কালিমাটি অনলাইন / ৮১
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে এখনও পর্যন্ত মুক্তির কোনো উপায় খুঁজে পায়নি তাবৎ বিশ্বের মানুষ। প্রতিদিনই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খবর ভেসে আসছে, কোথায় কতজন সংক্রমিত হয়েছে এবং কতজন মারা গেছে। বিভিন্ন দেশের ল্যাবরেটরিতে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা অক্লান্তভাবে গবেষণা করে চলেছেন করোনার প্রতিষেধকের জন্য। কয়েক জায়গায় গবেষণা সফল হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে, নমুনা মানুষের ওপর সেই প্রতিষেধকের প্রয়োগ সফল হয়েছে বলেও শোনা যাচ্ছে। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত তা বিশ্বের ওষুধের বাজারে না আসছে, সাধারণ মানুষের ওপর তা প্রয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না। তার সামগ্রীক ফলাফলও জানা যাচ্ছে না। তবু অনন্যোপায় মানুষ হা-পিত্যেশ করে বসে আছে, কবে সেই ভ্যাকসিন তার শরীরে প্রয়োগ করার পর সে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে, কবে আবার সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে তার প্রত্যাবর্তন ঘটবে।
বস্তুতপক্ষে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে তো আমরা অতি অবশ্যই বাঁচতে চাই, কিন্তু সেইসঙ্গে মুক্তি পেতে চাই করোনার কারণে পৃথিবীর অসুস্থতা থেকেও। পৃথিবীর শুধুমাত্র যে প্রাকৃতিক দূষণ, তা নয়, একইসঙ্গে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং মানসিক দূষণও। সবদিক থেকে পৃথিবীতে বসবাসকারী মানুষেরা বিভিন্ন দূষণের আওতায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। এবং এইসব দূষণের ফলে তাদের মধ্যে যে বিভিন্নরকম বিকার অনুপ্রবেশ করেছে, তা আরও মারাত্মক। এখন অনেক সময় কিছু কিছু মানুষের মধ্যে ক্রিয়াশীল থাকছে অহেতুক ভয়, আতঙ্ক, অসহায়তা, অবিশ্বাস, স্বার্থপরতা, অপরাধপ্রবণতা, অমানবিকতা – যার পরিণতিতে তাদের আচরণ অনেক ক্ষেত্রেই মনুষ্যোচিত নয়। কেউ কেউ তাদের এই আচরণকে তুলনা করছে মনুষ্যেতর প্রাণীর সঙ্গেও। যদিও তা ঠিক নয় কখনই। যে কোনো মনুষ্যেতর প্রাণী, যাদের আমরা পশু নামে অভিহিত করি, তারা কিন্তু তাদের স্বাভাবিক পশুসুলভ আচার আচরণ করে থাকে। অপশুসুলভ কিছু করে না। নিজেদের পশুধর্ম তারা বজায় রাখে। কিন্তু মানুষ এমন এক প্রাণী, যে বিপদের সম্মুখীন হলে, সংকটের মুখোমুখি হলে, নিজের স্বার্থপরতায় ঘা লাগলে বা সুখ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হলে অনেকসময় তার মনুষ্যধর্মকে বজায় রাখতে পারে না। তার আচরণ তখন অমানবিক হয়ে ওঠে। বহুদিন আগে সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসে লিখেছিলেন, “অবস্থাবিশেষে মানুষ হিংস্র জন্তুমাত্র”। সাধারণত, মানুষ তার মনুষ্যধর্ম থেকে বিচ্যুত হলে তাকে পশুর সঙ্গেই সবাই তুলনা করা হয়ে থাকে। কিন্তু এই ভাবনাটা আমাদের পাল্টানো প্রয়োজন। আমার বিশিষ্ট বন্ধু এবং কলকাতা লিটল ম্যাগাজিন ও গবেষণাগারের কর্ণধার ও প্রাণপুরুষ সন্দীপ দত্ত তাঁর ফেসবুকের টাইমলাইনে একটা পোস্ট দিয়েছেন, “মানুষের আচরণ ও প্রবৃত্তির সঙ্গে মনুষ্যেতর প্রাণীর উপমা বন্ধ হোক!” খুবই তাৎপর্যপূর্ণ পোস্ট। মানুষের অনাচারের, অমানবিকতার, অপরাধের দায় কেন অন্য কোনো প্রাণী নেবে? তাদেরকে অপমানিত করার এই বুদ্ধিহীনতা থেকেও যেন আমাদের মুক্তি ঘটে। মানুষ হয়ে যখন জন্মগ্রহণ করেছে, তখন মানুষের মর্যাদা রক্ষা করার দায়ও শুধুমাত্র মানুষেরই।
আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল
ঠিকানা :
kajalsen1952@gmail.com /
kalimationline100@gmail.com
দূরভাষ যোগাযোগ :
08789040217 / 09835544675
অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ :
Kajal Sen, Flat 301, Phase 2,
Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main Road,
Pramathanagar, Jamshedpur 831002, Jharkhand, India.
খুব সত্য ও সময়োপযোগী সম্পাদকীয়।
উত্তরমুছুনশ্রাবণী।
প্রয়োজনীয় বক্তব্য
উত্তরমুছুন