কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৫ |
পরিযায়ী বেড়াল
ম্যাজিশিয়ান ঝুলির ভেতর থেকে বেড়ালটা
বের করে রাখল টেবিলের ওপর। কায়দাকানুন দেখার জন্য টেবিলের অন্যপ্রান্তে তিনি চুপ করে
থাকলেন। অনেক সময় চলে গেল। কিছু হচ্ছে না দেখে
তিনি বলে উঠলেন - মরা বেড়ালটাকে টেবিলে রেখে নোংরা করছেন কেন?
মরা! আপনি ভুল দেখছেন। ঠিক করে দেখুন।
তিনি সাবধানে দেখলেন, তবে সন্দেহ গেল
না - বেড়ালটা জ্যান্ত থাকলে নড়ছে না কেন?
জ্যান্ত থাকলে নড়তেই হবে আপনাকে কে বলল?
তাহলে কি হবে? জ্যান্ত থাকলে বুকের কাছটা
ধুকপুক করবে তো, নাকি?
পোষা বেড়াল জ্যান্ত না মরা তাতে কি যায়
আসে? বাধ্য থাকাটা দরকার। অবাধ্য হয়ে লাফিয়ে
আপনার নাক আঁচড়ে দিল সেটা পছন্দ হবে?
অবাধ্য হবে কেন? বরং বললে ল্যাজ নাড়াবে
সেটাই তো দস্তুর, সেটাই চাই। তেমন না করলে সিধে করার ক্ষমতা আপনার আছে, আমার আছে। কিন্তু
আমি নিশ্চিত যে বেড়ালটা মরে গেছে।
অসম্ভব। এটা মরা হতেই পারে না। আমি দেখেছি
ঝুলির ভেতরে এটা এতক্ষণ নড়ছিল চড়ছিল। আমার হাঁটার সাথে দুলছিল।
তবে কি আমি দেখলাম বলে এটা মারা পড়ল?
এ ছাড়া আর অন্য কিছু বলা যায় কি?
বেড়াল কি পরিযায়ী শ্রমিক, রাস্তায় দুলতে
দুলতে এলো আর বাড়িতে পড়তেই দম বেরিয়ে, চোখ উল্টে পড়ে রইল?
পরিযায়ী নিয়ে কিছু বলবেন না। রেল লাইনে
তোবড়ান কোয়ান্টাম রুটির ছবি দেখিয়ে কতো কথা উঠবে। আপনার বেড়াল, আমার বাড়ির কাঁটা খেতো,
এখন আপনাকে ফেরত দিলাম।
মরা বেড়ালে আমার কি প্রয়োজন? শুধু শুধু
টেবিলটা নোংরা করছেন।
প্রয়োজন মতো মারবেন আবার প্রয়োজন মতো
জ্যান্ত করে তুলবেন এটাই তো দরকার।
জানালার বাইরে থেকে কেউ চেঁচিয়ে উঠল
- যখন ইচ্ছে কাঁধের ঝোলাটা ফেলে দেবেন, আবার ভোট এলো তো কাঁধে তুলে নেবেন। এমনি করলে
বেড়ালের মরা অংশটা তো মরেই যাবে, জ্যান্তটাও মরে যায়। বেড়ালের বাঁচার জন্যে খাবারের
দরকার হয়।
তারা দুজনেই চমকে উঠল। ভয় পেয়ে বেড়ালটাকে
ছুঁড়ে ডাস্টবিনে ফেলে তারা জানালার বাইরের লোকটাকে খুঁজে বের করতে ছুটল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন