শনিবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২০

ময়ূরিকা মুখোপাধ্যায়


মুঠো



মনে আছে, আমার কাছে একটা সময় পনেরোই আগষ্ট ছিল একটা প্রতিযোগিতার  দিন। কার পতাকা জোড়ে উড়বে, আমার না আমার মাসতুতো ভাইয়ের, এই নিয়ে চলতো প্রতিযোগিতা। আবার সেই আমরাই, মামারবাড়ির জানালায় বসে যুদ্ধ বিমান চালাতাম একসাথে। মেঝেতে কঞ্চি নিয়ে গড়াগড়ি খেতাম, যেন যুদ্ধ করছি! ঢিঁসকাও ঢিঁসকাও করে দিতাম শত্রু পক্ষকে। আমার দেশ জিতে যেত। আমরা জিতিয়ে দিতাম।
তারপর ওই তিনটে রঙের ঘাড় ধরে, টুক করে ঢুকে পড়লাম, সাধারণজ্ঞানেরকের দাগের একের প্রশ্নে।  

তারপর ওই তিনটে রং, শচীনের সেঞ্চুরির সময়, আমার গায়ের ঢলঢলে টিশার্টে জাঁকিয়ে বসতো।

ওই তিনটে রংএ আমার আঁকার খাতায় সূর্য উঠতো, ভোর হত। ভোর হত, আমার চিলেকোঠাতেও। আমার দেশ, তখন শেষ দফার ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দূরের আজানের যুক্তাক্ষর যখন আড়মোড়া ভাঙছে সর্ন্তপণে।
মারও তখন, নিরাপদ মাঝরাত্তির। জাগিনি। আজও কি জাগছি?
ইচ্ছে করছে, যখন আজানদের স্লোগান হতে দেখছি। ইচ্ছে করছে, যখন ওই তিনটে রঙের বদলে কালসিটের রং দেখতে পাচ্ছি।

তবুও মনে করতে চাইছি না, 'বিক্ষোভে বিপ্লবে তোমাকে চাই'। তবুও হেঁটে যেতে  চাইছি গলি ধরে। কিন্তু ওদের 'রাজ'পথ বোধহয় বেশী পছন্দের। চলো তাই সই!  
প্ল্যাকার্ড মোড়ানো সভ্যতার কানে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে পাঠ করতে ইচ্ছে করছে, 'নির্ঝরের স্বপ্ন ভঙ্গ'
গুরুদেব আপনি, বুঝি, কালি-কলম নিয়ে জোড়াসাঁকোর বারান্দায় রোদ পোহাচ্ছেন, আর ভাবছেন নিজের সৃষ্টি থেকে একটা শব্দ বাদ দেবেন বলে?
অহরহ তব আহ্বান প্রচারিত / শুনি তব উদার বাণী / হিন্দু বৌদ্ধ শিখ জৈন...  
কিন্তু, ছাতিমতলার ওই দুটো তরুণ-তরুণী, ছিনিয়ে নিচ্ছে আপনার সেই কলম...  ওরা, রক্তবীজ হয়ে, আন্ডারলাইন করছে
তব করুণারুণরাগে / নিদ্রিত ভারত জাগে...
ওই তিনটে রং... ওই তিনটে রংএ আমার আঁকার খাতায় সূর্য উঠতো আমার সন্তানের খাতায় গাছ রোপণ হবে ওই তিনটে রংএ 

কপিধ্বজের মত একদিন বুলডোজার আসবে, ভেঙে দেবে ডিটেনশান ক্যাম্পের ছাদ ছড়িয়ে পড়বে, বুদ্ধং-স্মরণং-গচ্ছামি
সবাই  সেদিন চুপ থাকবে
মানচিত্র শুধু কথা বলবে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন