শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০১৯

সিদ্ধার্থ সিংহ




আর এক হরিশ্চন্দ্র

আগেই ঘোষণা করেছিলেন
ফের জিতলেই স্থাবর-অস্থাবর যা আছে
তিনি সব বিলিয়ে দেবেন। 
দিন-ক্ষণ সব ঠিক
সমস্ত মিডিয়া হাজির
আলোকচিত্রীরা তাক করে আছেন ক্যামেরা
প্রাসাদের বাইরে হাজার-হাজার লোক।
যে লোকটা একদম শূন্য থেকে
আজ এতগুলো শূন্যের আগে একটা ৯ বসিয়েছেন
তিনি তা কী ভাবে বিলিয়ে দেন, তা দেখার জন্য। 
আগেই ঘোষণা করেছিলেন
এ বার জিতলেই তিনি সব বিলিয়ে দেবেন।
সব নয়, যদি তার সামান্য কয়েক শতাংশও বিলোন
তা হলেও, এ দেশের সব ক'টা গণ্ডগ্রামে
                           গভীর নলকূপ বসানো যাবে
অন্তত পঞ্চাশ হাজার স্কুলবাড়ি পাকা হবে
সরকারের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না
                                          অনেক ব্যাপারেই।
ওঁর বাড়ির সামনে হাজার-হাজার উৎসুক লোক
ক্যামেরায় ক্যামেরায় ঠোকাঠুকি
এই তিনি দরজা খুললেন বলে...
সে দিন ভিড়ের চাপে অনেকেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন
পরে জেনেছিলেন, সে দিন তিনি সব উজাড় করে দিয়েছেন
বাড়িঘরদোর থেকে ঘরের আসবাব
এমনকী নীলাখচিত আংটি, মানিব্যাগের খুচরো পয়সাও
সব, সব হরির লুঠের মতো তিনি বিলিয়েছেন
বিলিয়েছেন অন্দরমহলে
আর সেগুলো টপাটপ কুড়িয়ে নিয়েছেন তাঁর বউ
ছেলে-মেয়ে-নাতি-নাতনি।
সে দিন সমস্ত মিডিয়ার সামনে তিনি আবার কথা দিয়েছেন
এর থেকেও অনেক অনেক বেশি আবার তিনি বিলোবেন
তবে আজ নয়, ঠিক পাঁচ বছর পরে।


জানালা 

ঘর বানাচ্ছ, বানাও
মনে করে দুটো জানালা বানাতে ভুলো না।
একটা জানালা দিয়ে ছেলে যাতে উড়ে যেতে পারে
রামধনুর রং মাখতে পারে সারা গায়ে
মেঘের ভেলায় চেপে ভেসে যেতে পারে যেখানে খুশি,
আর অন্য জানালা দিয়ে পা টিপে টিপে এসে
যাতে শুয়ে পড়তে পারে বিছানায়।
ঘর বানাচ্ছ, বানাও
মনে করে দুটো জানালা বানিও।
একটা জানালা দিয়ে এসে
ছেলেকে যাতে বকাঝকা করতে পারো
কষাতে পারো দু'-একটা চড়চাপড়,
আর অন্য জানালা দিয়ে এসে
ঘুমন্ত ছেলের কপালে যাতে চুমু খেতে পারো।
ঘর বানাচ্ছ, বানাও
মনে করে দুটো জানালা বানাতে ভুলো না
আর হ্যাঁ, সেই জানালায় যেন গরাদের কোনও
                                                ছায়া না থাকে...


দেখা

তা হলে কি চৈতন্যদেব এদেরই দেখেছিলেন!
সন্ধে হয়ে গেছে অনেকক
ফিরতে ইচ্ছে করছিল না। 
পেছনে কপিলমুণির আশ্রম
সামনে ধুধু নিকষ কালো অন্ধকার। 
তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ নজরে পড়ল---
পুতুলের মতো সার সার মেয়ে দুধ-সাদা ঘাঘরা কামিজ পরে
হাত ধরাধরি করে নাচতে নাচতে পাড়ে উঠে আসছে। 
এরা কারা! 
গাল টিপে খুব আদর করতে ইচ্ছে করল তাদের। 
একটু হলেই এগিয়ে যাচ্ছিলাম আর কী
আর ঠিক তখনই মনে পড়ল শ্রীচৈতন্যদেবের কথা।
তিনি নাকি এক ঘোরের মধ্যে সোজা নেমে গিয়েছিলেন সমুদ্রে
অতল গহ্বর থেকে আর মাথা তোলেননি।
তা হলে কি চৈতন্যদেব এদেরই দেখেছিলেন! 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন