মেরি গো রাউন্ড
চায়ের দোকানের সাথে মানুষের থেকেও
ঘোরতর সম্পর্ক হয় পাড়ার কুকুরদের। রতনের দোকানে রেগুলার খদ্দেরের চেয়েও রেগুলার
লালু ও তার সন্ততি। বিমল মানুষ বা কুকুর, কাউকেই কিছু দেয় না। কুকুরগুলো এতে
অভ্যস্ত হয়ে গেছে। বিমলের থেকে ওরাও কিছু আশা
করে না। মানুষ এখনো অভ্যস্ত নয়। বিমলের পা শুঁকে
লালু আবার গোল গোল ঘুরতে শুরু করল। বিমল দেখেছে, লালু সবসময়ই একটা কাল্পনিক বৃত্তের
পরিধি বরাবর ঘুরে চলে, ওকে কখনো সোজা হেঁটে যেতে সে
দেখেনি। জিজ্ঞেস করতে রতন বলল, “ওটার মাথা চুদে গেছে”। হাতের কাজ
শেষ করে বিমলের দিকে একটা সিগারেট এগিয়ে দিয়ে রতন বলল, “এই যে পাশের ইঁটভাটাটা, ওখানে মজুমদার পুষছিল ওকে”। বিমল মাথা তুলে ইঁটভাটার পাঁচিলে চোখ ফেলল। দাঁত বের করা পাঁচিল। লালাভ।
উঁচু। জাত্যাভিমানী। কাঠের দরজা ভেঙে জানালার ফালি হয়ে আছে। সেই জানালা দিয়ে বিমল
সবুজ ঘাস দেখতে পায়। রতন বলল, “একদিন সকাল থেকে বিশ্রি পচা গন্ধ।
দোকানে লোক টিকতে পারছে না। কয়েকজন মিলে
দরজা ভেঙে ঢুকে দেখি মজুমদার পচেগলে পড়ে আছে। আর লালু খুঁটিতে বাঁধা। পুলিশ এলো।
মজুমদারকে নিয়ে চলে গেল। লালুকে নিয়ে এলাম আমি। খেয়াল করলাম ও কখনো থামে না।
বিশ্রাম নেয় না। শুধু ঘুরেই চলে, ঘুরেই চলে। পরে জানলাম, মজুমদার
পাঁচদিন আগেই হার্টঅ্যাটাক করে মরে গেছিল।
আর ওই পাঁচদিন লালু শুধু খুঁটির চারদিকে ঘুরেছে। কিছু খায়নি। জলও না। কে দেবে? কেউ জানতোই তো না! তাইতেই ওর মাথাটা
ওমন চুদে গেছে”। দুপুর হয়ে আসায়
এখন আর দোকানে কেউ আসছে না। দোকানের
সামনের সড়কে লালু একটা অদৃশ্য খুঁটিকে পাক খেয়ে যাচ্ছে। বিমল লালুর দিকে তাকায়।
খুঁটিটা নেই। তবু লালু ঘুরে চলেছে। ওভাবেই লালুর খাওয়া দাওয়া ঘুম বাহ্য সঙ্গম।
ঘুরে ঘুরে ঘুরে ঘুরে। মাথা চুদে যাওয়া মানুষ বিমল আগেও দেখেছে। মাথা চুদে যাওয়া
কুকুর সে এই প্রথম দেখল। রাস্তার মাঝে বৃত্তপথে পায়চারি করেই চলেছে। বৃত্তের
মাঝখানে কিচ্ছু নেই। লালুর কোথাও যাওয়ার নেই। লালু কোথা থেকে আসছেও না। শুধু লালু
জানে পোলটা একদিন ছিল। লালুর কাছে পোলটা এখনো আছে। লালুর মাথার ভিতরে সেঁধিয়ে আছে। লালুকে বিমল গত একমাস
বৃত্তপথে ঘুরতে দেখেছে। অথচ আজই কেন রতনকে প্রশ্ন করে বসল, বিমল জানে না। বিমল
নিজের কথা ভাবল। তুলিকা ছিল। তুলিকা
নেই।
তুলিকা নেই। নেই। নেই। নেই।
পৃথিবী ঘুরেই চলেছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন