রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

<<<< সম্পাদকীয় >>>>




কালিমাটি অনলাইন / ৭১


আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে আমাদের প্রজন্মের মিল-অমিল ও সম্পর্কের কথা ভাবতে বসে মাঝে মাঝে মনে হয়, আমরা কি আদৌ এই প্রজন্মের চিন্তাভাবনা ও বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে নিজেদের কিছুটা হলেও সামঞ্জস্য রাখতে পারছি? অথবা আমাদের সঙ্গে তারা এবং তাদের সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল হতে পেরেছি? প্রসঙ্গত আমাদের প্রজন্ম বলতে আমি একান্তই আমাদের জন্মের  সময় ধরে গত শতাব্দীর পঞ্চাশ দশকে জন্মের কথা বলছি, অর্থাৎ আমরা যারা ষাটের দশকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে সত্তর দশকের প্রথম ও দ্বিতীয়ার্ধে আমাদের যৌবনের দিনগুলি অতিবাহিত করেছি। বলা বাহুল্য, গত শতাব্দীর এই দুটি দশক বিভিন্ন কারণে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ছিল, তা সে রাজনৈতিক কারণেই হোক  বা সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে। বর্তমান প্রজন্মের সঙ্গে তুলনামূলক বিচারে আমরা সেই সময় অনেক কিছু থেকেই হয়তো বঞ্চিত ছিলাম, বিশেষত তথ্য ও প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে তো অবশ্যইকিন্তু সেই সময় আমরা  যেসব মতাদর্শগত চিন্তাভাবনার সঙ্গে অত্যন্ত নিবিড় ভাবে সংশ্লিষ্ট হবার দুর্লভ সুযোগ লাভ করেছিলাম, তা থেকে বর্তমান প্রজন্ম নিতান্তই বঞ্চিত হয়ে আছে। এসব কথা মনে হচ্ছে, পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে। ৪৭ পরবর্তী ভারতে সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আমরা মুখোমুখি হয়েছি বিভিন্ন মূল্যবোধ ও মতাদর্শের, যার মধ্যে পারস্পরিক বিরোধিতার পাশাপাশি ছিল নিজস্ব চিন্তা ভাবনা ও আদর্শের প্রতি ব্যক্তিগত সম্ভ্রমবোধ ও আস্থা। কোনো বিশ্বাসের প্রতি দায়বদ্ধ থাকার সদিচ্ছা। সততার প্রতি আবেগ ও আগ্রহ। বিশেষত সত্তর দশকের রাজনৈতিক আন্দোলন সেই সময়কে যথার্থই আন্দোলিত ও উদ্বেলিত করেছিল। দিন বদলের স্বপ্নে অনুপ্রাণিত হয়েছিল বিশাল ছাত্র ও যুবসমাজ এবং নির্যাতিত মানুষের একটা বৃহৎ অংশ। একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতি আনুগত্য জানিয়েছিলেন অনেকেই। সেই সময়ে ছাত্র ও যুবসমাজ তাদের একাডেমিক শিক্ষাপর্ব শেষ করে ব্যক্তিগত ক্যারিয়ার গড়ার জন্য লালায়িত ছিলেন না বরং তাঁরা ছিলেন দেশের প্রতি ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ, দেশের কাজ ও সমাজের কাজের জন্য নিষ্ঠাবান। আমরা অন্তত সেই সময়ের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলাম এবং সেই যুগের জন্য গর্ববোধ করি। কিন্তু আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে সেই মূল্যবোধ, আদর্শ, দায়বদ্ধতা সেভাবে খুঁজে পাই না। সমষ্টিভাবনাকে ছাপিয়ে উঠেছে ব্যক্তিভাবনা। ব্যক্তিগতভাবে নিজেদের জীবনকে প্রতিষ্ঠিত ও সুরক্ষিত রাখার জন্য সর্বদাই ব্যস্ত ও যত্নশীল। স্বাভাবিক কারণেই তাই দেশ ও সমাজের প্রতি আগ্রহ এবং সময় কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। আর এই সুযোগেরই দুর্ব্যবহার করে একশ্রেণীর ভন্ড ও লম্পট সমাজবিরোধী ও রাজনৈতিক নেতারা সারা দেশ ও সমাজকে লুটেপুটে খেতে এক বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি করে। গোষ্ঠিদ্বন্দ্ব, জাতিবিদ্বেষ, প্রাদেশিকতা, সাম্প্রদায়িকতা, চুরি, জোচ্চুরি, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, গণপ্রহার, গণহত্যা নিত্য নৈমিত্তিক কর্মসূচি হয়ে দাঁড়ায়। আর আফসোস হয় এখানেই, আমাদের প্রজন্ম যেখানে দিন বদলের আকাঙ্ক্ষায় একটা উজ্জ্বল দিনের স্বপ্নে মশগুল ছিল, আজকের প্রজন্ম সেখানে বাস করতে বাধ্য হচ্ছে অবক্ষয়িত নষ্ট সময়ে। তবু আমরা আশাবাদী, একদিন এই দুঃসময় যাবে কেটে। শিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তীর গানের কথায় উচ্চারণ করা যায় – “একদিন ঝড় থেমে যাবে / পৃথিবী আবার শান্ত হবে”।  

আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা : 
kajalsen1952@gmail.com / kalimationline100@gmail.com 

দূরভাষ যোগাযোগ :           
08789040217 / 09835544675 

অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ :
Kajal Sen, Flat 301, Phase 2, Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main Road, Pramathanagar, Jamshedpur 831002,  Jharkhand, India

২টি মন্তব্য:

  1. এই সময়ের সঠিক ধারাভাষ্য ভালো লাগল।আমরা এখন ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বার্থপর জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি।এর থেকে বেড়িয়ে না এলে দেশ ও দশের মঙ্গল হবে না।

    উত্তরমুছুন