রবিবার, ১৭ মে, ২০২০

শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী




সমকালীন ছোটগল্প


দাহ


গেল চারদিনে এই ঘরটার আনাচকানাচ মুখস্থ হয়ে গেছে অনুজার। দক্ষিণ দিকের দেয়ালে নীলরঙ চটে নীচের হলুদরঙ গুয়াতেমালার মানচিত্র তৈরি করেছে একটা। উত্তর কোণে আছে মাকড়সার জাল। যখন ও প্রথম এই ঘরটায় এসেছিল, তখন ছোট ছিল। এখন বেশ খানিকটা বড় হয়ে গেছে। ঘরের পশ্চিম দিকে একটা জানালা। লোহার পাল্লা। কাচের শার্সি। ডানদিকের তিন নম্বর শার্সির বাঁদিকের কোণে আড়াই ইঞ্চির একটি সমকোণি ত্রিভুজ হয়ে কাচটি ভেঙে গেছে। আর আছে একটি মশারি, তোষক আর বালিশ। একটি সবুজ বালতি, লাল মগ, গোলাপি তোয়ালে। আর আছে চার্জ ফুরিয়ে যাওয়া মোবাইল। তাড়াহুড়োর মধ্যে চার্জার আনা হয়নি।

ঘরের সঙ্গে লাগোয়া একটি বাথরুম আছে। শোনা যায় আগে এই ঘরে স্কুলের ছেলেমেয়েদের পিটি ক্লাস হতো। পিটি বলে ঘরে বোর্ড টাঙানো নেই। লাগানো থাকলে বেশ হতো। অনুজা আঁকতে ভালোবাসে বরাবর। আঁকিবুকি কাটতো না হয়। এখানকার প্রশাসন খুব তৎপর। নিয়ম করে দুবেলা বাথরুম পরিষ্কার করে যায়। সকালে জলখাবার আসে পাঁউরুটি ডিম কলা। দুপুরে ডিম ডাল ভাত। রাতে রুটি চার পিস। সঙ্গে তরকারি। ঘরে একটা দুশো ওয়াটের বাল্ব আর গাঢ় নীল রঙের সিলিং ফ্যানও আছে। অনুজা দু’সেট সালোয়ার এনেছিল। সেটাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পরে। পশ্চিম দিকের জানালায় জলকাচা করে শুকোতে দেয়। তখন দেখে জানালার ঠিক বাইরে কৃষ্ণচূড়া গাছে ফুল ধরেছে, সেখানে নিয়ম করে সুর তোলে একজোড়া কোকিল। মাঝেমাঝে বিকেল বিকেল একটা ফিঙে এসে বসে জানালায়। রাতে জানালা খোলাই রাখে অনুজা। ওরা একটা মশা তাড়ানোর ধূপ দিয়ে গেছে। অনুজা ধূপের কয়েলের তিল তিল করে পুড়ে যাওয়া দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ে।

এভাবেই চলে গেল চারদিন। অন্যসময় হলে নিঃশ্বাস ফেলবার জো থাকতো না। হঠাৎ অনুজার মনে ভয় হয়। বাবা ঠিক আছে তো? তাকে নিয়ে আসবার সময় একই সাথে বাবাকেও এই বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। শহরের এক নামী হাসপাতালে আইসিইউতে ডিউটি করতো অনুজা। জেনারাল ওয়ার্ডের তুলনায় আইসিইউতে নার্সদের ডিউটির চাপ এমনিতেই বেশি থাকে। তার ওপর হঠাৎ করোনার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তেই কিছু কিছু স্টাফ নিয়মিত আসতে পারছিল না হাসপাতালে। ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যারা জেলা থেকে আসছিলেন, তাঁরাও আসা বন্ধ করতে বাধ্য হলেন। অনুজার টানা বাহাত্তর ঘন্টা ডিউটি পড়ে গেল। সঙ্গী শেফালি কেরালার অধিবাসী। প্রচুর পরিশ্রমী। অনুজা আর শেফালি হাতে হাত মিলিয়ে ডাক্তারবাবুদের রাউন্ড, সময়মতো ফিভারচার্ট মেলানো, ওষুধ দেওয়া, নার্সিংহোম সুপারভাইজারকে সামাল দেওয়া চালিয়ে যাচ্ছিল। ঠিক এমনই সময় একটি রোগী খারাপ হয়ে গেল চোখের সামনে। তার সামনে দাঁড়িয়ে ডাক্তার দত্তকে এতো অসহায় এই সাতবছরের কেরিয়ারে একবারও দেখেনি অনুজা। কত জটিল পরিস্থিতির সামাল দিয়ে দিয়েছেন তিনি শুধুমাত্র মেধা আর উপস্থিত বুদ্ধির জোরে। এই আইসিইউ-এর ইনচার্জ তিনিই। সেদিন তাঁকেও মনে হলো যুদ্ধে পরাজিত সৈনিক। রোগীর রিপোর্ট পজিটিভ আসতেই অনুজা শেফালি ডাক্তারবাবুসহ সপরিবার সকলকেই পুলিশ কোয়ারেন্টাইন করে দিল। এই শব্দটা এর আগে অনুজা শুধু পাঠ্যপুস্তকে পড়েছিল। আজ সচক্ষে দেখলো। তার পরিবার বলতে শুধুই বাবা। মা গত হয়েছেন বছরখানেক  আগেই। সেই শোকে বাবার হাল্কা একটা স্ট্রোকও হয়ে গেছে। আর অরিন্দম! সে এখন অতীত। মাত্র দু’বছরের সম্পর্কে অরিন্দম তাকে জানিয়ে দিতে পেরেছিল নার্স  মানেই রোগীর জন্য বলিপ্রদত্ত। তার নিজস্বতা থাকলেই সেটা ব্যক্তিগত জীবনে রেখা ফেলবেই। অরিন্দম তাকে কাজটা ছাড়তে বলেছিল। সে আইটিতে আছে। মোটামুটি রোজগার। তবু অনুজা তার পেশাকে ছাড়তে পারেনি। তার বুকের মধ্যে একটা ধিকধিক আগুন আছে। অরিন্দম আদর করার সময় সেটা বুঝতে পারেনি।

অনুজাকে যখন এখানে আনা হয়, তখনই ওর বাবাকেও নিয়ে আসা হলো। বাড়ি এক হলেও ঘর আলাদা। তবে রোজ সকালে যে ছেলেটা জলখাবার দিয়ে যায়, ওর নাম সমীর। ও অনুজাকে ওর বাবার খবর এনে দেয়। হাসপাতালের সেই রোগীটা বাঁচেনি। আর সঙ্গে সঙ্গেই তাদের সকলের লালা নমুনার রস চলে গেছে পরীক্ষার জন্য। বাবা সারাদিনে অনেকগুলো ওষুধ খায়। তার ওপর আবার মা চলে যাবার পর একটু একটু ভুলোমন আর অবসাদ চেপে বসেছে। এই সময়টা খুব ছোটবেলার কথা মনে পড়ছে অনুজার। একবার সে বায়না ধরলো। তখন তার বয়স পাঁচ কি ছয়। সাইকেল চালানো শিখবে। বাবা পোস্টঅফিসে কাজ করতেন। টাকা জমিয়ে একদিন কিনেও আনলেন সাইকেল। তারপর অনুজার অগ্নিপরীক্ষা। ব্যালান্স রাখবে কী করে? বাবা বললেন, ভয় নেই, তুই প্যাডেল কর, আমি ধরে আছি। নিশ্চিন্তে প্যাডেল করতো অনুজা। একদিন বেশ খানিকক্ষণ চালানোর পর পিছন ফিরে দেখলো বাবা দূরে দাঁড়িয়ে। কখন ছেড়ে দিয়েছে সাইকেল। দেখামাত্র পড়ে গিয়েছিল সেইদিন। পরে বাবা বলেছিল, আসলে কি জানিস? ইচ্ছাশক্তি আমাদের যে কাজ করাতে পারে, তা কিন্তু আর কেউ পারে না। সবসময় জেনে রাখবি তোর ইচ্ছাশক্তিই তোর কনফিডেন্স। বাবার সাপোর্টটা নয়। অরিন্দমের সঙ্গে ব্রেকআপটা মেনে নিতেও তাই অসুবিধে হয়নি অনুজার। বাবা পাশে ছিল সবসময়। সেই বাবা একলা ঘরে কী করছে কে জানে? রেডিওটা চালাতে দিচ্ছে তো ওরা? ওটা ছাড়া তো বাবা থাকতে পারে না!

পঞ্চম দিন সকালে সমীর জানালো নমুনা পরীক্ষার ফলাফল এসে গেছে। তার ও বাবার, দুজনেরই ফলাফল পজিটিভ। তার মানে চোদ্দ দিন এখানেই থাকতে হবে তাকে। তবে সমীর অনুজার দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়ে বলে গেল তার বাবার জ্বর এসেছে। শরীর ভালো নেই। কাশি হচ্ছে একটু একটু। আর খাওয়াদাওয়া করছেন না। তার কথা জিজ্ঞেস করছেন বারবার। একবার কি যাওয়া যায় না তার কাছে? একই বাড়ির মধ্যেই তো। সমীর সে কথার জবাব দিতে পারলো না। সামান্য ঠিকাকর্মী সে। তবে অনুজার উৎকন্ঠা মনে হলো তাকেও স্পর্শ করেছে। তাই বলে গেল পুলিশের এসআই দুপুরে রাউন্ডে এলে একবার বলে দেখবে। বাবার জ্বর? নাকি অবসাদ? এই ঘরের নীচের তলাতেই কী বাবা আছে? একবার জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে ডাক দিলে কেমন হয়? দুপুরের খাবার খেতে মন করলো না একদম। এই সময়টা ঠিক তার তিনতলার ঘরের নিচে দুটো কুকুর দাঁড়িয়ে থাকে। অনুজাই একটু একটু ভাত ফেলে দেয় তাদের জন্য। আজ পুরোটাই দিয়ে দিল। তারপর সমীরের জন্য অপেক্ষা করে রইল। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেল। তবে কী পুলিশ এসআই আজ এলেন না রাউন্ডে? বা ডাক্তারবাবু? সমীর কি ভুলে গেল?

সমীর যে ভোলেনি তা অনুজা জানতে পারলো রাতে। খাবার দেবার সময় আজ সেই এসেছিল। বলল, বাবার হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে গেছে ওরা। কয়েকটা কাগজে সইসাবুদ করাতে আসবে কাল। কিন্তু হাসপাতালে দেখতে যাবার নিয়ম নেই। ধপ করে বসে পড়লো অনুজা। এতো কিছু হয়ে গেল, আর সে জানতে পারলো না? বাবার সংক্রমণের জন্য তো সেইই দায়ী। নয় কি? সেইই তো হাসপাতাল থেকে নিয়ে এলো রোগটা! একটা ভয়াবহ শূন্যতা গ্রাস করছিল অনুজাকে। এরপর কী হবে? চোদ্দদিন বাবাকে না দেখে কীভাবে থাকবে সে? তবে কি তার সাধনা মিথ্যে হয়ে গেল? অরিন্দমের কথা শুনে চললে হয়তো আজ তাকে এইদিন দেখতে হতো না। রাত কেটে গেল মাকড়শার জাল বুনতে বুনতে। আজ বৃষ্টি পড়ছে মৃদু। আলতো ভিজে যাচ্ছে তার পা। অন্ধকার করে দিল ঘর। বাবার ওষুধগুলো ওরা নিয়ে গেছে তো? ভাবতে ভাবতেই আরো একটা রাত কেটে গেল। পরদিন সকালে একটা ফর্ম নিয়ে এলো এখানকার স্বাস্থ্যকর্মী। আপাদমস্তক ঢাকা। যেন ভীনগ্রহের প্রাণী! ফর্মে অনুজার অনুমতির প্রয়োজন। বাবাকে ভেন্টিলেটরে দিতে হচ্ছে। ভেন্টিলেটরে! এতটা অবনতি ঘটে গেল এক রাতে? একবারও কি দেখা যায় না? উত্তরে স্বাস্থ্যকর্মী বললেন, নির্দেশ নেই। তবু সে চেষ্টা করবে। তবে কোনও গাড়ি হয়তো রাজি হবে না তাকে নিয়ে যেতে যেহেতু সে কোভিড পজিটিভ। পলিথিন প্যাকের আড়ালে মুখোশ পরা মানুষটাকে মনে হলো তারই বয়সী একটি মেয়ে। আপাতত প্রার্থনা করা ছাড়া কোনও উপায় তার হাতে নেই। আচ্ছা, প্রার্থনাতে সত্যিই কি কাজ হয় কোনও? নাকি পুরোটাই মানুষের মনের অবচেতন! একধরনের মানসিক প্রতিরোধ। বিপদকে মোকাবিলা করতে নিছক একটি ডিফেন্স?

মন যতই যুক্তির দুর্গ তৈরি করুক, অনুজার সারারাত কেটে গেল প্রার্থনার মধ্যেই। কোনও নির্দিষ্ট বিগ্রহে সেই আর্তি সীমাবদ্ধ রইলো না। বাবা আদর্শবাদী কমিউনিস্ট ছিলেন। ঠাকুরদেবতা মানতেন না। কিন্তু মা মানতেন। ষষ্ঠীতে মেয়ের মা হয়েও উপোস করতেন। বাবার আপত্তি শুনতেন না। আসলে তার ঘরে অনুজা তো ছেলেই! তার সমস্ত কাজ ছেলেদেরই মতো। বাবা অবসর নেবার পর উপায়ও সেই করতো। অনুজা যুক্তির পাহাড় খাড়া করতে থাকে। মনকে বোঝায়। বাবা কোনও নেশা করেনি কোনওদিন। ধূমপান পর্যন্ত না। তার বাবার প্রতিরোধক্ষমতা কম নয়। ঠিক রুখে দেবে এই বিপদ। ভেন্টিলেটর মানে তো প্রেসার কন্ট্রোল মোডও হতে পারে। বা বাইপ্যাপ। প্রাথমিকভাবে রাখছে। পরে খুলে দেবে। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে অনুজা। তার লম্বা চুলে আঙুল পেঁচাতে থাকে। ফের খুলে দেয়। আবার পেঁচায়। আজ বৃষ্টি নেই। থমথম করছে রাত। শেফালি কেমন আছে? আর সেই ডাক্তারবাবুরা? তার বাবাই বা কেন? বিধির বিধান না ঈশ্বরের ষড়যন্ত্র! ভাবতে ভাবতে তন্দ্রা আসে। রাতের খাবার খাওয়া হয়নি। ক্ষিদে নেই। এরা রাত হলে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। জানালা থেকে ঝাঁপ দিলে কেমন হয়। তারপর বাবার কাছে দৌড়? ভাবতে ভাবতে ছোটবেলার লুকোচুরি এক্কাদোক্কা মনে পড়ে যায় অনুজার। বাবার কথা ভাবতে ভাবতে ঘুম এসে যায় অবশেষে।

সকালবেলা একটা অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া গেল। এখানকার মানুষজন জোগাড় করেছে। অনুজাকে বিশেষ পোশাক পরতে হলো। হাতে দস্তানা আর মুখে মুখোশ। এছাড়া উপায় কি? এই রোগের সংক্রমণ তো এইভাবেই ছড়ায়। বাবা এখন কেমন আছে কেউ বলতে পারলো না তাকে। সকলের মধ্যেই ব্যস্ততা। চোখেমুখে চাপা উদ্বেগ আর ভয়। সেই ভয় পলিথিনের সরু চাদর ভেদ করেও বাইরে বেরিয়ে পড়ছে। গাড়ি ধেয়ে চলল বাইপাস ধরে। এতদিন বাদে সেই ঘরের বাইরে যেন মুক্ত আকাশের স্বাদ। গাড়িতে একজন পুলিশ ও একটি স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। পুলিশটি অনুজার বাড়ির ঠিকানা জানতে চাইলো। প্রথমে তাকে বাড়ি যেতে হবে। বাবার আধারকার্ড ভোটার কার্ড কিছু একটা লাগবে। হাসপাতালের নথিপত্রর কারণে। তারপর হাসপাতালে যাবে তারা। অনুজাদের বাড়ি বেলেঘাটা মোড়ের কাছেই। এই ক’দিনে চেনা শহর কেমন অচেনা হয়ে গেছে। পথেঘাটে কোনও যানবাহন নেই। দোকানপাট বন্ধ। ফুটপাতগুলোও শুনশান। ঘর খুলে অনুজা আলমারি খুলল। বাবার লকারে এর আগে কখনো তাকে হাত দিতে হয়নি। লকারের চাবি বাবা উপরের তাকে একটা ডায়রির মধ্যে লুকিয়ে রাখতো, সেটা অনুজা জানে। লকার খুলতেই বাবার আধারকার্ড মিলে গেল। দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে আসতেই সঙ্গে থাকা স্বাস্থ্যকর্মীটি তাদের বারান্দা দরজা সমস্ত কিছু স্প্রে করে দিলেন। অনুজা দেখলো আশপাশের বাড়ির জানালা আধখোলা। তার আড়ালে থাকা বেশ কয়েকটি চোখ তার প্রতিটি আচরণ মেপে চলেছে। যেন সে কোনও ফাঁসির আসামি। অপরাধী। গাড়ি এবার হাসপাতালের পথে পাড়ি দিল।

হাসপাতালে পৌঁছে দূর থেকে কাচের ওপারে অনুজা দেখতে পেল নীল প্লাস্টিকে মোড়া একটা দেহ। সিস্টার তার বাবার আধার কার্ডটা নিয়ে ডাক্তারবাবুকে দিলেন। তখনও অনুজা জানে না ওই প্লাস্টিকে মোড়া দেহটা তার বাবার। আজ সকালেই তিনি চলে গেছেন চিরতরে। অনুজা জানে না, নাকি তার মনে অবিশ্বাস! একবারও বাবাকে শেষবারের জন্যও দেখতেও কি পারবে না সে? অনুমতি মিলল না। সে শুধু বাবার আধার কার্ডটা ফিরে পেল। শ্মশানে যাবার অনুমতি নেই। অনুজা দেখলো তার বুকের মধ্যে একটা পাথর বেড়ে উঠছে। সেই পাথর ক্রমশ বড় হতে হতে তার ধিকধিক করতে থাকা আগুন নিভিয়ে দিচ্ছে। যেন শ্মশানযাত্রার পর পড়ে থাকা পোড়া কাঠের ছাই। কোয়ারেন্টাইনের সেই ঘরে ফেরবার পর অনুজা জানতে পারলো দাহ হয়ে গেলে বাবার ছাই তাকে পৌঁছে দেওয়া হবে। অনুজা কৃতজ্ঞতা জানাতে পারলো না। তার হাতপা অবশ। এই মানুষগুলোর ওপর তার রাগ নেই। অভিমান শুধু। কিন্তু সে বোঝে। এই মহামারী তার বাবাকেই শুধু নয়, একই সঙ্গে দাহ করেছে তাকেও। এখন আর তার মধ্যে সেই যোদ্ধাটি নেই। সে পরাস্ত। অরিন্দমের মতো কোনও জড়বুদ্ধি তাকে রথে তুলে হরণ করে নিয়ে যেতে চাইলে সে বাধা দেবে না আর। ভাইরাস আর শরীরে নেই। সে প্রতিটি মানুষের মনে ঢুকে এক একটি মনের সব দাহ করে চলেছে। তার বাবা সেখানে শুধুই একটা সংখ্যা।












৭টি মন্তব্য: