রবিবার, ১৭ মে, ২০২০

রতি সক্সেনা




প্রতিবেশী সাহিত্য



রতি সক্সেনা’র কবিতা         

(অনুবাদ : মিতা দাশ) 




কবি পরিচিতি : রতি সক্সেনা একাধারে কবি, সম্পাদক, অনুবাদক। ইতিমধ্যে তাঁর পাঁচটি হিন্দি কবিতা সংকলন এবং তিনটি ইংরেজি কবিতা সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া তাঁর অনূদিত বইয়ের সংখ্যা কুড়িটি। তাঁর কবিতা সংকলন আন্তর্জাতিক দশটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তিনি কবিতার ওপর বিভিন্ন গবেষণামূলক কাজ করে থাকেন এবং কবিতা উৎসবের আয়োজনও করেন।



ভেড়া

নারিকেল গাছের ছায়ায়
ওই ভেড়াটা
খুব মজায় আনন্দে চিবুচ্ছে সবুজ সবুজ পাতা
একী হঠাৎ টনটন করে উঠলো
কিছু গোল হলদে পাতা
শুঁকে শুঁকে যাচাই করে দেখলো
কিছু চেনা চেনা গন্ধ
যেমন শহুরে লোহার ভেড়া
চিবুলো... কিন্তু বেমজা, বিস্বাদ
তাও সেগুলো যে সোনালী... চিবুতেই হবে
পেতে যেতে না যেতেই শরীরের রোঁয়াগুলো 
দা ড়িয়ে চমকাতে লাগলো
সোনার মত চকচক করতে লাগলো
এখন খুশি মনে ভেড়াটি চলে গেলো
পাহাড়টার উপর
যেখানে না আছে নারিকেল গাছ
না সাদা কালো মেঘ
না সাগরের তরঙ্গ
না কথাবলা গোল মরিচের লতানো গাছ
ব্যস নিছক মরুভূমি
সাঁ ... সাঁ ... করছে একান্ত 
আবার চিবুচ্ছে গাছের ডালের পাতা
আলাদা হয়ে চলেছে
নিজের বন্ধুদের চেহারা থেকে এক্কেবারে
আলাদা চেহারায় ও বুদ্ধিতে
তাও সে খুশি
কারণ সে এখন দেখতে
ভেড়ার মত নয়।
      

ভাবনা

ওই ভেড়াটার ভাবনাটা একটু আলাদা
নিজের দল থেকে এক্কেবারে আলাদা
অর সঙ্গীরা বলাবলি করে
পাহাড়টা দেবতা
 গাছটা পিশাচ, প্রেত
কিন্তু ভেড়াটার শুধু মনে হত
পাহাড়টার জমি একটু কোথাও উঁচু নিচু
যেমন আমাদের শরীরের নাক কান
গাছেরা আমাদের মতই ভেড়া
ব্যস একটা জায়গায় থেমে আছে
ওর কথাগুলি শুনে সব সঙ্গীরা হাসাহাসি করতো
তখন ভেড়াটা উদাস হয়ে যেত
তারপর সে একদিন দেখলো দ্বিতীয় একটা দল
সবার কাছে কম্প্যুটার
হাতের মুঠোয় মোবাইল ফোন
ভেড়াটার মনে আশা জাগলো
সে ঠিকঠাক ভিসা পাসপোর্ট নিয়ে
দল বদল করলো
আশ্চর্য় সে বেলুনের মত উড়তে শুরু করলো
যখন সে দেখলো যে
আলোয় ভেড়াদের কথাগুলি রকেটের মত উড়ছে
রাতে আবার পাহাড়ে রাখা মাটির টুকরো পুজো করছে
গাছগুলোকে কেটে বেড়াচ্ছে
ও ফুলগুলিকে চিবিয়ে খাচ্ছে
তাই দেখে ভেড়াটি আবারও উদাস হল
সে আবেদন করে ফেললো ভিসা পাসপোর্ট
আবার পুরনো দলে
সামিল হবার জন্য!
        

অশ্রুর কোষ 

একটি অশ্রু
ওর জন্য
যে আপন হল না

একটি অশ্রু
আপন হবার জন্য
অভিনয় করেছে তার জন্য

একটি অশ্রু
নিজের নিজেরই জন্য
বন্ধুত্ব করিয়েছে তার জন্য

অশ্রুর কোষ
ফুরিয়েও গেল।

    
পথ

অর্ধেক পথ
ঠিকানা জিজ্ঞাসা করতেই কেটে গেল
অর্ধেক
গন্তব্য খুঁজতে

গন্তব্য অব্দি
পৌঁছতেই পারিনি কি
হারিয়ে গেল
গোটা পথ।

     
বেঁচে থাকার জন্য

 অক্ষরের মাঝে
একটি পাখি
মেশিনের শব্দের মাঝে
সুরেলা স্বর
এইসব যথেষ্ট নয় কি
বেঁচে থাকার জন্য।

    
এক্ষুনি কেন মরতে যাব 

পায়ের তলায় কিছু সুরসুরির মত
ভূমিকম্প হতেই পারে
যে কোনো সময়

ঘটনার সংযোজনা
আকার দেয়
ভবিষ্যকে
যা কিছু হবে
দেখা যাক না
এক্ষুনি কেন মরতে যাব।



২টি মন্তব্য: