প্রতিবেশী
সাহিত্য
বিনোদকুমার শুক্ল’র কবিতা
(অনুবাদ : মিতা
দাস)
কবি পরিচিতি :
বিনোদকুমার শুক্ল জন্মগ্রহণ
করেছিলেন তৎকালীন মধ্যপ্রদেশের (বর্তমান ছত্তিশগড়) রায়পুরে ১৯৩৭ সালের ১লা
জানুয়ারী। তিনি একইসঙ্গে স্বনামধন্য কবি ও ঔপন্যাসিক। তিনি সাধারণ মানুষের জীবনের
গভীরে অনুপ্রবেশ করে তাদের অন্তর্জীবনের সুখ দুঃখের কথা তাঁর লেখায় চিত্রিত করেছেন।
তাঁর প্রকাশিত প্রথম কবিতা সংকলন ‘লগভগ জয়হিন্দ’ ১৯৭১ সালে। এরপর তাঁর প্রকাশিত
কবিতা সংকলন যথাক্রমে ‘সব কুছ হোনা বচা রহেগা’, ‘আকাশ ধরতি কো খটখটাতা হ্যায়’,
‘অতিরিক্ত নহী’ ও ‘কভি কে বাদ অভি’। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘নৌকর কি কমীজ’ প্রকাশিত
হয়েছিল ১৯৭৯ সালে। এই উপন্যাসটি বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক মণি কাউল চলচ্চিত্রে
রূপায়িত করেছিলেন ১৯৯৯ সালে (The Servant’s Shirt)। বিনোদকুমার শুক্ল হিন্দি ভাষায় সাহিত্যচর্চার জন্য ১৯৯৯ সালেই
সম্মানিত হয়েছিলেন সাহিত্য একাডেমি পুরস্কারে। তিনি এই পুরস্কার পেয়েছিলেন তাঁর
উপন্যাস ‘দীওয়ার মে এক খিড়কি রহতি থী’র জন্য (A Window
Lived in a Wall)।
স্মরণ করি রাতকে
স্মরণ করি রাতকে
যেন আমি রাতকে
সশব্দে পুনরুচ্চারিত করতে পারি --
এক অন্ধকারে যেন আর এক অন্ধকারকে।
অনন্ত তারাদের
অনন্ত তারাতে
বারবার তারাদের অনন্তের মাঝে
জাপটে ধরাকে
জাপটে ধরায় সশব্দে,
ছটফটানিকে
বেড়ালের মুখে চাপা
পাখির পাখনার ছটফটানিতে,
অথবা আমার শব্দহীনতায়
আমার ছটফটানিতে মনে হয়
ধ্বনিত সেই পাখিটা ছটফট করতো।
কোন কবিতার আরম্ভেই
শব্দহীনতায়
আমি মুক্তিকে
মুক্তিতে পুনরুচ্চারিত করলাম ধ্বনি সহ
সেগুলি যায় এক ঝাঁক বেঁধে।
মন্দির
সে মন্দিরকে
ঘরেই একত্র করে নিয়েছিল
আর ঠাকুরকে আমাতে
তখন সে একটি মূর্তির সাদৃশ্য
প্রতিদিনের শুকনো পাতাগুলিকে
ঝাঁট দিচ্ছিলো, হঠাৎ
আমাদের আসাটাকে সে
শতাব্দীর পরে প্রকট হওয়া মনে করল।
বৃষ্টিকে সে
সরোবরে একত্র করে রাখল
সরোবরের জল এনে
আর বৃষ্টি দিয়ে সে
নির্মাণের জায়গার বাইরে
নির্মিতকে ধুয়ে ফেলল
আর বন্যার জলকে
নদীর মত করে প্রবাহিত করল।
চাটনির জন্য তেঁতুলের বিচি বার করে
একত্র করল
ঠিক সেইভাবে বিদ্যুৎ থেকে
কড় কড় শব্দ বার করে
জমিয়ে রাখল
শেষ রাতে বিদ্যুতের ঝাড়বাতিগুলি বার করে
এই রাতকে সাজালো
আর কুলোয় মহুয়া ফুলের সঙ্গে
একত্র করল ঝরে পড়া নক্ষত্র আর
পরিষ্কার করে দিল
চাঁদিনী রাতে ভরা আকাশ।
শীতকালকে সে
উদলা ভাবে একত্র করে রাখল
গ্রীষ্মকে গরমের তাপে
আলিঙ্গনকে আলিঙ্গনে
চুম্বনকে চুম্বনে
আর সব প্রতীক্ষাগুলিকে
প্রতীক্ষার শেষে।
সময়
(১)
নিজের ভাগের আকাশ দেখতে গিয়ে
গোটা আকাশ দেখে ফেলা হয়
সবার ভাগের আকাশ কিন্তু
সম্পূর্ণ আকাশ নয়
নিজের ভাগের চন্দ্রমা দেখতে গিয়ে
গোটা চাঁদকে দেখে ফেলা হয়
নিজেদের ভাগের নিঃশ্বাস কোনমতে
সব্বাই পায়
কিন্তু ওই যে বাগানে বসে যিনি খবরের কাগজ পড়ছেন
আর সেও যে দগ্ধ এবং নোংরা ঘিরে বেঁচে আছে
সবার ভাগের বাতাস কিন্তু সেই বাতাস নয়।
নিজের ভাগের খিদে সঙ্গে নিয়েও
সবাই পায় না নিজের ভাগের পুরো ভাত
বাজারে দেখতে পাচ্ছ
ওই যে সেই তন্দুরে রুটি সেঁকা হচ্ছে
সবার ভাগের রুটি নয়।
আর সবার ঘড়িতে যে সময়টা
দেখাচ্ছে
ওটা সবার ভাগের সময় নয়
এই সময়।
(২)
আমের গাছটা এই জায়গায় নিষ্প্রয়োজনীয়
কিন্তু একটি পাখির নীড়ের জন্য
প্রয়োজন ছিল একটি আম গাছের
কাঠবিড়ালিটি যার শাখা-প্রশাখা ও অলিগলিতে
আসা যাওয়া করে দেখতে
পাওয়া যেত
কোন পরিকল্পনাই ছিল না
কিন্তু ছিল অনেক কিছুই...
গাছে থাকতো নানান মৌসুমেরা
গ্রীষ্ম, পাতা ঝরার দিন
কখনো রোদ কখনো ছায়া হয়
কিন্তু এটা একটা এমন জায়গা
যেখানে যে কোনদিন আমার
পৌঁছনোটা ছিল নিষ্প্রয়োজনীয়
কিন্তু আম গাছটা থাকায়
ওখানে আমার প্রথম আসা ও
এসে পৌঁছনোর প্রথম দিন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন