ঝুরোগল্প |
বাউকুড়ানি
চারদিক থেইকা কথার ঢেউ উঠে আসতেছে। যেন একটা দরিয়ার
পেটের মধ্যে ক্রমে আমি ঢুইকা পড়তেছি। অথচ আমার ঘুম লাগতেছে রে চোখে। ঘুম জাগতেছে
সারা শরীরে।
বিলীন হয়া যাইতেছি যেন ক্রমেই...
ঘুমঢেউ সরাইতে মোবাইল ফোন হাতে নেই। ধীরেসুস্থে অন
করি। গর্জন থেইকা কান বাঁচাইতে কানে
এয়ারপ্লাগ গুঁজি। মোবাইল ডাটা অন করি। পিরিকপিরিক কইরা নোটিফিকেশন আসে। তিনটা মেসেজ আসে পরপর।
‘তিতাস আম্মা তুমি না খায়া ভার্সিটি গেলা কেন?’
‘তিতাস তোমারে কতদিন বলসি বার
ঘন্টার উপর না খায়া থাকলে গ্যাস্ট্রাইটিস হয়! ও আল্লাহ্! আমাদের কোনো কথাই শুনবা
না?’
‘তিতাস মাস্ক লাগাইসো তো? শোনো মাস্ক ছাড়া কারো সাথে কথা বলবা না। হাত ধরবা না।
মেসেজগুলা পড়ি। পেটের ভিতর পাক দেয় হাসি। আহা কতই না উতলা তারা।
কিন্তু মেসেজের উত্তর তো আমি দিব না। কেননা অর্জিত শিক্ষাআমারে শিখাইতে সক্ষম
হইছে, যে সংখ্যাকে গুণ করা হয় তাকে গুণ্য বলা হয়। যে সংখ্যা দিয়া গুণ করা হয় তাকে
গুণক বলে। গুণ্যকে গুণক দিয়া গুন কইরা যে সংখ্যা পাওয়া
যায় তাকে গুণফল বলে। সংখ্যাকে শূন্য দিয়া গুণ করলে গুণফল শূন্য। অতএব কৃপাকারী গুণ্য, গুণক ও একমাত্র শূন্য তোমাদের কাউরেই আপাতত
গুণফলের প্রয়োজন নাই।
কেন্টিনের মধ্যে আবার একটা হল্লা। কী জানি কী নিয়া
মতবিরোধের ফলে গরগর কইরা উঠে ছেলেরা। একটা টেবিলে চারজন গম্ভীরমুখে পরপর তাস ফেলে। ডিজিটাল যুগে এই তাসখেলা আমারে আনন্দ দেয়। হিহিহি শব্দের ভিতর তখন কাচের চুড়ির রিনঝিন আমার মাথায় বিন্ধা যায়। পয়লা বৈশাখ আসতেছে। মলমল না টাঙ্গাইল, টেরাকোটা না ফুলের গয়না...
এইসব আলোচনাও কানের পাশ দিয়া যাইতে নেয়। তারা কিঞ্চিৎ ভুরু
কুঁচকাইলে আমি হঠাৎ সিধা দাঁড়ায়
যাই। চেয়ারটারে পা দিয়া এক ধাক্কায় সরায়া বইলা ফেলি, জাস্ট ফাক দ্য
ওয়ার্ল্ড...
ফোন এখন এয়ারপ্লেন মোডে। বাইরে আইসা রিক্সা নিব ভাবতেই দেখি খানিকটা দূরে আমার বর্তমান প্রেমিক রাফি তার বাইকটারে যত্ন
কইরা গ্যারেজ করতেছে। তার মুখে মাস্ক। বাইকটারে না চিনলে মাস্ক পরা রাফিরে আমি চিনতে পারতাম
না। কারণ কমবেশি সবার মুখেই এখন মাস্ক। প্যানডেমিক এই সিচুয়েশনে সবাই সচেতন। ব্যাপারটা ভাল্লাগতেছে কিন্তু আমি সচেতন না। আমি জানি, কোভিড ১৯ আমারে নিবে না। নিয়ন্ত্রণ হারানো বাস আমারে নিবে না। কেউই নিবে না। দৃশ্যত আমি অদৃশ্য হয়াই
থাকব। যেমন এখন, রাফি আমারে দেখতে পাইতেছে না। একটা রিক্সায় দ্রুত উইঠা বসি। বলি, মামা নাজিমুদ্দিন
রোড বা সুরিটোলা যেদিক খুশি।
চোখে সানগ্লাস পইরা ঘাড় সোজা কইরা বসি। কিন্তু মিনিট পাঁচেকের মধ্যে আমার ঘাড় হেলতে শুরু করে। চোখভর্তি ঘুমের
তারা। মামারে বলি,
জোরে চালান, সময় নাই। রিক্সা উড়াল দিয়া নাজিমুদ্দিন রোডে পড়ে। আর তখনই একটা বাউকুড়ানি উইঠা আইসা আমারে অজগর স্টাইলে প্যাঁচায়া ফেলে।
এরপর ধুলার ঘূর্ণি অথবা প্রবল ঘুমের ভিতর আমি তলায়া যাইতে থাকি…
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন