না; যতই অশান্তি থাক তোমাকে ঘরেই থাকতে হবে। ফলে, যে কোনোরকম সংলাপের গন্ডী থেকে পালাতে পাঞ্জাবীটা খাটের ওপর ছুঁড়ে ফেলে সোজা কলতলায় গিয়ে অনভ্যস্ত হাতে বাসন মাজার হাতেখড়িটা সেরে ফেলেছিল সে। উঠে কোমরটা সোজা করতে করতে তার যেন নতুন শাস্ত্রজ্ঞান লাভ হল; বাড়ির ভেতরে এত্তো কাজ থাকে আর এত্তো পরিশ্রম করতে হয়, বাপরে বাপ!
আড্ডায় সবাই বিগত ক’দিনের ঘরবন্দি দশায় যাবতীয় খবর গিলে গিলে ফুলে ওঠা
পেটগুলি হাল্কা করছিল। কী ছিলো না সেই অনর্গল বমনস্রোতে! চিনের
ট্র্যাডিশনাল বিশ্বাসঘাতকতা, ট্রাম্পের ধমকে মুতে দিয়ে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন সাপ্লাই, দেশের
প্রেস্টিজটা গেলো না থাকলো, তাতে দেশের কত হাজার কোটির আমদানি, চিনের দালালি করায় ‘হু’কে আমেরিকার
দাবড়ি, শ্রমিকের নতুন বিশেষণ 'পরিযায়ী' - এদের নিয়ে কোন সরকার ভাবছে বেশী আর কে ভাবছে কম, কতগুলো
পরিযায়ী শ্রমিক রেললাইনের ওপরে বেঘোরে প্রাণ হারালো, কত শ্রমিক যে পায়ে ফোস্কা তুলে হাঁটছে, মরছে লড়ছে
একটু বেঁচে বর্তে থাকার জন্য, ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইট বন্ধ করতে কাদের স্বার্থে কে কেন
দেরি করলো, টেস্টিং ফেস্টিং কী যে ছাই হচ্ছে, আন্তাবড়ি প্যানিক খেয়ে কিছু লোক ফালতু মালপত্তর কিনে মজুদ
করছে, কে পরিসংখ্যানে গন্ডোগোল করছে, কার তাতে ফায়দা, কার কী প্রব্লেম, এমনিতেই কোরোনার কামড়ে পরান যায় তার ওপর আম্ফানের কোপ, পাপে ধরাতল ডুবে গেছে, টিভি খুল্লেই
র্যাশনের মাল কে মেরে খেলো আর তা নিয়ে কে পলিটিক্যাল ফায়দা তুলতে লেগে গেছে, খালি
চতুর্দিকে কাঠিবাজির খেলা, পল্যুশনটা কতোটা কমে গেছে, কিন্তু বেরোতেই যদি না পারো তাহলে প্রকৃতির
এই উদার উন্মুক্ত রূপ তুমি দেখবে কীভাবে, কোরোনা করোনা করে অন্য সব রকমের চিকিৎসার
প্রায় লাটে ওঠার
দশাটা দেখার কে যে আছে, শিক্ষা টিক্ষাও সব লাটে ওঠার অবস্থা - এসব অনলাইনে পড়াশোনা
কি আর ছেলেমেয়েদের সঠিকভাবে শিক্ষাটা দিতে পারবে? গালওয়ানে চিনকে কেমন মোক্ষম জবাব দিল
ইন্ডিয়া, মদের দোকান খোলাতে কাদের কতোটা কিরকম সুবিধা হল বা কতটা সংক্রমণ ছড়াতে
সাহায্য করলো, কোরোনার ধাক্কায় কতগুলো নতুন হাসপাতাল, ল্যাব সব তৈরী হয়ে গেলো, এহেন হরেকরকম খবর খেয়ে ঢেঁকুর তোলা গুরুগম্ভীর মুক্ত চিন্তার মুক্ত বাক্যের বর্ষণে
আড্ডাটা যেন অঘ্রাণের মিঠে রোদ্দুর মার্কা একটা আবেশে ভরে উঠেছিলো।
কিন্তু কিছুটা অন্যমনস্ক অনুভব গুপ্ত যেন কিছুতেই ঢাকনা খুলতে পারছিল না। ভেতরে কোথাও যেন অজানা একটা তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে কেউ। কর্মচারী ইউনিয়নের হাফ নেতা হয়ে ওঠা সুকুমার যেই না বলেছেঃ "এমনিতেই মানুষের হাতে কাজ নেই, তার মধ্যে লাখে লাখে পরিযায়ী শ্রমিকরা যে সব ফিরে আসছে, এদের কথা চিন্তা করে বর্তমানে যে একশো দিনের নিশ্চিত কাজের ব্যবস্থা আছে সেটাকে বাড়িয়ে দুশো দিনের করা উচিৎ সরকারের।" ব্যাস, এক অদৃশ্য যাদুবলে অনুভবের ভেতরকার তালাটা যেন মুহূর্তে খুলে গিয়ে তাকে মুখর করে তোলে। সুকুমারের মুখের কথা টেনে নিয়ে সে বলে উঠলো, "এই একশো দিনের কাজ চালু হবার পর থেকে অতি সহজে খুব কম পরিশ্রমে বা কোন কোন ক্ষেত্রে বিনা পরিশ্রমেও মজুরি উপার্জনের সুযোগ থাকায় মানুষের বাড়িতে বাড়িতে ঘর ঝাড়া, ঘর মোছা, বাসন মাজা, কাপড় কাচা, কুটনো বাটনা করে দেওয়া বা টুকিটাকি ফাইফরমাস খেটে দেওয়া এসব আর কেউ করতে চায় না। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ঘরের ভিতরের এইসব কাজগুলোতে পারমানেন্ট লকডাউন হয়ে গেলে তোদের আমাদের কী সাংঘাতিক বাজে অবস্থায় পড়তে হবে তা তোরা এই দাবী করনেওয়ালারা ভেবে দেখেছিস? যদি দুশো দিনের কাজের গ্যারান্টি এসে যায় তাহলে এই গ্যারান্টিটাও লিখে নে যে সকলের ঘরে ঘরে ডোমেস্টিক শাট ডাউন হয়ে যাবে। বারোটা বেজে যাবে।"
অনুভবের কথায় সকলের চিন্তিত হয়ে উঠবার আগেই এতক্ষণ অনুভবেরই মত চুপচাপ বসে থাকা বিশু বলে উঠলোঃ "তুমি তো শুধু বাড়ির ভেতরের সমস্যার কথা বলছো গুপ্তদা। আমাদের পাঁচবিঘা জমি চাষ হয় না লেবারের অভাবে। সহজ মজুরির ব্যবস্থা থাকলে লোকে কেন আসবে কৃষির মতো ঝামেলার, কষ্টের কাজ করে হাজিরা কামাতে? লেবার পেলেও যে রেটে মজুরি দিতে হয় তাতে নেমন্তন্ন করে ডাহা লোকসানকে ডেকে আনা হয়। বড় চাষিরা ট্র্যাক্টার ফ্র্যাক্টার লাগিয়ে ম্যানেজ করে নেয়। কিন্তু আমাদের মতো অল্প জমিওয়ালা মারজিনাল ফারমাররা পারে না। মার খায়। জমি পড়ে আছে। চাষও নেই, উপার্জনও নেই। ওই দুশো দিনের কাজ হলে সেই লেবারদের কৃষিতে ব্যাবহার না হলে আমাদের মত লোকেদেরও বারোটা বেজে যাবে।" আলোচনাটা পাছে অনুভবের চিন্তা প্রবাহের খাত ছেড়ে অন্য কোনোদিকে চলে না যায় সেরকম একটা আশংকা থেকে অসহিষ্ণু হয়ে উঠে সে বলে ওঠে, "হ্যাঁ, তুমি যেটা বলেছো সেটাও বড় সমস্যা বটে, কিন্তু দ্যাখো, প্রায় প্রত্যেকের বাড়িতেই তো ঠিকা কাজের লোক লাগে, তাই না বলো? দুটোই জেনুইন প্রব্লেম। কিন্তু কোন বাড়ির ভেতরের সমস্যাটা সমাধানের বাইরে চলে গেলে তখন কোনটাকে প্রায়রিটি দেবে বলো? বাইরেরটা না ভিতরেরটা?"
আই.টি. ফার্মের কর্মী সুমন আড্ডার জুয়েল। ওর কাছে যেন সবকিছুরই সহজ সমাধান রয়েছে। সব সময় ও যেন ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল। আলোচনাটা একটু উচ্চগ্রামে না পৌছুলে যেন ওর মুখ খুলবার উপযোগী হচ্ছিলো না। সেরকম একটা প্লট তৈরী হওয়ার অপেক্ষায় ছিলো। এবার সে মুখ খুললো।
- "দ্যাখ্, তোরা সব
বেফালতু চাপ নিচ্ছিস। এটা ইনফরমেশনের মানে তথ্য প্রযুক্তির যুগ। অনেক আবিষ্কার হয়ে চলেছে
প্রতিদিন। তোমাকে জাষ্ট একটু খবর টবর রাখতে হবে। এসব সমস্যার হার্ডওয়্যার সল্যুশনের পাশাপাশি অনেক
সফটওয়্যার সল্যুশনও এসে গেছে। এগ্রি মানে কৃষিকে মর্ডারনাইজ করতে অনেক কাজ হচ্ছে
আর ডোমেষ্টিক প্রব্লেম যেটা গুপ্তদা বলছো, সেটারও সল্যুশন হাতের কাছেই আছে। রোবট, রোবট এসে
গেছে। ডি.এস.আর. মানে ডোমেষ্টিক সার্ভিস রোবট।"
অধৈর্য অনুভব বলে ওঠে, "সে তো হেভী খরচের হবে, তাই না সুমন? আমাদের মতো মিড্লক্লাস ফ্যামিলির পক্ষে কি আর রোবট কেনা সম্ভব? তুমি যে কেন
এই গল্প শোনাচ্ছ বুঝতে পারছি না।"
যেরকম অ্যাঙ্গেল থেকে যে যাই বলুক সুমন বরাবর যেমন ঠান্ডা থাকে এবারও তাই থাকলো। চশমাটা নাকে রিসেট করে নিয়ে বলা শুরু করলো, "মোটেই বেশী খরচের নয় গুপ্তদা, মেইড সার্ভেন্টের পিছনে যত টাকা খরচ হয় তার চেয়ে খুব একটা বেশী হবে না। তুমি কেন রোবট কিনতে যাবে! ওলা, উবের এই সমস্ত কম্পানিগুলো কি এই যত কার, মানে ঐ ভাড়ার ট্যাক্সি দ্যাখো সব কিনে নিয়ে তারপর ব্যবসায় নেমেছে? না, কিনেছে অন্য কেউ, ভাড়া খাটাচ্ছে ওলা উবেরের কাছে। ওলা, উবের এরা হলো সার্ভিস প্রোভাইডার। তুমি কাষ্টমার - যখন তুমি ট্যাক্সি চড়ো। এরকমই রোবট কিনেছে অন্য কেউ, তুমি স্রেফ ভাড়া নেবে। সে হল সার্ভিস প্রোভাইডার আর তুমি হবে বেনিফিসিয়ারি মানে লাভখোর - অবশ্যই টাকার বিনিময়ে। শোনো, তোমাকে শুধু একটা অ্যানুয়াল কন্ট্রাক্টে যেতে হবে। মানে মিনিমাম এক বছরের জন্য একটা চুক্তিতে যেতে হবে ডি.এস.আর.এর মালিকের সঙ্গে। এজন্য তোমাকে একটা ফর্ম ফিলাপ করতে হবে তোমার নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর আর কি কি জব মানে কাজ তুমি করাবে সেগুলো ওদের একটা লিষ্টে টিক মার্ক দিয়ে জানিয়ে দিতে হবে। তোমার নিজের কপিটা রেখে ওদের কপিটা দিয়ে দিতে হবে ওদের সার্ভিস এজেন্টের হাতে। এবার তোমার মোবাইলে একটা এস.এম.এস. দিয়ে একটা লিঙ্ক পাঠাবে। সেটাতে ক্লিক করে ওদের ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইন রেজিষ্ট্রেশনটা সেরে ফেলতে হবে। সেখানেও তোমাকে তোমার চোজেন মানে সিলেক্টেড জবগুলিতে টিকমার্ক দিয়ে কনফার্ম করতে হবে। তখন তোমার সিলেক্টেড জবগুলির ইউনিট রেট এবং টোটাল বিল অ্যামাউন্ট দেখতে পাবে। মানে বছরে মোট কত টাকা তোমাকে পে করতে হবে সেটা জানতে পারবে। এবার তমার কন্সেন্ট চাইবে, মানে দেখবে একটা বক্সে লেখা আছে 'এগ্রি? ইয়েস/নো'। এখানে তুমি ইয়েসে ক্লিক করলে স্ক্রিনে অনলাইন পেমেন্টের অপশন আসবে। মানে জানাতে হবে তোমার মোড অফ পেমেন্ট কি হবে - মানে নেট ব্যাঙ্কিং নাকি ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে পেমেন্ট করবে? তোমার অপশন জানালে তোমার মোবাইলে একটা ও.টি.পি. আসবে। সেটা নির্দিষ্ট বক্সে দিলেই তোমার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকাটা ডেবিট হয়ে যাবে। একটা রিটার্ন এস.এম.এসে তুমি কনফার্মেশন পেয়ে যাবে। সেখানে বলা থাকবে কবে থেকে শুরু হয়ে কোন তারিখ পর্যন্ত তোমার এই কন্ট্র্যাক্ট ভ্যালিড মানে কি যেন বলে ঐ বহাল থাকবে। ব্যাস হয়ে গেলো তোমার ঝামেলা খতম। এখন রোবোট এসে তোমার প্রয়োজনীয় সব কাজ করে দেবে। এখানে প্রব্লেম বলতে একটাই, সেটা হল ওদের দেওয়া টাইম সিডিউলটা তোমাকে টাইটলি মানে কঠোর ভাবে ফলো করতে মানে মেনে চলতে হবে।"
একটানা এতটা বলবার পর সুমন দেখল ওর চারপাশের আড্ডা-বন্ধুদের সকলেরই মুখগুলো ঈষৎ হাঁ হয়ে আছে।
"সুমনদা, তুমি তো ভাই হাই ফাই জগতের লোক। তোমার অনেক কথাই মাথার ওপর দিয়ে চলে যায়। তবু একটা
দারুণ আইডিয়ার গল্প বললে মাইরি" - বিশুর অকপট প্রতিক্রিয়া। অনুভবও আবছা
অবিশ্বাস চাপা দেবার মতো করে বলে, "গল্প না হয়ে কাজে লাগার মতো কিছু হলে তো সকলেরই লাভ, কি বলিস?" - সমষ্টির
সম্মতির দিকে ঠেলে দেয় কথাটা। ভেতরে ভেতরে অনুভব যেন কিছু একটা চেপে রাখতে পারছিলো না। যেন তিনদিন উপোস থাকার পর খাবারের থালা সামনে পেয়েছে এমন একটা ভাব ওর
অজান্তেই ফুটে উঠলো ওর মুখে যখন বলে ফেললো, "যদি সত্যি সত্যিই হাতের নাগালের
মধ্যে এমন একটা সমাধান থেকে থাকে তাহলে সুমন আমাকে যোগাযোগ করিয়ে দাও। আমি
কন্ট্রাক্টে যেতে রাজি আছি।
- "আমার এক কলিগের
ভাইপো ডি. এস. আর. কিনেছে। ব্যাঙ্ক লোন দিয়েছে। এসব ব্যাপারে ব্যাঙ্ক বেশ লিবারালি লোন দিচ্ছে। দরাজ। এবার ঐ ছেলেটি বিভিন্ন ফ্যামিলির সঙ্গে যোগাযোগ করে অর্ডার নিচ্ছে। ব্যবসা করছে। তুমি চাইলে ওর ফোন নম্বর রেখে দাও গুপ্তদা। আমার রেফারেন্সে কথা
বলে নিও" - সুমন অনুভবের হাতে নিশ্চিন্তির দরজার চাবি তুলে দেয়। অনুভবও হাভাতের মতো সকলের সামনেই ডি. এস. আর এর
এজেন্টের সঙ্গে কথা পাকা করে ফেলে অন্য সকলের দোনামনা ভাব কাটবার আগেই।
বেশ একটা বিজেতা বিজেতা ভাব নিয়ে বাড়িতে ঢুকে, ফ্রেশ হয়ে স্যানিটাইজেশন সেরে সোফায় বসে সিগারেটটা ধরিয়ে চোখ বুঁজে একটা নরম খুশির আমেজ ঢোঁক গিলে খায় অনুভব। কিছুক্ষণ পর টিভির রিমোটটা হাতে তুলেও আবার রেখে দেয়।
- "একটু শুনবে
তপি?" গাঢ় স্বরে সুতপাকে ডাকলো অনুভব। প্রথম যখন বৌ হয়ে এই বাড়িতে এলো সুতপা, নতুনের রঙ
লাগা সেই অবাক দিনগুলোতে তোলপাড়ের আগের ঘনিষ্ঠ আমিষ মুহূর্তগুলিতে তাকে তপি বলে
ডাকতো অনুভব। পৃথিবীর আর কারো না জানা সেই নাম ধরে ডাকাটা কানে গেলে
সুতপা আর কোনো বাঁধন ধরে রাখতে পারতো না ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে। গায়ের গন্ধে অনুভব
বুঝলো সুতপা এসে দাঁড়িয়েছে। খুব কাছে ঘেষে। আবেশের গর্ত থেকে চোখ খুলে দেখলো সুতপা
ওর চোখের ভিতরে ঢুকতে চাইছে। ঈষৎ কুঞ্চিত হয়ে আছে সন্দিগ্ধ ভ্রু-যুগল। "বলো,"- একটা হাত
কোমরে রেখে সংক্ষিপ্ত আগ্রহ সুতপার। যেন দারুণ একটা অ্যানিভার্সারি গিফ্ট দিচ্ছে
এমন ভাবে ডি. এস. আর. এবং তার চুক্তি পাকা করার কথাগুলো
নিবেদন করলো অনুভব। নিরুত্তর সুতপা অনুভবকে সংশয়ে রেখে চলে গেলো। একটু পরেই ফিরে
এসে বললো, "আর সেবতীর কি হবে?"
- আচ্ছা, সুতপা কি
চিরটা কাল আনপ্রেডিক্টেবল থেকে যাবে? এত ভালো একটা ব্যাপার জেনে ওরই তো বেশি খুশি হবার কথা। তা
না হয়ে এরকম একটা প্রতিক্রিয়া হবে সেটা
অনুভব আন্দাজই করতে পারেনি। "ওর
অলরেডি অনেক বাড়িতে কাজ আছে, পেয়েও যাবে কাজ আরো যদি চায়" - মুডটাকে আবার গুছিয়ে
নিয়ে অনুভব বললো।
সুতপার বক্তব্য,
"এই তো কদিন আগেই ওর বরকে নেশামুক্তি
কেন্দ্রে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে আনলো। তারপর কাজ
পেয়ে চলে গেলো কেরালায়। এখন এই কোরোনায় কাজ খুইয়ে পরিযায়ী হয়ে ফিরে এলো। আছে কোয়ারান্টাইনে। লালা রসের পরীক্ষার ফল জানা যায়নি। যদি নেগেটিভও আসে তাহলে
এখানে কাজ পাবে মনে করো? দুটো মেয়ে হাই স্কুলে পড়ছে। এখন এই অবস্থায় ওকে ছাড়িয়ে দিলে
সেটা কি ঠিক হবে?"
অনুভব পড়লো মহা ফ্যাসাদে। অতগুলো লোকের
মাঝে আগ বাড়িয়ে ডি. এস. আরের কন্ট্রাক্টটা পাকা করে ফেলে সকলের থেকে
একধাপ এগিয়ে থাকার আনন্দটা বেশ এনজয় করেছিলো। এজেন্ট ছেলেটিকে কথাও দিয়ে দিয়েছে।
সেটাও সর্বসমক্ষে। এখন সুতপার এইসব কথা শুনে নিজের কথার খেলাপ করলে
প্রেস্টিজটা তো যাবেই, অনেক রসালো আলোচনা জমে যাবে আড্ডায়।
- " না, ওর কাজের অভাব
হবে না। কাজের লোকের এখন অনেক ডিম্যান্ড। ওর বরও
একশো দিনের কাজ পেয়ে যাবে। সরকার সেরকম একটা ঘোষণা করে দিয়েছে।
তাছাড়া এই ক্লাসটাকে নানা দিক থেকে নানা রকম রিলিফ টিলিফ দিচ্ছে। সামনে ইলেকশন। ওরা আরও অনেক দান খয়রাতি পাবে। ওর সমস্যা নিয়ে তুমি অতো ভেবো না। ডি. এস. আরের কাজটা শুরু হতে দাও। তোমারই তো সুবিধে
হবে, আরাম
হবে। তাছাড়া তুমি সবদিক দিয়ে কত এগিয়ে আছো - লোকে বলাবলি করবে, তাই না তপি?"
সুতপা যে কি ভাবছে বোঝা যাচ্ছে না। চুপচাপ
ডিনার সার্ভ করলো। অনুভবের সংশয়টা ডিনার টেবিলেও ঘরাফেরা করলো। সুতপা ডি. এস. আরের ব্যাপারে ধোঁয়াশাটা ঝুলিয়ে রাখলেও ওর
মুখের আভা, গলার স্বর, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এসবের মাঝে বহুদিন পর তপি বলে ডাকার ম্যাজিকটা যেন প্রান্তর
জুড়ে জোনাকির ঝরনার মতো ঝরছিলো।
ঘুমটা সবে এসে গেছে। অনুভব তলিয়ে যাচ্ছিলো কচি কলাপাতা রঙের
মৃদু আলোর তল থেকে অতলে। পাশ থেকে একটা হাল্কা ধাক্কা। ঘোরটা কাটলে অনুভব
উলটপুরানের গন্ধ পেলো। ওর বুকে সুতপার হাত। ওর দিকেই পাশ ফিরে শুয়েছে তপি। কেমন যেন ধাঁধার মতো লাগছে। কোথায় গেল সুতপার কঠোর কর্কশ ধ্বনি! দূর থেকে যেন
একটা ছোট মেয়ের গলার আওয়াজ ভেসে আসছে।
-"অ্যাই, শুনছো?"
-"উঁ"
-"ঐ যে তোমাদের
ডি. এস. আর. না কি যেন বললে, ওটা কি বিছানাতেও আসতে পারে?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন