শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৯

শ্রাবণী দাশগুপ্ত




প্রয়োজন


চুপ করে দাঁড়িয়ে আছেন মালিনী স্বদেশ কাউন্টারে গিফটের বিল মেটাচ্ছেন – এক বন্ধুর চল্লিশতম বিবাহবার্ষিকী আসছে। প্যাকেট নিয়ে বউয়ের দিকে এগোলেন,
কী হল, কিছু নেবার আছে?
না না, দাঁড়াও একটু দেখি। দোতলাটা বেশ করেছে, নাগো? আগে তো এতবড় ছিলনা।
হ্যাঁ, ভীড়-টীড় কম কষ্ট করে তোমাকে সিঁড়ি চড়তে হচ্ছে, এই আরকী!

সমবায়িকাটি যথেষ্ট বাড়ানো হয়েছে। একতলায় মুদীর জিনিসপত্র, তেল-সাবান-ক্রিম, আটপৌরে জামাকাপড়ও রাখা হচ্ছে। দোতলা আগে গোডাউন ছিল। বছর আড়াই-তিন হল ঢেলে সাজানো হয়েছে। বাসনপত্র, টুকিটাকি উপহার, ইলেক্ট্রিক্যাল আর ইলেক্ট্রনিক্স সেক্‌শন মালিনী ঘাড় ঘুরিয়ে বলেন,
মুদীর জিনিসক’টা নিয়ে নাওগে, আমি নামছি।
তাড়াহুড়ো না করে সাবধানে নামবে

মালিনীর নী-রিপ্লেসমেন্ট বিশেষ ফলদায়ী হয়নি, বরং সত্তরোর্ধ্ব ভদ্রলোকটি তুলনায় সচল। ধীরপায়ে ঈষৎ ভারী শরীর নিয়ে সিঁড়ি নামছেন, মালিনী দেখলেন। পাশ দিয়ে উঠে আসছে দুরন্ত পাজোড়া, টানছে মায়ের হাত ধরে। উঠেই দৌড়ে এসেছে বইখাতার বিভাগে। রঙের বাক্স তুলে দেখছে, চিত্র করা লাঞ্চবক্স। লাফাচ্ছে, বায়না করছে। তার মা খরচোখে ধমক দিল,
বিহেভ ইয়োরসেলফ। দেখ, দিদু তোমাকে অসভ্য ভাবছেন।
মালিনীর দিকে তাকিয়ে বিব্রত হাসছে অল্পবয়সী মা। মালিনী মাথা নেড়ে প্রশ্রয় দিয়েছেন।

এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার কারণে পায়ে টান ধরছে। বাঁদিকে বিক্রীর জন্যে সাজিয়ে রাখা প্লাস্টিকের চেয়ারে বসছেন মালিনী। কর্মচারী আড়চোখে দেখে অন্য ক্রেতায় নিবিষ্ট হয়েছে। ফ্রিজের খুঁটিনাটি ব্যাখ্যা করছে ক্রেতা ঢলঢল নতুন স্বামী-স্ত্রী। মালিনী চশমার মোটা কাচ থেকে বোঝার চেষ্টা করেন, কেমন দেখতে বউ। আপনমনে বলছেন,
যত শখের শাড়ি পরা, কত পরবে পরে জানা আছে।

মোটামুটি ভীড় হয়েছে দোতলাতে। স্টিলের বাসনের শেলফের সামনে মোটাসোটা সংসারী দুজন - দুবোন, জা, ননদ-ভাইবৌ, কিম্বা বান্ধবী হতে পারে। স্টিলের কড়াই, বড়ো ডেকচি তুলে দেখছে কোয়ালিটি। দাম দেখছে। আসন্ন অনুষ্ঠানের কথা আলোচনা করছে। লোকজন আসার কথা আছে। মালিনী একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলেন। উঠে কোমর সোজা করে সাবধানে পা রাখেন। সামনেই সুদৃশ্য প্লাস্টিকের বাক্স। আলতো করে ঢাকনা খুলেছেন। পাশে দাঁড়ানো কর্মচারী বলে,
জুতোর র‍্যাক মাসিমা। অনেক জুতো ধরে। নেবেন?
না ভাই, আমার আর কত জুতোর দরকার হয়?
পেছন দিক থেকে হাত বাড়িয়েছে একজন,
কত দাম দাদা? নিলে হয় কি?
পাশের মহিলাকণ্ঠ ব্যঙ্গের গলায় বলে,
নিলে হয়! তোমার দু’মেয়ের জুতো, জুতোর দোকানের শোকেস ছাড়া জায়গায় কুলোবে?

পা টেনে সিঁড়ির কাছে গিয়ে দেখেন স্বদেশ ওপরে উঠে এসেছেন।
এস দেখি, হাত ধরে নামো। নিয়েছ কিছু?
আশ্চর্য সুন্দর মালিনীর চোখদুটো, পাতলা জলের পর্দা সরে গিয়ে ধোয়ামোছা পরিষ্কার। সতর্ক হয়ে পা ফেলেন সিঁড়িতে।
কী আর নেব? এতরকমের জিনিস রেখেছে ভালো লাগছিল বুঝলে? ভরা-ভরা,  ঝলমলে। বসে দেখছিলাম।
দরকার হলে নিতে, বলে তো গেলাম।
দরকার? সেটাই ভেবে পেলাম না। ওই শ্লোকটা বলতো একবার, পূর্নম্‌ পূর্নম্‌ কী একটা বলো যে?
নিচে মালপত্রের ব্যাগ নিয়ে তাঁদের জন্যে টোটো দাঁড়িয়ে আছে।














কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন