রবিবার, ১৭ মে, ২০২০

লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল



কবিতার কালিমাটি ১০০



চারুতৃষা

উতল ডাঙার গুরাইকে এ সময়ে জানা দরকার, তার বিড়িটানা ঠোঁটে যে আগুন ছিল তা গ্রীষ্মকাল পোড়ায় - কতটুকু আর সম্বল ছিল তার; শুকনো খটখটে হাতের পাতা - দুর্বাসা মুনির পুরুষতন্ত্র, পাশাপাশি শুয়ে থাকা মিথুন রাশির লাল শালুকের নয়ানজুলি - কিংবা মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র  
নিশ্বাসের শব্দভারে মানুষের ভেতর মানুষ নীরবে বেহালা বাজায়  
মাটি খুঁড়ে পাখি ছেড়ে যতটুক চাষাবাদ - তার ভিতর যুদ্ধের গন্ধ লেগে আছে- নিদেনপক্ষে কিছু প্রাণায়াম আর রামভদ্রপুরের মাঠ থেকে ভেসে আসে চারুচোখ,  অনাস্থা ছড়িয়ে তার কাছেই পাষাণ থেকে মুক্তি চায় অহল্যা -
এককুঁজো জল দান করে -
দুহাত মেলানো চড়াইয়ে পৃথিবীর পথ; উপেক্ষার উর্বর ভূমি জুড়ে ঝিঁঝিঁরাত -  অথচ দারিদ্র্য সীমার নিচে হত্যা করতে চাই নি তাকে - নাম জানো?  অথবা রোদ্দুর থেকে সরাসরি শক্তি সংগ্রহ করে বটপাতা আজও  নিরক্ষর - 


অতুল 

আলো চলে যায় মাস্তুল ছেড়ে 
মেঘ কালো এক আভায় যৌগিক ইচ্ছেগুলি লগি ঠেলে ঠেলে নৌকো নিয়ে যায় সন্ধ্যার লাঙলকাটর ঘাটে  
সাঁকোর গানে পাখি ছটপট করে, নদী পারানোর কথায় স্রোতের বিভাজন  
জল থেকে জলে স্বচ্ছ ছায়াপথ - আলোর উৎরাই আর পরজন্মের স্বর  
বুকে কচুরিপানার বাস্তু ভাসতে ভাসতে রিফিউজি  
পাখিটা ভাবতে থাকে ভাদ্রের  জলফড়িং 

দূরে আরও একটা মাস্তুলের পাখি ভাবে এইসব, বন্যা পড়েছ নিশ্বাসে  
মাঝের সময়টুকু অতুল মাজির  বিসর্গের জলপদ্ম 


তটরেখা 

অশ্বত্থের মাথা থেকে উড়ে যায় মেঘ  
তখন যা হয় - দুরু বুকের থেকে দিগন্ত যেন ঝকঝকে ধূসর এক স্লেট ; বিষণ্ন  স্বরলিপি গায়ে আকাশের  দাগগুলি দূরগামী ক্ষত - অবিকল নদীর নাবাল  
এর মাঝেই নদীপার হয়ে একটা মেসিনভ্যান ঢুকে যায় তটরেখায় - তার চাকায় জীবন ধুলো ধুলো 
বস্তা বস্তা ধান চালান করে দিতে অ্যানাসথেশিয়ার হাত ধরে ঘুম নামে এই দেশে - মুখে কানা মাছি ভোঁ ভোঁ, সত্যকামের শরীর ঠেলে মাঠের জল বেরিয়ে যায়  
মেঘ ভাঙা আশ্রয়ে আপনি ফুঁপিয়ে বলে যান এ কথা - হে প্রাণ 


 নদীপাড়া 

মাছ ধরার সময়টা বাদ দিলেই বয়সের জানালা হাট করে খুলে যায় - 
মাথার ভেতর  তেমনি ঘুরেই চলেছে একটা লাটিম, পুরুষটি হাতপাখা হাতে দাঁড়িয়ে ইউকেলিপ্টাস তলায়, আর স্ব-সহায়ক নারীটি ঝাঁকুনি দিয়ে মাছের মাথা কাটতেই থাকে  - আদমের প্রতারিত হওয়ার গল্প থেকে স্নায়ু উর্বর পদশব্দ, গুমোটে ডানা মুড়ে থাকা ভোটহীন মানুষের মতো পুকুরটা ছটপটে  
গ্রামের নাম নীলকন্ঠপুর  
গ্রামের নাম মঙ্গরাজপুর 
এই পুরুষ এই নারী এই নদীপাড়া কত কত ঢেউ আঁকে বাতাসে, আসেন শক্তি চট্টোপাধ্যায় - নদী নদী নদী 
 তুমি ভেসে যাবে না তো অনিমেষ -  



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন