মিলনাত্মক
মিলন মিত্রর সঙ্গে আবার দেখা
হয়ে গেল কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউসে। একটা টেবিলে একা একাই একটা কোল্ড কফির গ্লাসে
স্ট্র ঢুকিয়ে কফির তলানিটুকু চোঁ চোঁ করে টানছিলেন। তাতে যত না তরল কফি উঠে আসছিল,
তার থেকে বেশি আসছিল হাওয়া। দৃশ্যটি নিঃসন্দেহে দৃশ্যদূষণের পর্যায়ে পড়ে, যদিও তা
মিলন মিত্রর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে পুরোপুরি মানানসই। তলানির দিকে তাঁর
চিরদিনের ঝোঁক। তা সেই মিলন মিত্রর সঙ্গে অনিচ্ছা সত্ত্বেও আবার দেখা হয়ে যেতে
কিছুটা সৌজন্যের খাতিরেই তাঁর টেবিলের উল্টোদিকের চেয়ার দখল করে বসতেই হলো। বললাম,
‘কেমন আছেন মিলনদা?’ মিলনদা আমার প্রশ্নকে পাত্তা না দিয়ে রীতিমতো নির্লজ্জের মতো
বললেন, ‘তুই কি কোল্ডকফি পছন্দ করিস? তাহলে
তুই নিজের খরচে অর্ডার দিস। আমি তোকে আজ খাওয়াতে পারছি না ভাই। পকেট প্রায় শূন্য। বাড়িতে ফেরার জন্য ক্যাবভাড়াটুকুই
মাত্র সম্বল’। আমি দাঁত কেলিয়ে বললাম, ‘আপনি ব্যস্ত হবেন না
মিলনদা! আমি কোল্ড নয় বরং হট কফির অর্ডার
করব। নিজের খরচায়। কিন্তু তার আগে বলুন তো, আপনি এভাবে কেন শুক্তির সর্বনাশটা
করলেন? নিজের বউ মেয়ে থাকা সত্ত্বেও কেন শুক্তির গর্ভে আপনার সন্তানকে সাঁতার
কাটার জন্য নামিয়ে দিলেন?’ মিলনদা কখনও
দাঁত বের করে হাসেন না। তাঁর আরও একটা বড় গুণ হচ্ছে, তিনি কখনও থতমত খান না। কোল্ড
কফির শেষ বিন্দুটুকু শুষে নিয়ে বললেন, ‘তুই
ঠিক কথা বললি না ভাই। শুক্তির সর্বনাশ নয়, বরং সর্বনাশটা আমার!’ আমি অবাক হলাম মিলনদার কথায়। বললাম, ‘মানে?’ মিলনদা
যেন একটু বিরক্ত হয়েই বললেন, ‘আমার সর্বনাশ নয়? ঘরে দু’দুটো ডবকা মেয়ে থাকা
সত্ত্বেও আমাকে যে আরও একটা সন্তানের দায়িত্ব নিতে হবে, সেটা ভেবে দেখেছিস? কী করে যে সামলাব, কে জানে!’ আমি এবার আমার জন্য
হট কফির অর্ডার দিয়েই বসলাম। পেটে এখন আমার যে কোনো গরম পানীয় পড়া খুব প্রয়োজন। মাথাটা
কেমন যেন ঝিমঝিম করছে। ভ্যাপসা আবহাওয়ায় শরীরটাও কাহিল লাগছে। অপ্রস্তুত গলায় বললাম,
‘তাহলে মিলনদা আপনি সত্যি সত্যিই শুক্তিকে বিয়ে করছেন?’ মিলনদা আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, তুই কি আমাকে আলিপুর জেলে পাঠাতে চাস?’
ঘাবড়ে গিয়ে বললাম, ‘মানে? আপনাকে আমি জেলে কেন পাঠাতে যাব! আশ্চর্য তো!’ মিলনদা
নির্বিকার গলায় বললেন, ‘তা নয় তো কী! ঘরে একটা জলজ্যান্ত বিয়ে করা বউ আছে। বউটা
ভালোই। এরপর শুক্তিকে বিয়ে করলে আমার কি হতে পারে, জানিস না? আমার বউ কি আমাকে
ছেড়ে দেবে? আলিপুর জেলের রুটি খাইয়ে ছাড়বে’। তারপর
মিলনদা একটু থেমে শান্ত গলায় বললেন, আমি ঠিক করেছি শুক্তির ছেলে অথবা মেয়ে যাইহোক
না কেন, আমি দত্তক নেব। যতই হোক, ও তো আমারই বীর্যের ফসল!’ ‘কিন্তু শুক্তির কী হবে
মিলনদা?’ মিলনদা না হেসেই বললেন, ‘তুই তো ভালোবাসিস শুক্তিকে! আমি জানি। তুই
শুক্তিকে বিয়ে কর!’
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন