সোমবার, ১৫ জুন, ২০২০

অর্পিতা সরকার



কবিতার কালিমাটি ১০১



জেহাদ 

জঙ্গলে পা ডুবিয়ে  আমি বহুদিন তারাদের কান্না শুনিনি,
মাখিনি বিরহের রাস্তা;
চিবুকের ঠাঁই রাত বিছিয়ে অন্য মেদুর মন পড়িনি
প্রিয়তম ঈশ্বরের জেহাদী উঠোনে বসে...
আজ নিভে যাব।
অনর্গল গুঁড়ো গুঁড়ো অন্ধকারের ছদ্মবেশে
কলঙ্কিনী হব।


রক্তিম

মেঠো ইঁদুর হব, সাধ হয়েছে
তীব্র শস্যের গন্ধ খুঁটে খেতে খেতে
জাতিস্মরের মতো পড়ন্ত বিকেলে কামড় বসিয়ে
রক্ত মাখব...
লাল রং প্রিয় তোমার জানি।


ক্লান্ত

একটা আস্ত রাত পাশে শুয়ে ঘুমোচ্ছে নিঃঝুম
আমি জেগে দুই ঘর সোজা আর এক ঘর উল্টিয়ে
ওম্ বুনছি দুধের সরের মত ঘন।
টের পাচ্ছি রাতেরাও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে আর 
ফিরতে চায় কাঙ্ক্ষিত জঠরে-
মা’কে মনে পড়ে, মায়ের মতো কোনো কোটর অন্তত
খুঁজে ফেরে সারাদিন, সারাদিন পথের মতো হাঁটে
টের পাচ্ছি হাঁটছে এখনও ভীষণ গাঢ় পায়ে--


পুনশ্চঃ

মাথা চোখ নিঃশ্বাস চুম্বন উপড়ে নেওয়ার পরেও
সদ্যজাত আঙুলের মতো পাতা জন্মাবে আর
শিরায় টান দিয়ে কেঁদে উঠবে, স্তন্যপায়ী দাবীতে
ডুকরে উঠে হাতড়াবে চরাচর তন্ন তন্ন করে
এ পাড়া ও পাড়া খুঁড়ে ছিঁড়ে নিংড়ে এনে দেবে জানি
সূর্যধোয়া প্রাণ।


যাচনা

আজ এক মুঠো ভাত দিবি মন?
আলুনি হোক, আধপোড়া গ্রাস দিবি?
দু-এক পালক ঘুম দিবি ভিক্ষায়?
কয়েক জীবন নিঃঝুম খিদে, অন্ধরাতে বেহেস্ত বোনা হয়নি,
খিড়কি উঠোন খাক হয়েছে কবে,
এখন শুধু জানলাটুকু বাকি!
অমলতাস, আজ ফিরিয়ে দিবি নাকি?




৪টি মন্তব্য:

  1. অদ্ভুত এক মায়াবী আবেশে বেঁধে রাখে অর্পিতা সরকারের রক্তিম জেহাদ। ফিরতে চাওয়ার আকুতি আমাদের সবাইকেই কখনো না কখনো ভালোবাসার অমলতাসের কাছে নিয়ে যায়। বিস্ময় ভরা এই বিশ্বস্ত আকুতিই তো বেঁচে থাকার মূল আলম্বন। আরো অক্ষরের প্রত্যাশায় ....

    উত্তরমুছুন
  2. অর্পিতার লেখাগুলো এমন এক একটা অদ্ভুত দৃশ্যকল্প তৈরি করে যে পাঠক নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়। এমন সংবেদনশীল অথচ সুদৃঢ় লেখার ভঙ্গি সত্যিই খুব একটা দেখা যায় না আজকাল।

    উত্তরমুছুন
  3. অদ্ভুত এক রূপকথা যা বার বার করে বেঁচে ওঠার স্বপ্ন দেখায়.. কলমের আঁচড়ে আঁকা রূপকথা গুলো বেঁচে থাকুক ... অমলতাসে ফুল আসুক বারে বারে

    উত্তরমুছুন