কালিমাটির ঝুরোগল্প |
কিস’ডে
হরিদাসীর ঘর চক্করপুর। হরিদাসীরা গুলি খাইয়া থাকে।
একদিন সন্ধাবেলা হরিদাসী, ঔরোশীষ, মৌমিতা, মোনালী প্রভৃতি আড্ডাধারী বন্ধুগণ আড্ডায় বসিয়া নিত্যক্রিয়ায় ব্যস্ত ছিলেন। ক্রিয়াটির গুণ এই যে মাঝে মাঝে চুলোচুলি করা চাই, তাহা না হইলে প্রাণে ততটা আয়েশ হয় না।
তাই ঔরো বলিলেন, হরে! আজকাল তোমার যে নেশা কেটেছে বোঝা যাইতেছে। তোমার আধার বেশি মাথা গোবরে ভরা!... তাই দেখি মুখে তোমার একটু কান্তি বাহির হইয়াছে, শরীরে লাবণ্য দেখা দিয়াছে। গায়ে তোমার তেলা মারিয়াছে। যকের টাকা পাইয়াছ নাকি? আগে তো সাদাজলে একটু করা চিনি ফেলিয়া তাতে সোলা ছাড়িয়া দিতে। পরে সে সোলা চাটিয়া লইয়া মিষ্টের স্বাদ অনুভব করিতে।
সঙ্গে সঙ্গে মৌমিতাও বাজখাঁই স্বরে বলিয়া উঠিলেন - বিলক্ষণ! আর এখন দেখো উহার রসোগোল্লাটুকু না হইলে জিভের চাট হয় না।
আরও সকলে সমস্বরে বলিয়া উঠিল – অবশ্যই অবশ্যই এতো সূত্রপাত! হরিদাসী কিসে তোমার কপাল খুলিল? বলি পর্কের গোবর খাইয়াছ নাকি?
হরিদাসী কহিল- হুম। ধান ভানতে শিবের গীত। নরওয়ের এক বিখ্যাত চিত্রকর চিৎকারের ছবি এঁকেছিলেন। আমি ‘আচ্ছে দিনের’ ছবি আঁকছি। কিন্তু কিসে আমার দু’পয়সা হইল, তা তোমাদিগকে বলিতে চাহি না। শুনে যদি দলের মিছিল অথবা শান্তিনিকেতন চলিয়া যাও? তখন আমাদের এই ওষ্ঠাগত প্রাণ আড্ডার কি হইবে?
ঔরো হাসিয়া বলিলেন, হরে তোমার বলিবার আর কিছুই বাকি নাই। তুমি সবই বলিয়া দিয়াছ।
দীর্ঘশ্বাস গোপন করিয়া মোনালী কহিলেন, ‘লবা’!
উপস্থিতসভ্যগণের মধ্যে মনাপাগলা একটু সাহসী গোছের। মনা এতক্ষণ কিছুই কহে নাই। এখন কহিল, -মহাশয় ইহার পূণ্য তো কিছুই নজরে পড়িতেছে না। যা দেখি সবই পাপ। অতি উৎকট পাপ। সুতরাং একথা স্বচ্ছন্দে বলা যায়, মরিবার সময় হরিদাসী মুখে একফোঁটা জলও পাবে না। উপরন্তু যমদূতদিগকে কষ্ট করিয়া ইহার নিকট আসিতে হইবে। সুতরাং এক্ষণেই ইহার মুন্ড ন্যাড়া করিয়া, ঘোল ঢালিয়া গর্ধভ-পৃষ্ঠে উল্টামুখে বসাইয়া নগর হইতে বাহির করিয়া দাও। মরিতে হয়, পথে শুইয়া ওইখানেই মরুক!
তখন সকলে সমস্বরে বলিয়া উঠিল- ওহে হরিদাসী! ওরে ও নেই-আঁকুড়ে! শুনলে তো তোমার একছটাকও পূণ্যি নেই! এইবার?...
নেই-আঁকুড়ে ভাবিল ইহাদের কাহারও হস্তে মুগুর, কাহারও হস্তে ডাঙশ, কাহারও সাঁড়াশি… সকলে মিলিয়া তিরস্কার করিতেছে, গালি দিতেছে। এখন কেবল ভূত হইতে বাকি! আজ কি কোনও বিশেষ পর্ব?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন