বৃহস্পতিবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১৯

অর্ক চট্টোপাধ্যায়




কথামাংস
                                               

একলা একটা কারসার। ব্লিঙ্ক করছে। সাদা স্ক্রিনের ওপর আসছে যাচ্ছে। থাকছে না কিছুতেই। থাকছে না। থাকতে পারছে না। কিছুতেই। একলা একটা কারাসার। লিখনের প্রতিশ্রুতি।

সমস্যা হলে বাধ্যতামূলক এই লিখন। কথা বলতে না পারলে লেখা। লিখে রাখা। লেখো? শব্দগুলো আসছে, যাচ্ছে, থিতু হতে পারছে না। কারসারটা একা। ব্লিঙ্ক করছে। লেখা তৈরি করতে পারছে না।

অনেক বছর ধরে নিরাময় গঞ্জনা শুনছে। এতো বেশি শুনেছে যে ভাষামাত্রেই এখন তার কাছে গঞ্জনা হয়ে উঠেছে। শ্রবণ মানেই গঞ্জনা। অনেক বছর ধরে কান দিয়ে কত কথাই না ভেতরে ঢুকে এলো। ঢুকে এলো, বেরোল না আর। কিছুতেই বেরোল না।

আগে নিরাময় ভাবতো সেইসব কথা কানের ভেতর দিয়ে ঢুকে মগজের নানা প্রকোষ্ঠে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়ে বেড়াচ্ছে। তারপর একদিন মাঝরাত নাগাদ বুকের ভেতর কেউ দুরমুশ পিটতে শুরু করলো। সেদিন থেকে নিরাময় বুঝতে পারল কান দিয়ে ঢুকে আসা কথা মগজে নয়, বরং নীচের দিকে নেমে আলজিভ বরাবর গলার কাছে একেকটা মাংসপিণ্ড হয়ে থেকে গেছে।

ঢোক গিলতে গেলে ব্যথা লাগে নিরাময়ের। রাতে ঘুমের ব্যাঘাত শুরু হয়েছে নিরন্তর। কেউ যেন বুকের ভেতর দুরমুশ পিটছে। নিরাময় জেনে গেছে প্রতিদিন একটু একটু করে ঐ কথামাংসগুলো গলা বেয়ে নীচে নেমে এসেছে গলার সিঁড়ি যেখানে শেষ, সেখানে অন্ধকারে ওঁত পেতে বসে রয়েছে। ক্রমশ বুকের মধ্যিখানে এসে বসে পড়েছে। এখন ওখান থেকেই দুরমুশ পিটছে কথামাংস।

নিরাময় ভাবে, এই যে শোনা কথার গঞ্জনা মাংসপিণ্ড হয়ে উঠলো, একে কি আর লেখা যাবে? একলা কারসার চুপ হয়ে থাকবে এই কথামাংসের কথা লিখতে বসলে। ব্লিঙ্ক করবে। কিছুই লিখে উঠতে পারবে না। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন