শুক্রবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

কবিতা জান্নাত




শীতাতপ্ততা

নদীর দুপারে কাশফুলের লাশ শুয়ে আছে;

সারি সারি শিমুলের চুড়ো লাল হলে শীত নামে

কুয়াশা কফিনে হেমন্তের নান্দনিকতা বাতাসের ছুরি ও বিশ্বগ্রাম আমার

নাড়ার আগুনে পোড়, পাতার ঘূর্ণিতে ধরুক আগুন; শীতের চাদরে মেরুদন্ডের কলোনিতে কলোনীতে হিমাগুন

ধূলিতে ডুবে যাওয়া সেকালের গরুর গাড়ির হট হট হুরর্ এর মতো। উড়িয়ে নেয় কিশোরীর শাড়ি;

বেড়া ডিঙানোর অপরাধে খোয়াড়ে বন্দী ছাগল ছানা হাতড়ায় হাটের মানুষের মধ্যে আপন মুখ--এ যেন বন্ধ্যা রমণীর পালিত সন্তান

পিতার পরিচয়হীন গাছি খেজুরের রস নামায়; গলিত বিশ্বাসেরা রসের হাড়িতে বল্কায়

বৌয়েরা রঙ পরে আসে মায়েরা চলে যায়; পূরণ মাঝি গায় পূনর্জন্মের গল্প

অকালে বন্ধুর বিয়োগ দেখে অবিশ্বাস থেকে আমরাও কোরাস হই মৃতের মিছিলে


ফনিমনসায় ঢাকা ভোরের রেণু

বীথিকা ডাল সরিয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছিল উষা। রোদের কাচে প্রগলভ সূর্যটা রশ্মি ছড়াচ্ছিল চৌকোনা ছাদের যৌথ টেবিলে। কোথা থেকে বইলে পবনদেব! মারিজুয়ানার স্রোতে ভেসে গেল অপেক্ষার মনিকাঞ্চন। সারারাত কাঁচকাটা হিরের কৌটো যোগ করে স্মৃতির মেদুরতা।
দূরে অপেক্ষার সাইরেন ।
লোটাকম্বল সমেত পথ আটকাতে চায় সাহারার ফনিমনসার বন... ছুটছি আমরা ছুটছে আমাদের আশালতা নদীর তীরবর্তী হাওরের ইতিহাস। কতকাল আগে  রাজন্যবর্গের মাথা খুলে পড়েছিল বাঘের পাকস্থলিতে আর বুনো মহিষেরা হাসছিল শস্যক্ষেতের আড়াল থেকে। হাওরের বাতাসে মানুষ ও মহিষ। আশালতার শাঁখায় তৈরী হচ্ছিল সমুদ্রগুহা। জীবিত সমাধিতে রাজার শতশত দেহামোদি সমেত...
হাঙ্গর শিকারি তুমি ইতিহাস কাঁধে মুখ থুবড়ে পড়লে বৃষ্টি পথরেখায়--হাওরের ওখানটায়--


বিচ্ছিন্নতা

(১)

নামটা হারিয়ে গেছে পাশা খেলার রাতে। পুঁটি পাতা হয়ে ডাকছি -- হে আমার বাল্যসখা ছাগল ছানারা। হাঁটের মাঝে বিকিকিনিরত কৃষাণী ভগ্নি--এক সাথে কত পথ উড়িয়েছি

(২)

চলে গেল চলবিদ্যুৎ। মোমবাতি ও চেরাগ জ্বালাবার নালী সরিয়ে রেখেছো।

(৩)

বেঁধে রেখেছো মৌবন। মৌমাছিরা মরে গেছে কবেই সরিষার ক্ষেতে--অনিয়মতান্ত্রিক কিটনাশকে

(৪)

কাল ভোর হলে নদীর ছবি আঁকবো নদীর নাভিতে রেখে এসেছি সাঁতার। এখনো ভোরের বাগানে হল্লা করে পাতিহাঁস কাল। মা আমার কাঁচাআম-দুধ মেখে আজও অপেক্ষা করে স্কুলফেরত বিকেলে

(৫)

কুঠারের কোপে কত সাবাড় হলো বাগান; মাটির ডিবি হতে মাটি ও সিমেন্ট। তোমাদের ভাস্কর্য বানানো হলো না জনক-জননী। জানোই তো শিল্পের আঙুল কেটে ফেলা হয়েছে চৌদ্দ ডিসেম্বরে...

(৬)

তোমার ঘাড়ে ও গর্দানে চাপাতির কোপ। হে আমার সহোদর আমি তো কাটা গলা নিয়ে ধর্না দিচ্ছি সচিব ও সম্পাদকের টেবিলে-মহলে!

(৭)

বাইরে কুয়াশা বৃষ্টির শব্দ! শব্দের গভীরে মাছের সাঁতার। মাছেরা হারিয়েছে সমুদ্রের পথ। সরকার খাল খনন কর্মসূচী শুরু করবে আবার

(৮)

মা-বাবা শুয়ে আছে যৌথ কবরে। সময় হলে ছেলেরাও শোবে। মেয়েদের নাকি কবর কিনে নিতে হবে! আসো বোনেরা একই কেটলিতে বিগলিত হই। পিতার কবরে বাসক গাছের গোড়ায় ঢালি মেয়েজল।

(৯)

শব্দের ঝাঁকুনিতে তোমাকে ভুলে গেছি। পাশবালিশে শুয়ে থাকা কথা ছুঁয়ে দেখি তার গায়ে নক্ষত্রের গুড়ো...
Top of Form





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন