স্বপন
যদি
টিলার ওপর ছোট্ট রেস্তোরাটার
চাতালে একটা টেবিল নিয়ে বসলে মনে হয় এই বোধহয় স্বর্গ। সামনে নিচে নীল ঘননীল
সমুদ্র। টিলা থেকে একটু পশ্চিমে একটা ছোট জেটি আছে – রোজ শুধু একটাই স্টীমার এসে
চলে যায়। বিশেষ কেউ নামাওঠা করে না। ছোটখাটো মালপত্তর, চিঠি, খবরের কাগজ এইসব আসে।
তাই জেটির ধারে সাদা সাদা সামুদ্রিক চিল সার দিয়ে বসে আছে শান্তিতে। সায়ংদেব
চৌধুরি ওয়েটারকে ডেকে বললেন – “একপ্লেট মাছভাজা আনো দেখি। সকালে ছোট মাছ ধরা হয়েছে
তো? বেশ লাল কুড়মুড়ে করে ভেজো। আর হ্যাঁ, একটা লাল ওয়াইন দিও”।
দূরে একটা দ্বীপের কালচে সবুজ
তটরেখা আবছা ঠাহর করা যায়। এতক্ষণ চোখে পড়েনি, দ্বীপের কাছ বরাবর সাদা বিন্দুর মত
পাল খাটানো নৌকা একটা ধীর অলস গতিতে চলছে। কোথা থেকে কোথায় যাচ্ছে? কোনো কাজে যাবে,
না সে এমনি ভেসে বেড়াতে চায়! নৌকার লোকটির সঙ্গে আলাপ করতে পারলে বেশ হত। টিলার
পাথুরে ঢালু জমিতে ঝোপঝাড় গজিয়েছে, তাতে অজস্র হলদে হলদে ফুল। ছোটবড় কটা প্রজাপতি
বসছে, উড়ছে আবার বসছে। না-ঠাণ্ডা-না-গরম হালকা হাওয়া দিচ্ছে, মেঘ আছে কিন্তু তা
বৃষ্টি হবার মত নয়। এমন সময় একটি মেয়ে...
...মানে নার্স এসে বলল – “স্যার,
আল্ট্রা-সাউণ্ডের জন্য যেতে হবে। না না হেঁটে নয় – হুইলচেয়ারে বসে পড়ুন। দাঁড়ান,
দাঁড়ান – হেই বুধন, স্যারকে ধরো। চটি না
হলেও চলবে, বেশিক্ষণ লাগবে না স্যার”।
বিরক্ত হয়ে ইংরেজি গল্পের বইটা
হাসপাতালের বিছানায় ছুঁড়ে ফেললেন। বর্ণনাটা এত সুন্দর যে সায়ংদেব নিজেই যেন ইটালিতে
নেপলস্ উপসাগরের তীরে পৌঁছে গিয়েছিলেন। মনে মনে ওয়েটারকে বললেন – “মাছটা একটু পরে
ভেজো, ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। এই আসছি ভাই...”
হুইলচেয়ার ওরা লিফটে নিয়ে এল।
আজকাল লিফটে মিউজিক বাজে - নামার সময় টুংটাং করে একটা সুর বাজছিল। ভৈরবী পর্দায়
নাকি? কে জানে! ওটা থেকেই বোধহয় অনেকদিনের
শোনা একটা গানের লাইন মনে পড়ে গেল -
স্বপন যদি মধুর এমন হোক সে মিছে
কল্পনা / জাগিও না আমায় জাগিও না...
হাসি
একটু পেয়েছিল সায়ংদেবের, কিন্তু তারপরেই মনটা বড় খারাপ হয়ে গেল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন