শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০১৯

মৌলীনাথ গোস্বামী




প্রেমিক   

মৃত্যুর খুব কাছে
যারা নিঃশ্বাস রাখিয়াছে...

কোনোদিন ফিরিবে না আর
এ দেখাই শেষবার অনন্ত অপার

তারা জানিয়াছে; বুঝিয়াছে
অর্জুন চিরকাল বাগদত্ত 
                মাছের চোখের কাছে...

অন্তিম শ্বাস মরণেরে ভালবাসিয়াছে 
জীবনের সব নিঃশ্বাস
               এতদিন মৃত্যুর জন্য বাঁচিয়াছে 



ভাদু   

ছড়াতে ছড়াতে খই চলে গেল সময়

অবেলায়, লগ্নভ্রষ্ট জলে
সে মেয়েটি নাইতে এলে
কর্কশ স্নানঘাটে 
তার আলতা ছুঁয়ে জ্বলে ওঠে দ্রবণের সুখ

"এসেছিস ভদ্রেশ্বরী? এতদিন পরে?"
সিঁড়িটির বলিরেখা
আর তার ভেজা ভেজা চোখ
ফিরে পায় অতীতের দিগন্ত ধূসর...

কে এক কথকঠাকুর 
খুলে বসে কত শত জনমের পুঁথি
পড়ে জন্ম, পড়ে জন্মান্তর
সেইখানে -
পাতায় পাতায় জাগে ভাদরের মরশুম ,
দুধেল ধানের ক্ষেত হয়ে জেগে থাকে ভদ্রেশ্বরী...

  
বউ   

তার নামে লিখেছি শিহরণের শংসাপত্র
রোমকূপের উল্লাস
জীবনের বারোমাস্যায় 
তাকে উৎসর্গ করেছি আকাশকুসুম

দীর্ঘশ্বাসের সন্ত্রাস থেকে বাঁচতে
অসম্ভবের প্রলাপে ভরিয়েছি রাতের নিবিড়
                                        দুপুরের আমানি
              হলুদের ক্ষত লাগা শাড়ির আঁচল
                              কব্জিতে ফোস্কার দাগ

বুঝে নিলে জীবনের সব বোঝাপড়া
দিনের প্রথম আলোয়
যে মানুষটা গ্রন্থি দেয় যাপনের উপবীতে
সে নিজেই অসম্ভব আকাশকুসুম এক -
ছেঁড়া তারে ডুবে থাকে সংসারের ধ্রুপদী সঙ্গীতে


তাপসী   

অঙ্গার ছুঁয়ে দিলে হাতে লাগে শিশির শীতল
দুঃস্থ দিনের ইঁট গেঁথে নেয় দুর্বিষহ জীবন
কারা গায় সামগান অবিরল
সেইখানে আসে তথাগত...
ওঁ মণি পেমে হুম, ওঁ মণি পেমে হুম

পাকদণ্ডির বাঁকে, 
চুপঘন হয়ে গেলে রাতের বরফ  
ফলন্ত আপেল বাগানে জাগে করুণার মত  
একা মেয়ে কিন্নরী, 
সেইখানে আসে তথাগত...
ওঁ মণি পেমে হুম, ওঁ মণি পেমে হুম

দেহে তার খেলা করে আপেলের মরশুম
করুণের মত কাঁপে কিশোরীর যৌবন
বয়ে যায় অনাঘ্রাত জোছনাজল
উদ্বেল চোখ গোনে অতন্দ্র পাইনের বন
সেইখানে আসে তথাগত...
ওঁ মণি পেমে হুম, ওঁ মণি পেমে হুম
                ওঁ মণি পেমে হুম।





৩টি মন্তব্য: