বুধবার, ১৫ জুলাই, ২০২০

<<<< সম্পাদকীয় >>>>





কালিমাটি অনলাইন / ৮০ 


সম্প্রতি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বিশ্বের যে উল্লেখযোগ্য কতকগুলি প্রবণতার পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তার মধ্যে একটি পরিবর্তনের প্রভাব সাহিত্যের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। বিশ্বসাহিত্যের সব খবরাখবর আমার একেবারেই জানা নেই, কিন্তু বাংলাসাহিত্য সম্পর্কে যেটুকু খোঁজখবর রাখি, তাতে তা লক্ষ্য করছি। আমি নিজের কথাই বলি। দীর্ঘ তেতাল্লিশ বছর ধরে আমি একটি সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশ করছি। পত্রিকার নাম ‘কালিমাটি’। ইতিমধ্যে পত্রিকার ১০৬টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। ১০০তম সংখ্যা পর্যন্ত পত্রিকা ত্রৈমাসিক রূপে প্রকাশিত হতো। ১০১তম সংখ্যা থেকে বছরে মাত্র একটি সংখ্যা প্রকাশ করা হয় এবং ১০১তম সংখ্যা থেকে ১০৬তম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে বিশেষ সংখ্যা রূপে। কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয় ও ভাবনাকে কেন্দ্র করে সংখ্যাগুলি প্রকাশ করা হয়। অবশ্য পত্রিকা ত্রৈমাসিক থেকে বার্ষিক হওয়ার কারণে আন্তর্জাল পত্রিকা প্রকাশে আমরা আগ্রহী হই, যা বিগত আটবছর ‘কালিমাটি অনলাইন’ নামে প্রতিমাসে প্রকাশ করা হচ্ছে। এতদিন পর্যন্ত এইভাবে পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশ অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবেই চলছিল। তেমন কোনো অস্বাভাবিক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়নি। কিন্ত এবছর মার্চমাস থেকে হঠাৎ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এবং তার ফলে পরিস্থিতি ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে ওঠায়, অন্যান্য সব ক্ষেত্রের মতো বাংলাসাহিত্য প্রকাশনা ক্ষেত্রেও এক অভূতপূর্ব সংকট উপস্থিত হয়েছে। বাংলা সাহিত্যের নতুন বই ও পত্রিকা প্রকাশনায় একটা অদ্ভুত অসহায়তা ও শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। শুধু ছোট ছোট প্রকাশনার ক্ষেত্রেই নয়, বড় বড় প্রকাশনার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই। আর লিটল ম্যাগাজিনের ক্ষেত্রে তো সংকট আরও গভীর। প্রতি বছর বাংলা নববর্ষ ও রবীন্দ্র জন্মোৎসবকে কেন্দ্র করে প্রায় প্রতিটি লিটল ম্যাগাজিন তাদের নতুন সংখ্যা প্রকাশ করে থাকে। দুঃখের কথা, এবছর বাংলা নববর্ষে কোনো লিটল ম্যাগাজিনের কোনো মুদ্রিত সংখ্যা প্রকাশিত হয়নি। আবার প্রতিবছর শরতকালে শারদোৎসবকে কেন্দ্র করে যেমন বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিনের মুদ্রিত উৎসব সংখ্যা প্রকাশিত হয়, এবছর তা আদৌ সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। আর ভারত ও বাংলাদেশে প্রতি বছর যে বইমেলার বিশাল আয়োজন করা হয়ে থাকে,  আগামী বছর তা সম্ভব হবে কিনা, তা আমাদের কারো জানা নেই। কিন্তু তাই  বলে তো সাহিত্যলেখন, সাহিত্যচর্চা এবং সাহিত্যপাঠ থেমে থাকতে পারে না, থেমে নেইও। নতুন মুদ্রিত বই ও পত্রিকা প্রকাশ করা সম্ভব না হলেও, আন্তর্জালে লেখা প্রকাশ, পত্রিকা প্রকাশ, এমনকি বই প্রকাশও প্রতিদিন হয়ে চলেছে। আর এখানেই প্রশ্ন এসে দাঁড়াচ্ছে, করোনাজনিত সংকট কবে দূর হবে আমাদের জানা নেই, স্তিমিত হলেও পরিস্থিতি কেমন হবে তাও আন্দাজ করা যায় না, আর সেক্ষেত্রে কি মুদ্রণ ব্যাপারটা মুলতুবি রেখে আমাদের আন্তর্জালের ওপরই পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হবে? মুদ্রিত বই ও পত্রিকা প্রকাশের কোনো প্রয়াস ও পরিকল্পনা করা যাবে না? আগামী কলকাতা বইমেলাকে উপলক্ষ্য করে আমি ‘কালিমাটি’ মুদ্রিত পত্রিকার একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশের কথা মনে মনে ঠিক করে রেখেছি। কিছু কিছু কাজও শুরু করেছি। কিন্তু আদৌ বুঝে উঠতে পারছি না, তা প্রকাশ করা সম্ভব হবে কিনা! প্রকাশ করা সম্ভব হলেও তা বিপণন করা সম্ভব হবে কিনা! আর আগ্রহী পাঠক-পাঠিকাদের হাতে তা যদি তুলে দিতেই না পারি, তাহলে তা মুদ্রণ ও প্রকাশ করেই বা কী লাভ? এর আগে অনেকের অভিমত জেনেছি, অদূর ভবিষ্যতে নাকি সাহিত্য আর মুদ্রণের অপেক্ষায় থাকবে না, পুরোপুরি অনলাইনেই প্রকাশিত হবে। আর তাই যদি সত্যি হয়, তাহলে এই করোনা ভাইরাসের বিশ্বব্যাপী সংক্রমণ কি  অনুঘটকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে সেই সত্যকেই ত্বরাণ্বিত করে তুলল? আমার সাহিত্য-সহযোদ্ধা বন্ধুদের তাঁদের এই বিষয়ে সুচিন্তিত অভিমত জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।


আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা : 
kajalsen1952@gmail.com / kalimationline100@gmail.com 

দূরভাষ যোগাযোগ :           
08789040217 / 09835544675 

অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ :
Kajal Sen, Flat 301, Phase 2, Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main Road, Pramathanagar, Jamshedpur 831002, Jharkhand, India.

৩টি মন্তব্য: