শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০১৯

অর্ক চট্টোপাধ্যায়




ছায়াচাবি


আমি কিউবিকলে বসে কাজ করছি। লোকটা দুম করে এসে দক্ষিণ আফ্রিকার রেইলওয়ের ম্যাপ আঁকতে শুরু করলো। আঁকছে আর আমায় বোঝাচ্ছে। বিষয়টায় কোন আগ্রহ নেই এমন নয়, কিন্তু বলা নেই কওয়া নেই, হঠাৎ কাজের ব্যাঘাত ঘটায় নিতান্ত বিরক্ত আমি।

কোনওরকমে ভদ্রতার মুখোশ পরে লোকটার আঁকিবুঁকি আর বকরবকর শুনছিলাম।
লোকটাকে আমি চিনি। সহগবেষক। স্বঘোষিত অ্যাসপারজাস সিন্ড্রোম। হাই ফাংশানিং
অটিজম। চাকরী থেকে অবসর নিয়ে গবেষণায় ফিরেছে। মোটের ওপর লোকটা মন্দ না।
কিন্তু তার সঙ্গে কথা বলা বড়ো কঠিন কাজ। কথামাত্রেই বচসা হয়ে ওঠে, লক্ষ্য করেছি প্রায় বছরখানেক ধরে। লোকটার ক্ষেত্রে কথা একজন থেকে আরেকজনের দিকে যায় না। নিজের মুখ থেকে বেরিয়ে সংলগ্ন বাতাসে ঘুরপাক খেয়ে আবার নিজের শরীরে ফিরে যায় সেসকল শব্দ। কোন ডায়ালগ নেই। কেবলমাত্র মনোলগ।

সেমিনার থেকে সুপারভিশন — সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে লোকটার বচসা-শব্দের ফুলঝুরি।
তারপর সেদিন। সহসা শব্দে আমার কিউবিকলে ঢুকে দক্ষিণ আফ্রিকার রেইললাইনের
ইতিহাস ও ভূগোল নিয়ে দীর্ঘ সেই মনোলগ। আমি কথা বলিনি। শুধু শুনেছিলাম।
প্রথমে সে শোনায় বিরক্তি ছিল, পরে অবশ্য খানিক মায়া ধরে আসে।

লোকটা একা থাকে। গুগলে ওর লেখা সার্চ করতে গিয়ে দেখেছিলাম, ওর বৌ-বাচ্চার
নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার খবর। ও আমায় ওর বাড়ির চাবিটা দিয়ে গিয়েছিল। লোকটা
অস্ট্রেলিয়ায় থাকলেও ওর মনোভূমি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। লোকটা সেখানে
রেইললাইন খুঁজতে গিয়েছিল। আমার কাছে সে চাবি এখনো রয়ে গেছে।

1 টি মন্তব্য: