রবিবার, ২২ মার্চ, ২০২০

হরিদাসী



ঝুরোগল্প 



আনন্দের খবর


হরিদাসী চলিয়া যাইতেছিল। পিছু হইতে ডাকিলাম, কোথা যাও শোনো, দুটো কথা  শুধাইব। অনাবশ্যক কৌতূহলও বলিতে পারো। তুমি জানো না, তোমাকে  লইয়া দিনরাত কত কী ভাবি। ইচ্ছা হয় তোমার ঐ জ্বলন্ত রূপশিখায় স্বয়ং আত্মবিসর্জন দিই। বাকি তোমার ইচ্ছা।
কথাটা হরিদাসী শুনিল কিনা বুঝিতে পারিলাম না।

প্রথমটা কোনও সাড়া মিলিল না। যেমন চলিতেছিল তেমনই চলিতে লাগিল।  লাগামখোলা জামার বোতাম খোলা একটা উদ্গান্ডু কার্যকারণ তত্বের প্রতি চরম  আকৃষ্ট হইয়া একবার এক যুবতীর সহিত কিছুদিন ঘোর প্রণয়ে লিপ্ত হইয়াছিলাম। পরে সে প্রণয় শুধুমাত্র নেট স্লো থাকার কারণে ফিকে থেকে ক্রমশ ঘোরতর ফিকে  হইয়া যায়। আমার প্রণয় সেই পর্যন্ত। এদিকে বিবাহের বয়স উদ্গম্ভীর প্রায়। এবং  কাহিনী বাংলা  ইংরেজী স্প্যানিসে বহুবার পঠিত ও শতনিন্দিত। এক্ষণে  হরিদাসীর প্রণয় ভিক্ষায়...কাতর কন্ঠে বলিলাম, তোমাকে কি পাইব না? এমন  অসাড় পুরাতন বৈচিত্রহীন সংসারে তুমি বিনা আর কাহাকেও মনে ধরিতেছে না।  যদি তোমার ঐ জলন্ত রূপে শরীর না ঢালিলাম... যদি না পুড়িলাম তবে এ জীবন বৃথা। এই কবিতা-যাপন বৃথা। 

কিন্তু হায়, যেহেতু আলপিন থেকে এরওপ্লেন কিছুই আমার ইচ্ছায় চলে না, এবং এই সংসারের লোক, বল্লাল সেনের এই প্র-পরা-অপ পৌত্ররা এবং তাঁহার নির-দুর-বি-অধি দৌহিত্ররা হরিদাসীর বক্ষের উপর স্বর্ণালঙ্কারভূষিতা, পট্টবসনাবৃতা  জাতি বৈষম্য ও দাঙ্গা ফাসাদের সমাধি গড়িয়া তুলিতেছে, ...হরিদাসীকে বলিতে  বাধ্য হইলাম, তুমি নিশ্চিন্তে আমাকে বিবাহ করিতে পারো। আমাকে বিবাহ করিলে  তোমার মঙ্গল বই অমঙ্গল হইবে না। বিবাহের পর তুমি চিরকাল অমৃত-ভান্ডারে, প্রবাল-পালঙ্কে অনন্ত শয্যায় শায়িত থাকিবে। লক্ষ দাস-দাসী তোমার পদসেবা  করিবে। স্বয়ং চন্দ্র তোমার দর্শনাভিলাষী হইয়া...

হরিদাসী কী বুঝিল কে জানে! লাল রংএর তিনশো বছরের বাড়িটায় সটান ঢুকে  গিয়ে দড়াম করিয়া দরজা বন্ধ করিয়া দিলো। তখনই মোড়ের মাথায় বছরের শেষ  রেপকেসটা শুঁকতে শুঁকতে কুকুরেরা ছ্যা ছ্যা করিয়া এই মর্মে পাড়া মাথায় করিল  যেহেতু তারা কুকুর, তাই ভালো দিন খারাপ দিনের গন্ধ তারা বুঝতে পারে, এবং  শুধু কুকুর জন্মের কারণেই তারা ব্যাঙে্দের মতো কুয়োয় পড়িয়া থাকিতে চায় না।

জানলার ঝিলমিলিটার পাখি তুলিয়া হরিদাসী কহিল, এর চাইতে আনন্দের খবর  আর কী হইতে পারে?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন