শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০১৯

রোমেনা আফরোজ




গন্তব্যহীন


মানুষের না থাকা জুড়েও অনেকটা অস্তিত্ব বিরাজ করে।  যেন স্রষ্টার এক টুকরো বিচ্ছুরণ।
সারাক্ষণ জলস্রোত। এই যে অনুভব করতে পারছি,  তুমি ঘুমিয়ে নেই। বামপাশে কালো
ঘোড়া ছুটছে। আমি জানি,  তুমি থামবে না।  ঘোড়া ছুটুক। দেখতে চাই, সময় কতদূর
পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে ডানপাশে, উলটো গুনে চলছ, নিরানব্বই, আটানব্বই।  
এবার ভেড়ার পাল, গ্রাম ডিঙালেই জ্যামের শহর।  
অনেকদিন ধরে ভাবছি, কোথাও যেতে হবে। এ বধ্যভূমি ত্যাগ করা প্রয়োজন।
তুমি কি এমন কোথাও নিয়ে যাবে, যেখানে কোনদিন যাইনি, ভবিষ্যতেও এমন
সৌন্দর্যচর্চা কেউ করবে না? 
আমার বাহুতে এক সিরিঞ্জ পরিমাণ স্বপ্ন ঢুকে গেল। একি তুমি, না লাল  পিঁপড়ের
কামড়? আমার স্বপ্নে কোনো লোভ নেই। স্বপ্ন দেখলে গর্ভবতী নারীর মত গা গুলোয়।
বমি পায়। তারচেয়ে বরং ঘুম দাও। আফিম ঘুম। 
অপরিচিত কে যেন আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে  শাহবাগের দিকে।  
নিকটেই শেষকৃত্য অনুষ্ঠান। আমি যাবতীয় অনুষ্ঠানিকতা ত্যাগ করতে চাইকৃষকদের
কাছে নিয়ে যাও আমাকে।  এই যে পুরুষ, আমাকে কোথায় নিয়ে চলছেন?  অতো
সাহসিকতা কি আপনাকে মানায়? দয়া করে পরবর্তী বাস স্টেশনে নামিয়ে দেবেন।
নতুবা চিৎকার করে লোক জড়ো করব। 
রাস্তার দেয়াল বরাবর যে লতাগুলো অর্ধেক নেমে গেছে, ওরা হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছে
গাল, ঠোঁট, ওরা কি আপনার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছে? এই যে মশায় শুনছেন, একটু
আস্তে হাঁটুন। আমি অত জোরে ছুটতে পারি না।  মনের সাথে শরীরের বয়সের বিস্তর
ব্যবধান।  সেই গোপনরেখা ধরে হাঁটলে নির্ঘাত মৃত্যুর সাথে দেখা হবে।  তারচেয়ে
একটু সরে এসে বন্ধুর কাতারে দাঁড়ান। লাইনটি দীর্ঘ নয়
কল্পনার মানুষটার অবয়ব ঠিক তোমার মতো। সেই শারীরিক কাঠামো। বন্যতা।
আশ্চর্য তুমি নও। 
সেদিন নৃপেনবাবু বলছিলেন, নাকি স্বপ্নে দেখছিলাম, কাক ভেবে অনেকটা পথ ছোটার
পর দেখলেন, কোকিলতিনি হতাশ না হয়ে এগিয়ে গেলেন। কোকিলের রাজত্ব
তো বসন্তে,  সে তুলনায় কাক দীর্ঘজীবী...
আজকাল স্বপ্ন আর বাস্তবতার মধ্যকার সংযোগরেখাটি মুছে যায়। নৃপেনবাবুর মতো
ছুটতে ছুটতে দেখি, মানুষের পরিত্যক্ত খোলস। 
একজন মানুষের হাত ধরে ছুটে যাচ্ছি, কোনদিকে? 



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন