ডাকপিওন
তিন
তলায় থাকি। শোবার ঘরের জানালা দিয়ে একটা মোবাইল টাওয়ার দেখা যায়, নতুন হয়েছে।
লম্বা ইষ্পাতের খুঁটি, ওপরে কিছু যন্ত্রপাতি থাকাতে মাথাটা আকারে বড়। আশেপাশে ক’টা
গাছের ডালপালা চাগিয়ে উঠেছে - এক পলক দেখলে
একটা মানুষের আকৃতি বলে মনে হয়। আকাশে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে যেন। ডাকঘর তো উঠেই
গেছে, আজকাল এটা থেকেই প্রতিমুহূর্তে হাজার হাজার বার্তা, ছবি, কণ্ঠস্বর চারপাশের
লোকজনের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। তারা ফোন খুলে দেখছে, শুনছে।
সে
অনেকদিন আগে ইস্কুল-কলেজে পড়ার সময় আমাদের পাড়ায় চিঠিবিলি করতে একজন পোস্টম্যান
আসত। লোকটার চেহারা আমার কী করে যেন মনে থেকে গেছে। লম্বাটে চেহারা, গায়ের রং
ফরসার দিকে, খাকি পোষাক। লোকটার মুখে সব সময় হাসি একটা লেগেই থাকত। দেখা হলে জিগেস
করতাম – চিঠি আছে আমাদের? চিঠি থাকলেও হাসি, না থাকলেও হাসি।
ভোরবেলার
দিকে ঘুম ভেঙে জানালা দিয়ে বাইরে চোখ পড়তেই ওই মোবাইল টাওয়ারটাকে হঠাৎ মনে হল এ
যেন সেই আমাদের ডাকপিওন মানুষটি। সে
আজ কতদিন হয়ে গেছে। শহর পাল্টেছি, বাড়ি বদলেছি অনেকবার। আজ এই শ্রাবণের মেঘাচ্ছন্ন
সকালে এ কেন আমার ঠিকানা খুঁজেখুঁজে এসেছে? এর ঝুলিতে কি আমার নামে আসা পুরনো কোনো
চিঠি এখনো রয়ে গেছে!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন