অবিরাম স্বপ্ন মুখ - ২
ঘুমের একটা অভিমান আছে। খালিপেটে ঘুম আসে না। ঘুমেরও খিদে আছে অসভ্য টাইপ। আমার মতো। পরোটা
খেলাম ভেজে ফুলকপি ভাজা দিয়ে। ঝাল লাগছে। খাবার সময় জিভে কামড় পড়েছে। কে গালি
দিলো? আমিই বা গালি ছেড়ে দিব কেন? পাল্টা গালি দিলাম: পরোটার বাচ্চা।
এ রকম সফিসটিকেট গালি দিয়ে সুখ নেই। গালি দিতে হয় কুৎসিত।
মুখ ভরে। ততক্ষণে জিভের ব্যথা হালকা হয়ে এলো। রাগ কমল। একটা লারেলাপ্পা গান শুনতে
শুনতে ভাবছি, সারাদিন পোশাক পরে থাকি; সভ্যতা। যা ভাবি তা বলি না; সভ্যতা। যাকে
পছন্দ করি না; তার সাথে হেসে হেসে কথা বলি। যে মেয়েটা আমার অধীনস্ত; তার সমস্ত
কিছু স্ক্যান করি।
ফেসবুকে নারী সহিংসতার বিরুদ্ধে একটা পোস্ট লিখেছি আর মাকে
ফোনে বলছি;
: ললিতাকে পিটিয়ে বিয়ে দেয়া উচিত।
ললিতা আমার বোন। মেধাবী। ব্যাংকার। সে বিয়ে করছে না।
ললিতা অসাধারণ নিবন্ধ লেখে। আমি গোপনে পড়ে ঈর্ষাক্রান্ত হই।
: বিয়ে করে না কেন হারামজাদী?
: বিয়ে করে না কেন হারামজাদী?
একটা ঢলঢলানি গান শুনি। ফ্যান ছেড়ে দিই। স্বপ্ন নিয়ে গুগল
করতে করতে পেলাম:
যদিও অধিকাংশ সময় আমরা স্বপ্ন ভুলে যাই তবুও অনেক মহান
আবিস্কার বা কবিতার সূত্রপাত এই স্বপ্ন থেকে। নিউটন, আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল
তাদের আবিস্কারের সূত্র স্বপ্নে দেখেছিলেন এবং ঘুম থেকে উঠেই তা লিখে রেখেছিলেন।
সকাল হয়ে গেল। গুগল ভাল্লাগছিল না। জামার একটা বোতাম ছিঁড়ে
গিয়েছিল, বোতাম লাগালাম। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি মেয়েটা দড়ি লাফাচ্ছে।
মা মেয়েটাকে মুখে ক্রিম লাগানোর চেষ্টা করছে। কাল মেয়েটা
বাসে করে স্কুল ট্যুরে যাবে অন্য শহরে। মেয়েটা মায়ের বুকে হাঁসের বাচ্চার মতো মুখ
ঘষল। এই প্রথম মেয়েটা দূরে যাচ্ছে। এই প্রথম একাকী কোথাও যাচ্ছে। যদিও সাথে
স্কুলের বন্ধুরা আছে। স্বপ্ন লাগছে। মা ঘরে এসে বিছানার দিকে তাকাল। মনটা হু হু
করল মেঘের গর্জন ছাপিয়ে। কোমল করে ডাকল মেয়েটাকে;
: স্বর্ণালু, এদিকে আয় তো
: আমি স্বর্ণালু না। আমি বেবি আওল।
বেবি আওল মায়ের ডাক শুনল না। দূরের সোফা থেকে হাঁসের
বাচ্চার মতো গলা উঁচিয়ে মাকে একবার মনে করিয়ে দিলো স্কুলের লিস্ট অনুযায়ী ট্যুরের
এখনো অনেক কিছু কেনাকাটা বাকি আছে। যদিও মা আগেই টুকটুক করে অনেক কিছু কিনেছে। এক
একটা জিনিষ কিনেছে আর লিস্টে টিক চিহ্ন দিয়েছে। ৩১ তারিখ আসতে কতো দেরি? ভাবতে
ইচ্ছা করছে না। আচ্ছা ৩১ তারিখটাকে পথের মধ্যে ঠেকিয়ে রাখা যায় না?
স্বর্ণালু জন্মেছে বিদেশে। ওকে
বেবি আওলের মতো চোখের মাঝে ঘষে দিতে হয়। তার পেছনে খাবার নিয়ে দৌড়াতে হয়। এক বাটি
দুধ সাধতে হয়।
আবার দাপুটে বৃষ্টি কাপ্তাই
হ্রদের আদলে। আমি বাচ্চা মেয়েটাকে দ্রুত টেক্সট পাঠালাম কাপাসতুলোর মতো;
: ও বেবি আওল বাচ্চাটা, চলো স্বপ্ন দেখি।
ওরা অবিরাম বৃষ্টিতে ঢুকে গেল
তখনি। আমি স্বপ্ন সাজাচ্ছি তখনো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন