সোমবার, ১৫ জুন, ২০২০

বিশ্বজিৎ দেব



কবিতার কালিমাটি ১০১




সন্ধ্যার ইলিউশন 

একটি নিদ্রাহীন অরবীট ধার করে আনছে ঘুমের গল্প, গল্পের ভেতর  নিখোঁজ পৃথিবীর শ্যাওলা, পানাফুল, নিরুদ্দেশ সফেনের মতো শেষ রাতে ঠোঁটের নিকষ স্বস্তির শ্বাসবায়ু, ভেজা কার্বন
বিয়োগের পলিথিন

গল্পের রেশ ধরে এসে জড়ো হচ্ছে এসবের পচনের ঘোর - যে পথে সন্ধ্যা আসে

গ্রামের একমাত্র মানতের থানে নিভু নিভু আলো, চামড়ায় ঠান্ডা সর্পভ্রমের স্মৃতি
দূর পথে একটি রেলওয়ে ক্রশিং প্রায়ান্ধকার থেকে ভাগাভাগি দূরত্বফলক

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন এসবের পাশের টেবিলে এসে বসেছে একটি নামহীন  উপক্রমণিকা
গা ঘেঁষে নিঃসীম পতনের ধ্বনি, সামান্য আঁচেই নিজেকে জুড়িয়ে নেবার আগে মাথা তুলছে একটি ফুটন্ত বুদবুদ, দেয়ালে আলোর হিজিবিজি যে আমার গরিব শরীর, ছাঁচঘর

সন্ধ্যায় আকাশের দিক থেকে তাঁকে দেখা যায় - ফুরিয়ে যাওয়া রকেটের দাগ রাঙামাটি, কোলাজের ফ্রেমে বায়ুকোণ জলীয়বাস্প স্মৃতি... সন্ধ্যায় আকাশের দিক থেকে তাঁকে দেখা যায
জ্লন্ত মাস্তুল... পাটাতন ছেড়ে চলে যাওয়া সাঁকো... কথার উল্টো পিঠে একটি রূপকথা... মায়া ছেড়ে ভেসে ওঠা কুমিরের ছাল

কারা তবে এসে গান করেছিলো
নিমিলিত শব! চির শৈত্যপ্রবাহ মোড়ানো নৌকোর ফেরি, চাপা থার্মোকল
অস্থির তাপমান থেকে ক্রমশ বিলীন মেরুপ্রদেশের ধ্বস, ষড়ঋতু, খাঁচার অক্সিজেন... কারা তবে এসে গান করেছিলো, মরা নদী, বিলম্বিত লয়...

ঘুমের গল্প থেকে এসবই ধার করে আনা-
রাতপোড়া বিবর্ণ ম্যামথ ডেকে এনে যাকে বসিয়েছি প্রলাপের কষ
ফোঁটা ফোঁটা কফিটেবিলের ঘোর
বিলীন ধোঁয়ার শেষে ছেড়ে চলে যাওয়া আলো... রাতপোকাদের শব

এসব গল্প বলা শেষে
  বুক পেতে বসে আছে  চৌকো টেবিল! মুখ তুলে মাইকার অবচেতনের রঙ! ঘসে ঘসে খড়ি পেন্সিলে তোলা সন্ধ্যার  ইলিউশন... ঝাঁপ দিচ্ছে ঝাঁপিশুদ্ধ সব কোলাহল

গুমটির আলোদের পাশে
এ থেকেই একটি বিষণ্ণ শহর
সন্ধ্যাতারার গল্প ছায়াশিবিরের মাঠ... ছোট ঘুলঘুলি ফুসফুসের নকশার মতো প্রাণকলা
জলের বিরতি...


শ্রাবণ

শ্রাবণের বিচ্ছেদের গান নিয়ে
সন্ধ্যের দাওয়ায় বসেছে
একটি সেলাই মেশিন,
খট খট আওয়াজের দিকে
নেমে আসছে সুতো
জুড়ে দিচ্ছে অঝোর সাটিন,

বাতাসে আর্দ্রতার তারতম্য অনুযায়ী
তার পাশে এসে বসে
এক নিরুপায় হাতপাখা
খানিকটা উপরিতল নিজের জন্য রেখে
এর দু’দিকেই উপচে পড়ছে জলের মরশুম

শ্রাবণের বিচ্ছেদের টানে কে তাকে বিলিয়ে দিচ্ছে ঢালু, গোটা ভাটিদেশ...
মাছভেরী আর জোয়ারের টান


কার্নেশান

অভিবাদনের নীচে হেঁটে যাচ্ছে টুপি
উড়াল পালক, ক্ষয়যুক্ত আয়ুর ব্যারেল, ক্ষণিক ফুলকি, নভোমুখী নল, নিস্পলক স্যালুটের শেষে

ব্যান্ডের নিঃশ্বাসের তালে
ভঙ্গিমার দৃপ্ত সকালে উড়েছে পতাকা
তাকেও বলেছি ঢেকে রাখো শব
চলো ঘুরে আসি কাঠের দোকানে

আঁশ তোলা বিনিত শরীরে
এতো সব না জেনেই ছুটে এসে বসেছে অয়নস্তর, উল্কির নামাঙ্কিত ভাঁজে নিজেকে ঢালছে স্বেদ, জয়ের বাজনা শেষে
দাঁড়িয়ে রয়েছে ঢাকা কার্নেশান ফুলে!


হাওয়াগাড়ি

হাওয়াগাড়ি চেপে ফুলকিরা আসে
আকাশের মানে ছাই হলে ফিরে চলে যায়
হাতে পেট্রাল বোমা, লাল চোখ, পোস্টারে
ঢাকা পাঁচিলের ইস্কুল

একসময় কি আশ্চর্য শান্ত হয়ে যায় সবকিছু, নাইট সিফটের পর ঘরে ফেরে
আধপোড়া শহরের কতোয়াল

হাওয়ারা ধর্মভীরু
ফুলকির অবশেষটুকু তাই রেখে যায়


রামধনু

ইচ্ছে হলেই তারা উপায়ের কাছে আসে
খুব নীচুঃস্বরে, গোড়ালির খসখসে ধরে
যেরকম চামড়ার অবিকল শেপ, তারা জানে খোসা ছাড়ানোর মতো নিজের
বর্ণালিগুলো শেষ হলে এনে জুড়ে দেবে
নিখুঁত উপমা

বিকেলের আজগুবিগুলো তাই সে
ফিরিয়ে এনেছে গোধুলির রঙ থেকে আলাদা করেছে কারসাজি, রামধনু খুলে
দূরের অস্পষ্ট প্রতীকগুলি এনে বসিয়েছে...




২টি মন্তব্য: