কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৬ |
বিরজু একটি
ওয়ার্ডবয়
একটু
রাত হলেই মাঠটা পেরোতে কেমন গা ছমছম করে। এতোবড় হাসপাতাল, কেউ না কেউ মরছেই ডেলি। কোনো
জীবন আসি আসি করেও আসতে পায় না। আগেই খালাস হয়ে যায়। অতৃপ্ত হয়ে হয়তো ঘুরে বেড়ায় এই মাঠের কোণে মস্তবড় ডাস্টবিনে। ক্ষণপিরীতির মরা চুজা কুকুরেরা ছেঁড়াকামড়া করে। বিরজু বোঝার চেষ্টা করে, হাওয়া হলেই বা কী? এখানে পড়ে থাকা মড়ার হা হুতাশ সঙ্গে সঙ্গে তো ডেলিভারি হয় না? সেগুলো তো এই মাঠেই ঝলক ঝলক হাওয়া? ওই যে
কান্না ওই যে হাতজোড় করে মাথা ঠুকা, কোথায়
যায়? এখানেই থাকে। বিরজুর একটু একটু জাড় লাগে। এই
বয়েসেই অনেক জ্ঞান হয়েছে ওর।
হাসপাতাল ওকে ভিতরিয়া অনেক কিছুই শিখিয়ে দিয়েছে। কোন বয়েসে কেমন মানুষ কাহিল হয়, কোন
বয়েস বলে, আর পারি না, অনেক পাপ করেছি এবার উদ্ধার কর।
বয়েসকালেও কিছু মানুষ মহিলা ওয়ার্ডের দিকে তাকিয়ে থাকে। কোনো কোনো মহিলা বিরজুকে ডাকে আর ওর গায়ে কোমরে হাত বোলায়। কোনো কোনো
ডাক্তার নার্সের সাথে এমন এমন কথা বলে ও মানেই বুঝতে পারে না।
কিন্তু বোঝে ওদের রক্ত গরম হচ্ছে।
এখন
অন্ধকার মাঠে ঘাস অব্দি কালো হয়ে আছে। তবু
একটু আলো জল পায় বটে। শিশির ভেজা মাঠে বারোমাস ঝুড়ি ঝুড়ি ঝুনপুকি(জোনাকি)। উড়ে উড়ে নানা রঙ্গ দেখায়। বিরজুর সেদিকে ভয়ডর নেই। তবে দুয়েকটা মদের বোতল পায়ে ঠেকলে সাবধান
হয়ে যায়। ভাঙা বোতলে পা পড়লে কে দেখবে তাকে? ঘরে চিররুগী বাপ আর ছিচকাঁদুনি দিদি। ভাগ্যিস হাসপাতলের কাজটা দিদিমনির দৌলতে। এখন দিদিমনি ডেকেছে, তখন তো
যেতেই হবে। তাই মাঠ পার করে যাওয়া। তাছাড়া
উপরি কামাই। হপ্তায় তিন চারটে মরা মারা কেস তো আসেই। হাসপাতলের মাঠ পেরিয়ে মর্গ। সুনসান। সামনে অনেকটা জুড়ে ফণী মনসার ঝাড়। কাঁটাওলা হলুদ বড়বড় ফুল।
কাঁটার ভয়ে মৌমাছি প্রজাপতি মানুষ পশুপাখি এমনকি পোকামাকড় পর্যন্ত ছোঁয় না। দিদিমনি বলে, বিরজু আমি কিন্তু ওই ক্যাকটাস ফুল খুব ভালোবাসি বুঝলি? বিরজু হাঁ করে দিদিমনির তৃপ্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। বুঝতে পারে না ওগুলোকে এমন ভালোবাসার কি কাজ?
দিদিমনি কখনো কখনো ওমনি তৃপ্ত সপ্রশংস চোখে বিরজুর দিকে তাকিয়েই থাকে। বিরজু বোঝে না, শুধু শোনে, -বিরজু, তোর গা
গতর যেন কষ্টিপাথর। শরীলকে গন্দা রাখিস না রে। রোজ কাচা জাঙ্গিয়া পরবি। বুঝলি? কেন। কেন
জাঙ্গিয়ার কথা বলে দিদিমনি?
বিরজুর লজ্জ্বা লাগে। ভালো লাগে না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন