মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২০

আলম তৌহিদ




জগত সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টির গল্প   


         


 (২)


বিভিন্ন পুরাণে সৃষ্টি সম্পর্কে অনেক বিবরণ পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে আদিতে ঈশ্বর পুরুষ এবং প্রকৃতিতে বিভক্ত হন। প্রকৃতি স্তত্ব, রজঃ ও তমঃ এই তিন গুণবিশিষ্ট। সৃষ্টির আদিতে ঈশ্বর প্রথমে মহতত্ত্ব বা বুদ্ধিতত্ত্ব সৃষ্টি করলেন। মহতত্ত্বের সাথে দ্রব্য-ক্রিয়া-জ্ঞান সংযোজন করে অহংকার-তত্ত্ব সৃষ্টি করলেন। তিনি সাত্মিক অহংকার থেকে দিক, বহ্নি, অর্ক, চন্দ্র, বায়ু, অশ্বিনীকুমার, ইন্দ্র, উপেন্দ্র, মিত্র ও প্রজাপতি এই দশ দেবতা সৃষ্টি করলেন। মন, দশ ইন্দ্রিয়, জ্ঞানশক্তি ও ক্রিয়াশক্তি সৃষ্টি করলেন রাজসিক অহংকার হতে। তামসিক অহংকার হতে সৃষ্টি হল ক্ষিতি, অপ, তেজঃ, মরুৎ ও ব্যোম। এদের গুণ থেকে সৃষ্টি হল শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস এবং গন্ধ। মহতত্ত্ব হতে পঞ্চ-মহাভূত পর্যন্ত সকল বস্তু মিলিত হয়ে একটি হিরণ্যময় অণ্ড বা ডিম্বে পরিণত হলো। এই ডিম্বে ব্রহ্মা অবস্থান করলেন। এই ডিম্ব থেকেই বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি হয়েছে। ডিম্বের উপরিভাগ থেকে সপ্তলোক ও নিম্নভাগ থেকে সপ্ত-পাতাল সৃষ্টি হয়েছে। এরপর ব্রহ্মা ক্রমে ক্রমে দশ দিক, কাল, মন, বাক্য, কাম, ক্রোধ ও রতি সৃষ্টি করলেন। প্রজা সৃষ্টির জন্য ব্রহ্মা নিজ মানস হতে মরীচি, অত্রি, অঙ্গিরা, পুলস্ত্য, পুলহ, ত্রুতু এবং বশিষ্ঠ এই সপ্তঋষি সৃষ্টি করলেন। এরপর তিনি বিদ্যুৎ, অশনি (অগ্নি), মেঘ, ইন্দ্রধনু, পক্ষীকুল ও পর্জন্য সৃষ্টি করলেন এবং যজ্ঞকার্য সম্পাদন করার জন্য সৃষ্টি করলেন বেদ।

ব্রহ্মার মানসপুত্রগণ প্রজার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে না পারায় তিনি নিজ দেহ দ্বিখণ্ডিত করলেন। তাঁর দেহের একখণ্ড থেকে মনু নামক পুরুষ এবং অপর খণ্ড থেকে শতরূপা নামক নারীকে সৃষ্টি করলেন। মনু ও শতরূপা থেকেই মানুষের বংশবৃদ্ধি হতে লাগল।

ব্রহ্মাণ্ড যিনি সৃষ্টি করেছেন আমরা তাঁর নাম পেয়েছি ব্রহ্ম বা ব্রহ্মা। নামটা যথাযত হলেও তিনি সৃষ্টিকর্তা হিসেবে সয়ম্ভু নন। কারণ তাঁকে সৃষ্টি করেছেন বিষ্ণু (নারায়ণ)। বিষ্ণু পুরাণে আছে, সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা, পালনকর্তা বিষ্ণু ও সংহারকর্তা মহেশ্বরের (শিব) সাথে যুক্ত হয়ে এক ত্রিমূর্তি গঠন করেন। এখানে আমরা ব্রহ্মাকে পাই সৃষ্টিকর্তা হিসেবে, বিষ্ণুকে পালনকর্তা এবং মহেশ্বর বা শিবকে ধ্বংসকারী হিসেবে। ব্রহ্মার জন্ম হয়েছে বিষ্ণু বা নারায়ণ থেকে। কল্পের সাগরে শীষনাগের অনন্তশয্যায় শায়িত বিষ্ণুর নাভি থেকে জাত ব্রহ্মা পদ্মের উপর বসে আছেন। সৃষ্টির আদিতে বিষ্ণু ছিলেন একা। সৃষ্টির কথা স্মরণ হতেই তাঁর নাভিজাত পদ্মে ব্রহ্মার জন্ম হয়। আর বিষ্ণুর বাম হাত থেকে উৎপত্তি হয় দেবী লক্ষ্মীর। ব্রহ্মা যখন একা সৃষ্টির কাজে অক্ষম হলেন, বিষ্ণুর পরামর্শে শিবের কাছে গেলেন। শিব যোগের মাধ্যমে শিব এবং শিবা এই দুই খণ্ডে ভাগ হয়ে গেলেন। এই শিবাই হলো আদি শক্তি। এরপর ত্রিদেবের একত্রিত শক্তি দিয়ে গ্রহ, নক্ষত্র, জীব ও জড় তৈরি করলেন। বিষ্ণু যখন যোগনিদ্রায় মগ্ন থেকে ব্রহ্মাকে শক্তি দিচ্ছিলেন তখন তাঁর কান থেকে মধু ও কৈটভ নামে দুটো অসুর জন্ম নিল। 

শতপথ ব্রাহ্মণে সৃষ্টিকর্তা হলো প্রজাপতি। তিনিও সৃষ্টির আদিতে একা ছিলেন। তাই তিনি নিজেকে পুরুষ ও স্ত্রী এই দুটি খণ্ডে বিভক্ত করেন। স্ত্রী ও পুরুষ ক্রমে ক্রমে প্রত্যেকটি প্রাণীর দুটি ভিন্ন  প্রজাতি তৈরি করলেন। পুরাণে এই প্রজাপতিকেই ব্রহ্মা বলে বর্ণনা করে হয়েছে।

হিন্দু পুরাণে সৃষ্টির একাধিক গল্প আছে। ঋগবেদের (১০.১২১) সৃষ্টিতত্ত্ব অনুযায়ী সৃষ্টির প্রকাশ হয়েছিল হিরণ্যগর্ভ নামক এক মহাজাগতিক অণ্ডকোষ থেকে। পুরুষসূক্তের মতে (১০.৯০) মতে, দেবতাদের দ্বারা পরাজিত পুরুষ নামক এক অলৌকিক মানবের ছিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে নানা বস্তুর সৃষ্টি হয়েছে। পুরাণে আছে বরাহরূপী বিষ্ণু কল্পের জল থেকে পৃথিবীকে উদ্ধার করেছিলেন।

প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতায় ঈশ্বর হল একজন দেবী (মাদার গডেস)। তিনি শিংযুক্ত ছিলেন। তাকে বলা হত উর্বরতার দেবী।

আমরা দেখলাম শাস্ত্র ভেদে স্রষ্টা ও সৃষ্টির গল্পগুলো ভিন্ন ভিন্ন হয়ে যেতে। মনে হয় ভিন্ন ভিন্ন সময়ের বিভিন্ন জনের হাতে রচিত বলে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। সময়ের সাথে সাথে মানুষের কল্পনারও বিবর্তন হয়, এগুলো তারই দৃষ্টান্ত। যাহোক আমরা আরও স্রষ্টা ও সৃষ্টির গল্পের খোঁজে অগ্রসর হবো। 

আমরা যদি প্রাচীন ইরানের দিকে তাকাই পেয়ে যাব আরও একজন সৃষ্টিকর্তার নাম। তিনি হলেন অহুর মজদা। তিনি জোরওয়াস্টার (Zoroaster) উপর নাযিল করেছিলেন জেন্দ আবেস্তা কিতাবটি। পণ্ডিতদের অভিমত একেশ্বরবাদী এই ধর্মটিতে জোরাওয়াস্টারের মৃত্যুর পরবর্তীতে অগ্নি পুজার কথা অভিযোজিত হয়েছে। এখানে অহুর মজদা হলেন সমস্ত শুভের সৃষ্টিকর্তা, আর আংরামাইন্যু বা আহরিমান অশুভের সৃষ্টিকর্তা। তারা উভয়ে স্বাধীনসত্তা। এখানে সৃষ্টি ক্রিয়ায় দ্বৈতনীতির কথা বলা হয়েছে। প্রতিনিয়ত এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে চলছে অহুর মজদার সাথে আহরিমানের লড়াই। অর্থাৎ শুভশক্তির বিরুদ্ধে অশুভশক্তির লড়াই। যদিও শক্তির দিক দিয়ে অহুর মজদা ছিলেন শ্রেষ্ঠ। তদুপরি আহরিমান বিনাশকারী শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে অহুর মজদার সৃষ্টিশীলতাকে প্রতিহতের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অহুর মজদা তার আলোকিত শক্তি দ্বারা পবিত্র বিশ্ব সৃষ্টি করেছেন। অপরদিকে আহরিমান দুর্ভিক্ষ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বার্ধক্য, অসুস্থতা ও মৃত্যু দ্বারা একে অপবিত্র করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
জেন্দ আবেস্তা কিতাবে আছে-
"এই পৃথিবী ক্রমে ক্রমে ছয় বারে সৃষ্টি হইয়াছে। প্রথমে আকাশ সৃষ্টি হইয়াছিল; দ্বিতীয় বারে জল, তৃতীয় বারে পৃথিবী, চতুর্থ বারে বৃক্ষাদি, পঞ্চম বারে প্রাণি-সমূহ এবং ষষ্ট বারে মনুষ্য।"২ 

অহুর মজদা প্রথমে 'আমেসা স্পেন্টাস' নামে সাতটি বিমূর্ত স্বর্গীয় দেবতা সৃষ্টি করেছিলেন। তারপর তিনি মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছিলেন মন্দকে আটকে রাখার জন্য। অহুর মজদা ভাসমান ডিম্ব আকৃতির মহাবিশ্ব তৈরি করেছিলেন। তিনি একে দুইভাগে সৃষ্টি করেন। প্রথমে তিনি আত্মা (মেনোগ)কে সৃষ্টি করেন। এর তিন হাজার বছর পর সৃষ্টি করেন দেহ (গেটিগ)। এরপর অহুর মজদা প্রথম প্রত্নতাত্বিক নিখুঁত মানুষ 'গ্যায়োমার্ড'কে সৃষ্টি করলেন। তারপর তৈরি করলেন প্রথম ষাঁড়।

যখন অহুর মজদা মহাবিশ্ব এবং মানুষ সৃষ্টি করলেন, আহরিমানের প্রবৃত্তি হল সেসব ধ্বংস করার জন্য। তিনি সৃষ্টি করলেন অশুভ ইয়াজাদ, হিংস্র প্রাণীদের, সর্প, পিঁপড়া এবং মাছিদের। মানুষ ছাড়া প্রত্যেকটা বস্তুর বিপরীতে অশুভ সত্তা সৃষ্টি করেছিলেন আহরিমান। তিনি দেখেছিলেন মানুষের সাথে তার কোন মিল নেই।

আহরিমান আকাশের গোড়া দিয়ে মহাবিশ্ব আক্রমণ করেছিলেন এবং গ্যায়োমার্ড ও ষাঁড়কে যন্ত্রণা দিয়ে মেরে ফেলেছিলেন। মৃত্যুর পর আদিম মানুষ ও ষাঁড়ের দেহ থেকে বীজ নির্গত হল। ষাঁড়ের বীজ থেকে বিশ্বের সমস্ত উপকারী উদ্ভিদ এবং প্রাণী বৃদ্ধি পেয়েছিল। আর মানুষের বীজ থেকে এমন একটি গাছ জন্মাল যার পাতাগুলো প্রথম মানব দম্পতিতে পরিণত হয়েছিল। শয়তানের ফাঁদে পড়ে মানুষকে দুটি ভাঁজ করা মহাবিশ্বের সাথে সংগ্রাম করতে হয়েছিল।   

নবী ইব্রাহীম এবং জোরওয়াস্টার দুজনেই ছিলেন ইরানের আরান বা হারান অঞ্চলের অধিবাসী। জোরওয়াস্টার ছিলেন জাতিতে স্পিতামা আর ইব্রাহীম ইহুদী। *ড. স্পিগেলের মতে উভয়ে সমসাময়িক ব্যক্তিত্ব। জোরওয়াস্টার স্থানীয়ভাবে ধর্ম প্রচার করলেও ইব্রাহীম ধর্ম প্রচারের জন্য দেশ ত্যাগ করেছিলেন। ধর্ম হিসেবে তিনি যা প্রচার করেছিলেন তার অনেক কিছু পাওয়া যাবে জেন্দ আবেস্তা কিতাবে। মূলত তার প্রচারিত মতবাদই ছিল জুডাইজম বা ইহুদীবাদ।
  
ফারাও রাজার সাথে বিরোধে জড়িয়ে নবী মুসা ইব্রাহীমিয় মতবাদকে আরও  উন্নত ও সুসংহত করেছিলেন। এটিই বর্তমানে হিব্রুধর্ম। এই ধর্মের নযিলকৃত কিতাবের নাম তাওরাত। এখানে নবী মুসা আমাদের নতুন কোন জগৎ সৃষ্টিকর্তার সাথে পরিচয় করান নাই। এমন কী ইরানে আমরা সৃষ্টিকর্তা হিসেবে যে অহুর মজদাকে পেয়েছিলেম, ঘুণাক্ষরেও তিনি তাঁর নাম মুখে নিলেন না। মুসা সৃষ্টিকর্তা হিসেবে যার নাম বললেন, তিনি ইয়াহওয়েহ (YHWH), ইংরেজীতে জেহোভা (YHOBHA)নামে পরিচিত। উনাকে আমরা পূর্ব থেকেই চিনি। আদিতে তিনি ছিলেন মাদিয়ানের (সিনাই পর্বতের কাছাকাছি আরবের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল) যুদ্ধ দেবতা। ধারণা করা হয় ইহুদীরা মিদিয়ানে ব্যবসা করতে গিয়ে জেহোভার মূর্তি কেনানে নিয়ে আসে এবং তাদের প্রধান দেবতায় অভিষিক্ত করে। ইহুদীবাদের শুরুর দিকে জেহোভার পিতার নাম ছিল 'এল' (EL), আর মাতার নাম আশেরাহ। কিছু সময়ের জন্য আশেরাহকে তার স্ত্রী হিসেবেও গণ্য করা হত। মুসা কর্তৃক একেশ্বরবাদ প্রচার করার সময়ে তার পিতামাতার মূর্তি ভেঙ্গে ফেলে তাকে লা-শরিক করা হয় এবং দেয়া হয় সৃষ্টিকর্তার মর্যাদা।


নবী ঈসা ছিলেন জাতিতে ইহুদী। তাঁর উপর নাযিলকৃত কিতাবের নাম ইঞ্জিল। ইঞ্জিলের প্রথম অংশ ওল্ড টেষ্টামেণ্ট্‌, যার বেশিরভাগ নবী মুসার উপর নাযিলকৃত তাওরাতের অংশবিশেষ। তিনি আমাদের নতুন কোনো স্রষ্টার নাম জানালেন না। মুসার স্রষ্টাকেই গ্রহণ করে নিলেন এবং দাবী করলেন তিনি জেহোবার পুত্র। খৃষ্টান সম্প্রদায় তাঁকেই প্রভু জ্ঞান করে থাকেন। ইহুদী ও খৃষ্টধর্মে স্রষ্টা ও সৃষ্টির গল্প অভিন্ন। আদি পুস্তকে আছে-
শুরুতে ঈশ্বর আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করলেন। আদিতে পৃথিবী ছিল শূন্য। জলরাশি ছিল অন্ধকারে আবৃত। সেই জলরাশির উপর ভেসে বেড়াচ্ছিল ঈশ্বরের আত্মা। তারপর ঈশ্বর বললেন, 'আলো ফুটুক'! তখনই আলো ফুটতে শুরু করল। আলো দেখে ঈশ্বর বুঝলেন, আলো ভাল। তখন ঈশ্বর অন্ধকার থেকে আলো পৃথক করলেন। ঈশ্বর আলোর নাম দিলেন 'দিন' এবং অন্ধকারের নাম দিলেন 'রাত্রি'। সন্ধ্যা হল এবং সেখানে সকাল হল। এই হল প্রথম দিন।

তারপর ঈশ্বর বললেন, 'জলকে দুভাগ করবার জন্য আকাশমণ্ডলের ব্যবস্থা হোক'। তিনি আকাশমণ্ডলের সৃষ্টি করে জলকে পৃথক করলেন। একভাগ জল আকাশমণ্ডলের উপরে এবং অন্যভাগ জল আকাশমণ্ডলের নিচে থাকল। ঈশ্বর আকাশমণ্ডলের নাম দিলেন 'আকাশ'। সন্ধ্যা হল তারপর সকাল হল। এটা দ্বিতীয় দিন।

তারপর ঈশ্বর বললেন, 'আকাশের নীচের জল এক জায়গায় জমা হোক যাতে শুকনো ডাঙা দেখা যায়'। এবং তা-ই হল। ঈশ্বর শুকনো জমির নাম দিলেন 'পৃথিবী' এবং এক জায়গায় জমা জলের নাম দিলেন ‘মহাসাগর'। ঈশ্বর দেখলেন  ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে। তখন তিনি বললেন, 'পৃথিবীতে ঘাস হোক, শস্যদায়ী গাছ ও ফলের গাছপালা হোক। ফলের গাছগুলোতে ফল আর ফলের ভেতরে বীজ হোক। প্রত্যেক উদ্ভিদ আপন আপন জাতের বীজ সৃষ্টি করুক। এইসব গাছপালা পৃথিবীতে বেড়্রে উঠুক'। আর তা-ই হল।

পৃথিবীতে ঘাস আর শস্যদায়ী উদ্ভিদ উৎপন্ন হল। আবার ফলদায়ী গাছপালাও হল, ফলের ভেতরে বীজ হল। প্রত্যেক উদ্ভিদ আপন আপন জাতের বীজ সৃষ্টি করল এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে। সন্ধ্যা হল এবং সকাল হল। এভাবে হল তৃতীয় দিন।

তারপর ঈশ্বর বললেন, 'আকাশে আলো ফুটুক। এই আলো দিনকে রাত্রি থেকে পৃথক করবে। এই আলোগুলো বিশেষ সভা শুরু করার বিশেষ বিশেষ সংকেত হিসেবে ব্যবহৃত হবে। আর দিন ও বছর বোঝাবার জন্য এই আলোগুলো ব্যবহৃত হবে। পৃথিবীকে আলো দেওয়ার জন্য এই আলোগুলো আকাশে থাকবে'। এবং তা-ই হল। তখন ঈশ্বর দুটি মহাজ্যোতি বানালেন। বড়টি বানালেন দিনের বেলা রাজত্ব করার জন্য আর ছোটটি বানালেন রাত্রিবেলা রাজত্ব করার জন্য। ঈশ্বর তারকারাজিও সৃষ্টি করলেন। পৃথিবীকে আলো দেয়ার জন্য ঈশ্বর এই আলোগুলোকে আকাশে স্থাপন করলেন। দিন ও রাত্রিকে কর্তৃত্ব দেবার জন্য ঈশ্বর এই আলোগুলোকে আকাশে সাজালেন। এই আলোগুলো আলো আর অন্ধকারকে পৃথক করে দিল এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে। সন্ধ্যা হল এবং সকাল হল। এভাবে হল চতুর্থ দিন।

তারপর ঈশ্বর বললেন, 'বহু প্রকার জীবন্ত প্রাণীতে জল পূর্ণ হোক আর পৃথিবীর ওপরে আকাশে উড়বার জন্য বহু পাখি হোক'। সুতরাং ঈশ্বর বড় বড় জলজন্তু এবং জলে বিচরণ করবে এমন সমস্ত প্রাণী সৃষ্টি করলেন। অনেক প্রকার সামুদ্রিক জীব রয়েছে এবং সে সবই ঈশ্বরের সৃষ্টি। যত রকম পাখি আকাশে উড়ে সেসবও ঈশ্বর বানালেন। এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটি ভাল হয়েছে। ঈশ্বর এই সমস্ত প্রাণীদের আশীর্বাদ করলেন। ঈশ্বর পাখিদের সংখ্যা বৃদ্ধি করলেন। সন্ধ্যা হয়ে গেল এবং সকাল হল। এভাবে পঞ্চম দিন কেটে গেল।

তারপর ঈশ্বর বললেন, 'নানারকম প্রাণী পৃথিবীতে উৎপন্ন হোক। নানারকম বড় আকারের জন্তু জানোয়ার আর বুকে হেঁটে চলার নানারকম ছোট প্রাণী হোক এবং প্রচুর সংখ্যায় তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি হোক'। তখন যেমন তিনি বললেন সবকিছু সম্পন্ন হল। তারপর ঈশ্বর বললেন, 'এখন এস, আমরা মানুষ সৃষ্টি করি। আমাদের আদলে আমরা মানুষ সৃষ্টি করব। মানুষ হবে ঠিক আমাদের মত। তারা সমুদ্রের সমস্ত মাছের উপরে আর আকাশের সমস্ত পাখির উপরে কর্তৃত্ব করবে'। তাই ঈশ্বর নিজের মতই মানুষ সৃষ্টি করলেন। ঈশ্বর তাদের পুরুষ ও স্ত্রী রূপে সৃষ্টি করলেন। ঈশ্বর যাকিছু সৃষ্টি করেছেন দেখলেন সবকিছু ভাল হয়েছে। সন্ধ্যা হল তারপর সকাল হল। এভাবে হল ষষ্ট দিন। তারপর সপ্তম দিনে ঈশ্বর বিশ্রাম নিলেন।

(ক্রমশ) 
      
 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন