কালিমাটির ঝুরোগল্প ৮৪ |
সন্ধ্যার ফুল
দীপ্তেশের একটি শক্তিশালী
পরকীয়া সম্পর্ক আছে। ভাঙা আয়নার মতো গুঁড়ো গুঁড়ো সম্পর্ক অজস্র তার জীবনে
ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি পৌঁছাতে সেই যে শ্রীজিতা ল্যাজেগোবরে
মাখামাখি হয়ে গেল জীবনের সঙ্গে, তা আর ছাড়ল না। দীপ্তেশের একটাই বক্তব্য, জীবনে
আছেটা কী! কিছুই নেই। ধর্ম ধর্ম করে মানুষ কেমন ভোঁতা হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে বড়লোকদের আর গরীবদের ঈশ্বরভাবনায় আকাশ পাতাল
পার্থক্য। বৈরাগ্যর মধ্যেও পুরুষালী ও নারীত্বের পার্থক্য রয়েছে। লীনা ও তার
মধ্যে কোনো দূষণ সে আসতে দিতে চায় নি। গাছের পাতার ঝরে যাবার স্বভাবে লীনার সঙ্গে
তার দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে, এটাই তার ধারণা।
দীপ্তেশের বৌকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে খুব স্বাভাবিক মুখ ও কণ্ঠস্বর নিয়ে বলে, আসলে পরকীয়াও একটা অ্যাডজাস্টমেন্টের ব্যাপার। বন্ধুরা চোখ পাকিয়ে বলে, ব্যাস এইটুকুই! লীনার মনটা আসলে শান্ত ও উদাসীন হয়ে গেছে। এই সাংসারিক ব্যাপারটার মধ্যে একটা স্থিতিশীলতা আছে। অধিকার আছে। অন্যান্য দায়-দায়িত্ব আছে। মোটা ব্যাঙ্কব্যালেন্স হ্যান্ডেল করা, গাড়ির চাবি ঘোরানো, বেড়াতে যাওয়া, নিজের কন্যার ভালোবাসা এসব ছেড়ে লীনা কোথাও যেতে চায় না। দীপ্তেশ তার শ্বশুরবাড়ির জন্য অনেক করে। লীনাও দীপ্তেশকে চৈত্র সেলের ছাড়টুকু দিয়ে রেখেছে। সন্তান বলতে ঐ এক মেয়ে। সেও তো বিয়ে দিতে বিদেশে উড়ে গিয়েছে। দীপ্তেশ তো ধরি মাছ না ছুঁই পানি টাইপের প্রেম করে। দীপ্তেশ ঝানু উয়োম্যানাইজার। লীনা একে এক শারীরিক দূরত্বে রাখে। সাংসারিক সব ব্যাপারেই লীনা ছড়ি ঘোরায়।
পুঁজির বাণিজ্যিক স্বার্থে পুঁজির বিরোধিতাও এক ধরনের পুঁজি। সুতরাং লীনা কোনো বিরোধিতার মধ্যেই যায় নি। প্রথম প্রথম চেঁচামেচি যে করে নি, তাই নয়, কিন্তু তারপর সব গা সওয়া হয়ে গেছে। আর শ্রীজিতা আসার পর থেকেই লীনা শান্ত হয়ে গেছে। শ্রীজিতা দীপ্তেশের ব্যবসা ও তার সাফল্যকে চূড়ায় তুলে নিয়ে গেছে। এক সন্তান সহ শ্রীজিতা বিবাহবিচ্ছিন্না। বস্তুত লীনার মেয়ে জিয়ানা শ্রী-আন্টি বলতে অজ্ঞান। শ্রীজিতার ঘটকালি সূত্রে দীপ্তেশের মেয়ের বিয়ে হয়ে গেল।
এখন বয়স গড়িয়ে ষাট পেরোল দীপ্তেশ। হঠাৎ করে শ্রীজিতার জরায়ুতে ক্যান্সার ধরা পড়ে। তা বাদ দিতে হবে। শ্রীজিতা দীপ্তেশের সমবয়সী। শ্রীজিতার মনখারাপ পড়া যায় না। হেসে হেসে বলে, যাক্ বাবা! রিলিফ পেলাম সত্যিকারের। আর তোমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বো না। দীপ্তেশ বলে, হ্যাঁ একরকমের রিলিফ বটে। কিন্ত আমার দাবিটা তোমাকে সহ্য করতে হবে। দীপ্তেশ যদিও অনেক দেরিতে লীনাকে জানাল। আশ্চর্য লীনার মুখে কোনো নিষ্ঠুর হাসি দেখা গেল না। মেয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে বলতে মেয়েকে কাটিয়ে লীনা বলল : আমার জরায়ুটা তো কাজে লাগে না। শ্রীকে দিতে পারলে ভালো হতো। দ্যাখো না, এখানে জরায়ু প্রতিস্থাপনের কোনো ব্যবস্থা আছে কিনা...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন