ইউটোপিয়া
গত রাতের মার্জারী বিষাদে তখনও আমার মতি ও মন ভ্যাপসা। বালিশ-বিছানার একান্ন
শরীরের গিঁটে লেগে থাকা আলসেমি উপেক্ষা করে এগিয়ে চললাম আমার ইউটোপিয়
সাম্রাজ্যে। ঝাপসা চোখে চেয়ে
থাকা দৃশ্য দেওয়াল থেকে চোখ নামিয়ে ফিরে এলাম এক
একক কোণে। যেখানে পূবের মুঠো
আলো আর চায়ের উষ্ণতাকে কণ্ঠনালী ও মগজের
প্রত্যন্ত আনচ কানাচে চালান করে কিছুটা হওয়া যায় সুস্থিত। এরপর সাধারণ জৈবিক চাহিদায় ও সং-সারের কুক টপে অনাবিল আনন্দে জাড়িত নুন-হলুদ রঙের বেগুন ও বড়ির মাখামাখি সম্পর্কের তাগিদে আরও কিছুটা হই প্রকৃতিস্থ। দিন এগোলে আর চারপাশের আলো ক্রমশ বাড়লে সমস্ত বিষাদ নতজানু হয় হাঁটু ও পালক ডানার নিচে। ইউক্যালিপটাসের সজীব গন্ধে হলুদ আকাশে পক্ষীকূলের তখন জ্যামিতিক উড়ান। ভরসাযোগ্য কাঠের রেলিংয়ের থেকে ঝুঁকে দেখা যায় শহুরে জন-অরণ্য, ধোঁয়াটে ভুখা পেটের জ্বলজ্বলে আগুন। সাদা রক্তহীন মুখের গহ্বরে শুধু বিষাক্ত লালা, খিদের!
আগুন নেভাতে নিজের স্পর্শহীন ঠান্ডা শরীরেরই অংশ গলাধ:করণ করে, এক বোধহীন
হত্যালীলার জন্যে।
বেশ কিছু সময়ের পরে সব ভিড় সরে গেলে আত্মরক্ষাবাহিনীর ম্যাজিক হোস পাইপ ও
আকাশের পুঞ্জীভূত মেঘের মুষল বর্ষণে সব ক্ষত-বিষ-জীবাণু ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায়।
সবশেষে আবার আমার এই সাম্রাজ্যের একলা কোণে গোপন রাত নেমে আসে, বিষাদময়।
সাক্ষাৎ
এই যে বারবার এভাবে ছুটে যাই বন্ধ দরজার ওপাশে, এক হাঁটু অভিমানের তর্জমা
কাঁধে নিয়ে। বিবিধ পায়ের ছাপ
ফেলে এগিয়ে যাওয়া আর যেতে যেতে পড়ে থাকা
নীল পরশ পাথরের ওপর হোঁচট খেয়ে আছড়ে পড়া।
সেখান থেকেই শুরু সামান্য ছিঁড়়ে যাওয়া শব্দদের হুটোপাটি - হাঁপধরা। কিছুটা সাব্যস্ত
হলে আবার সমন্বয়ের বাঁক ধরে ছুটে চলা।
এই সমস্ত ছোটাছুটি - শ্বাসাঘাত - স্বরনিক্ষেপের মধ্যবর্তী যে আবাসস্থল
সেইখানেই তোমার সুসংবদ্ধ সচেতন বোধ, যার কাছে এসে অসাড়
হয়ে বসি।
নিমজ্জিত হই! গভীর ভান্ডারের উপচে পরা অগাধ করুণা
লাভের পরেই আমার অবিমিশ্র
চেতনা ফিরে পাই।
এক নির্লিপ্ত শব্দপ্রেমিক তখন উন্মনে দৃষ্টি ছুঁড়ে বাতাস খায়! শব্দ ফোটায়!
|
রামধনু
তমালীর বড় ইচ্ছে করে ঐ রামধনুর রঙ থেকে কিছুটা রঙ
নিয়ে ছড়িয়ে দিতে বিবর্ণ অদ্ভুত সমাজের ওপর। রঙের উৎসব তাই ওর বড় প্রিয়, অন্তত ঐ একদিন নড়েচড়ে বেড়ানো প্রজাতি রামধনুর মতো রঙিন হয়ে ওঠে, কোন একঘেয়ে বিশেষ রঙ নয়, অনেক রঙের মিশেলে
হয়ে ওঠে ওরা ঝলমলে।
যেমন প্রজাপতির পাখনায় কত রঙের মিশেল , তমালীর মন উড়ে যায় ঐ রঙিন ডানায় ভর করে কত দূরে, ফুলে ফুলে, বনে-বাদাড়ে।
বন্ধ কামরায় ঐ ছোট্ট জানলা জুড়েই ওর উন্মুখ পৃথিবী - কল্পনার রঙ আর আহ্লাদে আটখানা ভাবনার সংসার।
চারপায়া চেয়ারে বন্দি কাঁপা কাঁপা দু’হাত শুধুই রামধনু ছুঁতে চায়, ক্লান্তিহীন একটা
চেয়ার। এই তো একমাত্র সম্বল
তমালীর।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন