রবিবার, ১৭ মে, ২০২০

শুভ্রনীল চক্রবর্তী




আল্ বিলেক্ : সময়-মানবের উপকথা




এই বিংশ শতকে দাঁড়িয়েও আজ আমরা ভাবতে পারি না টাইম ট্র্যাভেল বা টেলিপোর্ট টেকনলজির কথা। সময় যন্ত্র বা এলিয়ন তত্ত্ব আজও আমাদের কাছে যেন সোনার পাথরবাটি। কিন্তু আজ থেকে একশো বছর আগে জন্মেও এক ব্যক্তি যদি দাবী করেন তিনি ২৭৪৯ সাল থেকে এসেছেন অথবা ধরুন বললেন ১০০০০০ খ্রী পূ: দেখেছেন, তাহলে কী বলবেন? হ্যাঁ, ঠিক আপনাদের মত আমারও চক্ষু চড়কগাছ হয়েছিল এসব শুনে, কিন্তু কী করবো বলুন, বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যকে তো আর এতো সহজে অবমাননা করা যায় না! ব্যক্তিটিকে নিয়ে আরও কিছু গবেষণা করতে যে সব তথ্য উঠে এলো, তা  এককথায় হাড় হিম করা ব্যাপার, কোনো ফিকশনাল কাহিনীর থেকে কম কিছু নয় তাঁর জীবনী। ব্যক্তিটির নাম হলো আল বিলেক।

আল বিলেক্ সর্বপ্রথম সংবাদ মাধ্যমের সামনে আসেন ১৯৮৯ সালে এবং তিনি  ঠিক করেন তাঁর সমস্ত কাজকর্ম ও গবেষণা তিনি জনসমক্ষে তুলে ধরবেন।  আল বিলেক জন্মেছিলেন ১৯২৭ সালে। শৈশবকালের তাঁর সর্বপ্রথম স্মৃতি ছিল  ৯ মাস বয়সের, পরিবারের বড়দিন উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠান চলাকালীন একটা পিয়ানোর উপর তিনি বসে আছেন। তিনি এও বলেছেন, শিশু আল এতই প্রখর  বুদ্ধিসম্পন্ন ছিলেন যে ঐ বয়েসেই আশে পাশের বড়দের সমস্ত কথা তিনি স্পষ্ট বুঝতে পারছিলেন, এমনকি প্রাপ্তবয়স্কদের হাসিঠাট্টাও। অতিমানবীয় বুদ্ধিসম্পন্ন  আল ছোট থেকেই তাঁর বন্ধুদের কাছে ‘ওয়াকিং এনসাইক্লোপিডিয়া’ নামেই বেশী খ্যাত ছিলেন। তিনি হাইস্কুল শেষ করার আগেই একটি ইলেকট্রনিক টেস্টে বসেন এবং একমাত্র আল-ই সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তাঁর প্রখর বুদ্ধিমত্তা দেখে আমেরিকান নেভি তাকে চাকরীর আমন্ত্রণপত্র পাঠায়, সময়টা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর। 

আল ইলেকট্রনিকস ও পদার্থবিদ্যা বিষয়ক বহু ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গবেষণার সঙ্গে যে যুক্ত ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় সমকালীন বিভিন্ন মিলিটারি কন্ট্রাকটরদের সাথে কথা বলে। এবং আশ্চর্যজনকভাবে আল তাঁর জীবনী জনসমক্ষে আনতেই তাঁর বিভিন্ন সহকর্মীরা ধীরে ধীরে প্রকাশ করেন  একস্ট্রা টেরেস্ট্রিয়াল ও সাইকিক অপারেশন (পি.এস.আই অপস) নিয়ে আমেরিকার গোপন গবেষণার কথা ও তাঁদের ভূমিকা। আল বেতার সম্প্রচার ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ধীরে ধীরে জানাতে থাকেন তাঁর সঙ্গে ঘটে যাওয়া একের পর এক আশ্চর্য সব ঘটনা।

তিনি জানান, ১৯৫৬ সালে হাওয়াইতে থাকাকালীন তাঁর দেখা হয় মার্ক হামিল   -এর সঙ্গে যিনি আজকের স্টার ওয়ার্স-এর জনপ্রিয় অভিনেতা। এরকম আরও কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনার মধ্যে সবথেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে মন্টেক প্রজেক্ট নিয়ে, যেটা ছিল গত শতাব্দীর আমেরিকার অন্যতম সেরা গোপন এক গবেষণা ও এটি সংঘটিত হয় মাটির কয়েকশো ফুট নীচে ফোর্ট হিরো, নিউ ইয়র্কে। আল বিলেক জানান এই গবেষণায় যুক্ত থাকার প্রধান শর্ত ছিল এর গোপনীয়তা সর্বোতভাবে বজায় রাখা। তাই মনটেক প্রজেক্টে কাজ করা কালীন তিনি তাঁর  সাধারণ চাকরী করতেন ক্যালিফোর্নিয়াতে ও ম্যাগনেটিক লেভিটেশন সাবওয়ে ট্রেন ধরে লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে মনটেক যেতেন মাত্র দু’ঘণ্টায়। এইভাবে তিনি সারাদিন ক্যালিফোর্নয়ায় কাজ করে রাতে চলে যেতেন মনটেক, আবার পরদিন সকালে একই পথ ধরে চলে আসতেন লস অ্যাঞ্জেলেস, তাঁর সাধারণ জীবন যাপনের উদ্দেশ্যে। ধীরে ধীরে এই সময় সুড়ঙ্গ পুরোপুরি প্রস্তুত হওয়ার পর আল মুহূর্তের মধ্যে তাঁর লস অ্যাঞ্জেলেস-এর ফ্ল্যাট থেকে মন্টেক চলে যেতেন টেলিপোরটেশন-এর মাধ্যমেই। এভাবেই ক্যালিফোর্নয়া থেকে নিউ ইয়র্কে যাতায়াত করতেন সময়যন্ত্রে।

১৯৭০ সালে আল মন্টেক প্রজেক্টের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর হলেন। তাঁর প্রধান দায়িত্ব  ছিল মাইন্ড কন্ট্রোল প্রোগ্রাম অফ্ মনটেক বয়েস অর্থাৎ যাঁরা এই গবেষণায়   সরাসরি যুক্ত বা কোনোরকম সময় অভিযানের সাক্ষী হতে পারেন, এমন লোকদের কনশাস মাইন্ডকে কন্ট্রোলে আনা। এর পিছনেও কারণ ছিল সেই  ইউ.এস সরকারের গোপনীয়তা রক্ষার। এই সময় আল বিলেকের জানাশোনা হয় ডানকান ক্যামেরন ও প্রেস্টন নিকোলাসের সাথে, যাঁরা এই প্রজেক্টের প্রধান প্রোগ্রামার ছিলেন। 

১৯৮০ সাল নাগাদ এই সময়যন্ত্র যখন সম্পূর্ণ রূপে প্রস্তুত হয়ে যায়, তখন আল ও ডানকান এর পরীক্ষামূলক কিছু সময়যাত্রা শুরু করেন। বেশ কয়েকবার এই মন্টেক টাইম টানেল দিয়ে তাঁরা মঙ্গল গ্রহে যান। আল বিলেক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে এও বলেন যে, তিনি এবং ডানকান ১০০০০০ খ্রিস্টপূর্বে গেছেন, এছাড়াও তাঁরা কিছু স্পেশাল টিম নিয়ে বিভিন্ন গ্রহে ঘুরতে  থাকেন, কৃষ্ণবস্তু বা ডার্ক ম্যাটার নিয়ে চর্চার উদ্দেশ্যে। শুনলে অবাক হতে হয়, ১৯৯৪ সালে ‘নিউজ উইক’ ম্যাগাজিনের সাক্ষাৎকারে বলেন যে, তাঁরা শুধু  অতীত বা বর্তমান সময়ের বিভিন্ন গ্রহেই নয়, বরং হাজার হাজার বছর ভবিষ্যতেও ঘুরে এসেছেন। 

১৯৮৮ সালের জানু়ারিতে ‘দা ফিলাডেলফিয়া এক্সপেরিমেন্ট’ সিনেমাটি দেখার পর আল বিলেকের জীবনে এক আমূল পরিবর্তন ঘটে। ধীরে ধীরে জানা যায় প্রৌঢ় অবস্থায় তিনি দীর্ঘকাল যাবৎ এমনেশিয়ায় ভুগছেন এবং এই সিনেমাটি  দেখার পর থেকে তাঁর আস্তে আস্তে সমস্ত স্মৃতি ফিরে আসতে থাকে। তারপর  ডানকান ও প্রিস্টনের সঙ্গে কথা বলতে বলতে তিনি বুঝতে পারেন, তিনিও ১৯৪৪ সালের ফিলাডেলফিয়া এক্সপেরিমেন্ট-এর সাথে গভীরভাবে যুক্ত ছিলেন। আশ্চর্যজনকভাবে আলের সমস্ত স্মৃতি ফিরে আসার পরপরই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন ড. জন ভন নিউম্যান, ফিলাডেলফিয়া এক্সপেরিমেন্ট-এর অন্যতম কান্ডারী। তিনি এসে আলকে বলেন, “আমি বলেছিলাম এড তোমার  সঙ্গে দেখা করতে আসবো তোমার সব স্মৃতি ফিরে এলে, আমি জানতাম এড ক্যামেরনের স্মৃতি একদিন ফিরবেই”।

(ক্রমশ)  





1 টি মন্তব্য: