সোমবার, ১ জুলাই, ২০১৯

কাজল সেন




শকুন্তলা    


আমার বাড়ি থেকে শকুন্তলার বাড়ির দূরত্ব খুব একটা বেশি নয়। একবার হাঁটা শুরু করলে একটা বিশাল মাঠ, দুটো জলাশয়, তিনটে ইটভাটা আর চারটে  ধেনো জমি পেরোলেই কাঁচা রাস্তার বাঁদিক ধরে এগিয়ে পাঁচটি বাড়ি ছেড়ে ষষ্ঠ বাড়িটিই শকুন্তলার। শকুন্তলা অবশ্য এই বাড়িতে এখন বিশেষ থাকে না, মানে থাকা হয় না। কখনও সখনও সাধ হলে আসে। আসলে বছর খানেক আগে  বিয়ের পর থেকেই বারবার বদলে গেছে তার বাড়ির ঠিকানা। গড়িয়া পেরিয়ে নরেন্দ্রপুরের কাছাকাছি একটা ফ্ল্যাটে এখন একাই থাকে। না, এটা তার নিজের ফ্ল্যাট নয়। আবার যেহেতু এখনও পর্যন্ত নির্মলের সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ির ব্যাপারটায় আইনী মোহর লাগেনি, তাই নির্মলকে তার স্বামীই বলতে হয়, তা সেই নির্মলের ফ্ল্যাটও নয়। নির্মল থাকে তার নিজের বাড়ি পানিহাটিতে। বরং এই ফ্ল্যাটটা আমারনির্মলের  সঙ্গে শকুন্তলার বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে এবং যেহেতু সেই বিচ্ছেদের মূল কারণ বা সমস্যা অথবা উৎপাত স্বরূপ আমাকেই দায়ী করা হয়ে থাকে, তাই শকুন্তলা পানিহাটির শ্বশুরবাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার পর সৌজন্যবশত আমার ফ্ল্যাটেই তার থাকার ব্যবস্থা করে দিতে হয়েছিল। তবে  আমিও এখন আর  নিজের ফ্ল্যাটে থাকি না, থাকাটা ভালো দেখায় না, অন্তত শকুন্তলার সঙ্গে যতদিন না নির্মলের ছাড়াছাড়িটা পাকাপাকি হয়ে যায়। অবশ্য আমি খুব একটা দূরেও থাকি না, শেয়ার অটো ধরলে মিনিট কুড়ি লাগে আমার মেসে পৌঁছতে। বরং সেই ঝঞ্ঝাপুরে থাকাকালীন যখন আমি শকুন্তলার সঙ্গে মিলিত হবার জন্য আমার বাড়ি থেকে হাঁটা শুরু করতাম, তখন একটা বিশাল মাঠ, দুটো জলাশয়, তিনটে ইটভাটা আর চারটে ধেনো জমি পেরিয়ে কাঁচা রাস্তার বাঁদিক ধরে এগিয়ে পঞ্চম বাড়িটি ছেড়ে ষষ্ঠ বাড়িতে পৌঁছতে কুড়ি মিনিটের কিছুটা বেশি সময়ই লাগত।  

তা যে কথা হচ্ছিল, সেদিন আমি শকুন্তলাকে বলছিলাম, যদিও আমার নাম দুষ্মন্ত নয়, কিন্তু আমাদের গান্ধর্ব মতে বিয়েটা তো কবেই হয়ে গেছে, তাই না! সেই যে প্রথম যেদিন আমরা দুজনেই তলিয়ে গেছিলাম শরীরী মিলনে! তারপর আর কী দরকার ছিল ঘটা করে শুভদৃষ্টি মালাবদল সিঁদুরদান করে নির্মলের সঙ্গে বিয়ে বিয়ে খেলাধুলো করার? আরে তোমার পেটে যে বাচ্চাটা নির্মলের সঙ্গে শোবার আগে থেকেই ঘাই মারছে, তাকে তুমি চালাতে গেলে নির্মলের বাচ্চা বলে! তুমিই বলো, এটা তো রীতিমতো অধর্ম, তাই না? আর দেখলে তো, নির্মল কেমন পাকা খেলোয়াড়ের মতো হিসেব কষে বলে দিল, বিয়ের ছ’মাসের মধ্যে  যে বউ বাচ্চা বিয়োয়, সেই বাচ্চা কখনই তার নিজের বাচ্চা হতে পারে না!

শকুন্তলা আমার কথায় কি ক্ষুণ্ন হয়েছিল? ম্লান হেসে বলেছিল, পুরনো কাসুন্দি  ঘেঁটে আর কী লাভ বল! বিয়ে তো আর নিজের ইচ্ছেতে করিনি, বাধ্য  হয়েছিলাম মা-বাবার জন্য। আর ছেলেটাও তো বাঁচল না! নামও রাখা হলো না!

কষ্ট হচ্ছিল শকুন্তলার জন্য। বলেছিলাম, বেঁচে থাকলে কী নাম রাখতে? অস্ফূট স্বরে শকুন্তলা কিছু বলেছিলকিন্তু কী যে বলেছিল!    

1 টি মন্তব্য: