আশ্চর্য ভ্রমণে
কেয়াদি, তোমার সঙ্গে একদিন আমার বসন্ত দেখতে
যাওয়ার কথা ছিল শহর পেরিয়ে দূরে
কিন্তু কোন্ গ্রামে বা রাস্তার ধারে অজস্র পলাশ ফুটে ঝরে গিয়েছে অকারণে
জানা নেই
আমার।
ঝরা ফুলের ছবি কি ভালো ওঠে না গাছের ডাল আলো করে ফুটে থাকা ফুলের?
কতদিন ধরে কোথায় কোথায় যেন অনশন হচ্ছে!
কর্মহীনতা, খাদ্যাভাব, কৃষিঋণ সবকিছু বহন করে নিয়ে যাচ্ছে
একটি বেসামাল সময়, রক্তাভ আসমান তার...
এখন কি ফুল দেখার দিন আসলে বলো?
তার চাইতে কোন একটি জনসভায় গেলে বেশ হতো!
মৌলিক অধিকারের ছবি তুলে আনতাম, ছবি তুলে আনতাম একটি
সোচ্চার জীবন্ত ফ্ল্যাগের।
ভাষণ শুনতে আমি ভালোবাসি, হয়তো তুমিও, কারণ তখন অনেকগুলো হাত আকাশের
দিকে উথ্থিত থাকে, তাতে দাবি থাকে, মিলে যাওয়া কন্ঠরা থাকে।
আর মনে হয় আমরা ছবি তুলে আনতে পারবো একটি সুন্দর পৃথিবীর।
শ্লোগান শুনেছিলাম।
অথচ আমরা কিন্তু সেদিন গিয়েছিলাম অথবা কোন
একদিন
যাব বলে সুদীর্ঘ পরিকল্পনা করে রেখেছি মাত্র!
হয়তো তখন বর্ষা ঋতু আসবে। আকাশমণি বা কদম ফুলে ভরে যাবে গুটিকয় নিঃসঙ্গ
গাছ।
আর আমরা যাব।
হেঁটে হেঁটে, গল্প করতে করতে, আঁশবঁটি, কুটনোকোটার গন্ধ ছড়াতে ছড়াতে, নিষাদ নারীর
মতো ব্যাকুল ব্যাধের সন্ধানে।
রাস্তার দোকান থেকে লঘু চা, হলদে কেক খেয়ে নেবো, টুক করে দোকানির ভেতরবাড়িও
দেখব, মেয়েলোক কিনা, কৌতূহল খুব বেশী।
দেখে নেবো এক মলিন কিশোরী আলোর জামা পরে দাঁড়িয়ে,
ছোট্ট করে হাসি দিলো, তার সঙ্গে এই
পৃথিবীতে আর কোনদিন দেখা হবে না আমাদের,
তার বিয়ে হোক, বিনা সূতিকা রোগে কেটে যাক সারা জীবন।
আমরা সুবর্ণ গোধূলি মেখে মেখে যাব পথ ভুলে ফেলা বিহঙ্গশাবকের মতো,
আমরা এক গ্রাম থেকে অন্যগ্রামে যাবো, ঘুঁটে পোড়া গন্ধ
আসবে বাতাসে গৃহমন নিয়ে,
তারপরও হয়তো আবার যাচ্ছি আমরা, যাচ্ছি আর যাচ্ছি, ছবি তুলে তুলে মেমরি কার্ড
ফুল করে ফেলেছি ।
ছবি তুলেছি গাভীর, পুকুর ঘাটের, বিড়ি ফোঁকা কিশোরের, উঠোনে বেড়ে ওঠা ভরন্ত
বারোমেসে বেগুন গাছের, অনুমতি না নিয়ে ছবি
তুলে নিয়েছি ঘুমন্ত শিশুর দেয়ালা হাসির।
কোনদিন আমাদের যাওয়ার কথা ছিল, অথচ যাওয়া হয়নি, শুধু ছবি তোলা হয়ে গেছে,
কী আশ্চর্য ভ্রমণ ছিল এক!
অথচ গেলে কি এমন হতো, কিই বা এমন হতো!
আকাশমণি, কদম, পলাশ তোমরা নিয়ম করে
ফুটতে থাকো
আমি বড় হতে থাকি আরো
আস্তে আস্তে ইচ্ছেরা মরে যেতে শুরু করে, যেমন আজকাল হচ্ছে
আমার,
তাই আমি দুর্দান্ত পজেটিভ থাকার চেষ্টা করি বসনে মননে,
অস্তরাগ ভালো লাগে সবসময় , কে যেন বলেছিল
গোধূলি বড় প্রিয় তার...
আসলে সবারই,
তাই আমিও জানালা বন্ধ করি অনেক রাতে।
সত্যিই কেয়াদি, আমি চিরশ্রী বলছি,
কী আশ্চর্য এক ভ্রমণে গিয়েছিলাম বা যাইনি আমরা... সেদিন দুজনে
বাড়ি
বাড়ি এক অনারোগ্য রোগ
ফেলে আসা অনেকদিনের থাকা সেই ঘর, বারান্দা, ঘাট, জল
ক্ষতচিহ্নের মতো মনে হয়
একটি একটি ইট জড়ো করে মানুষ,
শরীর আর মনের গুটিবসন্তের যন্ত্রণা তাতে, শখ পুড়ে পুড়ে রঙ
লাগানো
সমস্ত মলম মেখে, রোমান্টিকতা খেয়ে নিয়ে
নির্বাক, নিথর হয়ে দাঁড়ায় অবশেষে একটি বাড়ি
লবণ ভেসে ভেসে ওঠে সস্তার সিমেন্ট প্রলেপের ওপর
একজোড়া মানুষ মানুষী তখন সেই সমুদ্রদ্বীপে
বাটিতে জমা হয়েছে সমস্ত অমিল আর বিশ্রামমুখর কিছু সন্ধ্যা
আগে ঘরের দেয়ালে রঙ না ত্রিপুরা স্টীলের বড় আলমারি!
কত তর্ক গেছে দিনভর, রাগারাগি
এখন পুরনো কড়িকাঠ, শ্মশানযাত্রীদের মতো।
অন্য মানুষেরা সন্ধ্যা দেয়, হঠাৎ বৃষ্টিতে নিভে
যায় তাদের শেষ মোমবাতি,
তবু বেঁচে থাকা শেষ হয় না যেন,
কোচিং ফেরত একটি অচেনা
ছেলে ঘেমে নেয়ে আসে হঠাৎই,
জামের দিনে, বকের পাখার ছায়া নিয়ে পিঠে
বন্ধ দরজায় কড়া নাড়ে বার
বার...
রেইনকোট
আসলে তো কেউ ফিরিয়ে দেয়নি
প্রতিটি মাঝপথ ওনাকে দ্বিধায় ফেলেছে
অন্যরা বলেছিল তিনি নাকি বামপন্থায় বিশ্বাসী
মৃত্যুর কিছুদিন আগে বুঝেছিলেন
তিনিও আদর্শহীন আসলে, রক্তে মেশাতে
পারেননি কিছুই
উপর থেকে ঘাম চেটে কিছু মিছিল করেছেন
স্লোগানের কথা পরিবারেও ঢুকতে দেননি
তিনি আসলে চামচা হয়েছিলেন, কমিউনিজম এতটা সহজ
নয়
তাই ব্যাপক দলবদলেও আজ তার আর নিন্দে করতে ইচ্ছে হয়
না। কারণ প্রতিদিন মিছিল মিটিং সেরে ঘামে
ভেজা জামা বাইরে রেখে তিনিও ঘরে ঢুকতেন
কাছে আসা মৃত্যুকেও তার তাই ঘোলা মনে হয় আজকাল...
গরাদ
বাসে যেতে যেতে দেখি
দেড়কাঠামতো এক টিনের বাড়ি, উঠোন সমেত,
পেছনে কি আছে ছোট্ট কোন পুকুর, যার ঘাটের
জলবালিতে একটি কড়াই রাখা
দু’এক টুকরো ধোঁয়া বেরোচ্ছে পেছনের একচালা থেকে
শেষ বিকেলে আহা, কেউ এলো বোধহয় অতিথি হঠাৎ...
অথচ খাওয়া শেষ হলো কি
বউটির?
ভাবতে ভাবতে
পেরিয়ে এসেছি কতদূর, একটানা খেজুর গাছ, এলানো রাস্তা
ভুলে যেতে যেতে এইসবই কবিতা বলে তুলে রাখি আজকাল
|
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন