রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

সুবল দত্ত




অমল ও দইওলা                          

গাড়িওলা আয়া ঘর সে কচড়া নিকাল... 
সকাল আটটা। সুধা নামের পাশের বাড়ির বাচ্চা মেয়েটা অমলের জন্যে রোজ ফুল আনেঅমল নাক থেকে মাস্ক খুলে প্রাণভরে সুগন্ধ নেয়। ঠিক এই সময় গাড়িটা গান বাজিয়ে পার হয়। অমলের মন গেয়ে ওঠে। নেচে ওঠে। হাত নেড়ে ড্রাইভারকে ডাকে। আমাকে এই গান শিখিয়ে দেবে গো? - কচড়া গানা শিখে কি করবে বাবুয়া? ততক্ষণে আশেপাশের কাকীমা দিদা দিদিরা আবর্জনা গাড়িতে ঢেলে বিন খালি করে। শুধু অমলদের এপার্টমেন্ট বাদে। অমলের পিসেমশাইয়ের  ঘর গ্রাউন্ড ফ্লোরে। জানালার খুব সামনে ছোট বাউন্ডারি। সেখানে যখন তখন ওপরতলার সবাই ছুঁড়তে থাকে আবর্জনা। ধপ ধপ ধপ। বাসি ভাত ডাল মাছ মাংসের হাড় দুর্গন্ধ পলিথিন। কুকুর আসে। শুঁকে চলে যায়। অমলের বমি পায়। কিন্ত জানালা ছাড়ে না। অবশেষে দূর থেকে ডাক শুনতে পায়। দহি ই ই ই... দইয়ের হাঁড়ি ঝোলানো বাঁক কাঁধে এক হাতে নাক চিপে আবর্জনা ডিঙ্গিয়ে  দইওলা আসে। - কইসে হো বচুয়া? তবিয়ত ঠিক বা নু? ডগদর সাহাব আইল বা কি নহি? অমল উত্তর দেয়। কঠিন কিডনি রোগ। দুষণের শিকার। ওইটুকুন ছেলে অমল সে কথা জানে। ও দইওলা! পোস্ট অফিসের পিওনকে সঙ্গে করে  নিয়ে এলেনা আজও? আমি সেই কবে থেকে চিঠি লিখে রেখেছি! মন্ত্রীকে  পাঠাবো বলে। কচড়া গাড়ি রোজ পেরিয়ে যায়। এই বাড়ির কচড়া মানুষগুলোকে নিয়ে যায় না কেন? আমি সব লিখে রেখেছি চিঠিতে। - কা ববুয়া। উ বহুত বড়া আদমী বানি। হমরা যেইসা ছোটা আদমী কা বাত শুনেগা? নহি। একটা দমকা হাওয়ায় ভেসে এলো পচা আবর্জনার গন্ধ। অমল আর সহ্য করতে পারল না। টলে পড়ল মেঝেতে। ‘ই কা হো গইলবা’ বলে দইওলা বাঁক ফেলে উদ্ভ্রান্ত হয়ে  দৌড়ে রাস্তায়। সাহায্যের খোঁজে। অমলের হাতের মুঠি খুলে চিঠি উড়ে পড়ল আবর্জনায়।


1 টি মন্তব্য: