শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৯

ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত




এসকেপেড 

আমাকে ভালোবেসেছ,
দেখছি করোটি তোমার জ্বলে ওঠে মাঝরাতে।
ঝুলন্ত বাগানে উজ্বল ফ্লোরেসেন্ট ফুলেরা
কালো ঘাসের বাগিচায়,
এই অপার্থিব দেখি, এতটাই গভীরতা আনো তুমি।

উন্মাদিনী! গাছে গাছে অজস্র পেরেক ফুটে আছে!
আমি কীভাবে দিই বলো গোলাপের তোড়া!
অদ্ভুত জীবেরা তাড়া করে সর্বদা-
ছ’টি পা দুটি মাথা;
হায়নার মত হিহি হাসে,
মারলে পড়ে থাকে দেহ;
বাকিরা তবুও ধাওয়া করে আমার পিছু।

এক বিশাল পাখির অপেক্ষায় আছি-
ঝাঁপাবো শরীরে তার, দু’হাতে জড়াবো গলা;
আসবে, তুমি আসবে? বলো না!


রোবোটিনি  

রোবোটিনি, তন্বী শরীরে তার অজস্র তার,
সুক্ষ রক্ত জালিকার মতো, নিঃশ্বাস পড়ে না-
চোখের পলক যান্ত্রিক ছুটে যায় সে
এঘর থেকে ওঘর মহাকাশগৃহে

প্রতিটি পদক্ষেপে বিপদ লুকিয়ে থাকে,
আক্রান্ত হতে পারে নিরালম্ব ভূসমলয়,
এ বিশাল গবেষণাগৃহে তিনটি প্রাণী,
আমি সে ও রোবোটিনি

আমাদের ব্যস্ততা, রোবোটিনি অন্তরালে,
ইলেকট্রিক কেটলিতে জল ফোটে,
দুপেয়ালা ব্ল্যাক কফি রেখে যায় টিটেবিলে

রোবোটিনি কাজ শেষে বসে থাকে নিজস্ব
চেয়ারে, কার জন্য উল বোনে কে জানে?
তারও কি রয়েছে কোন আশ্চর্য প্রেমিক এক,
শীত গ্রীষ্ম স্পর্শ করে যাকে?
জানি না আমি, জানতেও চাই না,
চোখের সামনে তার কাচের দুটো চোখ, মেটালিক
লিড ওঠে নামে- সেকি পড়ে ফেলে মনের ভাষা?
ঘুরন্ত উলের কাঁটা ঘোরে আরও দ্রুত,
শেষ করতেই হবে একটি পুলোভার
পৃথিবীতে নামার আগে, দিতে হবে প্রেমিকের হাতে


রোবোটেরা ফিরে যাবে

কাজ শেষ,
রোবোটেরা ফিরে যাবে,
সারি সারি বসে আছে ধীরে চলা বেল্টে,
স্ক্রু ড্রাইভার একে একে খুলছে অজস্র হাত নখ গাল গলা বুক

রোবটের হৃদয় থাকে না,
অপলক চোখে একে অপরকে দেখে-
যন্ত্রের মত জিজ্ঞেস করে কুশল

কয়েক মুহর্ত বাকী,
ধীরে ধীরে ঘুরছে বেল্ট-
একদিকে ঢুকছে রোবট-
অন্যদিকে বেরিয়ে আসছে,
তার বাল্ব স্ক্রু ব্যাটারি আর ইস্পাতের ছোট বড় অজস্র টুকরো।

কাজ শেষ,
বাক্সবন্দী যন্ত্রাংশেরা ফিরবে পরবর্তী উড়ানে।


মিথ্যাচার

এই অসত্য পুড়িয়ে ফেল, আমি যা বলতে চেয়েছি, ভাষা আসেনি,
কলম ঘুরে গেছে অন্য দিকে, এটা আমার কথা নয়,
হয় না কখনো, আমি রেখে ঢেকে বলি, মেলি না নিজেকে,
কখন বলি না আমার বিশ্বাসঘাতকতা আমার অপদার্থতা,
ভীরুতা আর অকর্মণ্যতা।
          
এই অসত্য পুড়িয়ে ফেল, আমি বলতে পারি না সব কথা,
ভারত মহাসাগর থেকে উঠে আসা সব কটা দ্বীপ ছুঁয়ে শপথ করে বলছি,
আমার সমস্ত কথা মিথ্যাচার।


শমিতার সাথে

হাকাশ প্রান্তিকে উঠে বসি বাসে,
শমিতা ড্রাইভার,
ইউনিফর্মে সোনার মত উজ্জ্বল বোতাম নাম লেখা পাত।

ছুটে আসে মহাজাগতিক উল্কারা-
শমিতা সাবধানে স্ক্রীন দেখে
পৌঁছে দেয় আকাশের ঠিকানায়।

নানা কাজে বেশ থাকি শমিতাকে ভুলে,
বিকেলে আবার হাওয়া দরজা খুলে,
শমিতা ডেকে নেয় বাসের ভেতরে।
প্রতিটি প্রশ্নের জবাবে সে হাসে,
আলগোছে নেমে আসে পেলবতা।

অন্ধকার বাস,
ড্যাশবোর্ডের সবুজ আলোয় শমিতার মুখ দেখি-
আর মাত্র কয়েক মিনিট বাদে সে পৌঁছে দেবে পৃথিবীতে



 










কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন