তেষ্টা
যথারীতি বেলেঘাটা বাইপাসের
মোড়ে গাড়ি সিগন্যালে। লম্বা ছিপছিপে মেয়েটি জগতের তাবত সুষমা নিয়ে তাকাল। এক গভীর
বেদনা কুলকুল করে পেট থেকে ক্রমশ নীচে নামছে। শেয়ারের গাড়িতে বসে পাথর হয়ে যাচ্ছে
তনুময়।
গাড়িতে বসে খুব মন দিয়ে
মানুষের অভিব্যক্তি পরখ করে দেখা অভ্যেস
তনুময়ের। নিপুণ কারিগরের মতো নিজের লেখা চরিত্রে সে সব ফুটিয়ে তোলে। আজ উল্টো দিক
থেকে ক্রস করে যাওয়া মেয়েটির মুখের দিকে তাকাতে এই বিপত্তি। চোখ বন্ধ করে ফেলল
তনুময়। তখুনিই ড্রাইভারের ডাকে চোখ খুলতে হল। দরজা খুলে যাত্রী উঠছে গাড়িতে এবং
নিজের সমস্ত চেতনা ধনুকের ছিলার মতো টানটান। হ্যাঁ, তিনিই উঠেছেন। টেনশনে ঘামতে
শুরু করেছে সে।
থেমে থাকা বাহনকুলের নড়াচড়া শুরু হল। শুরু হল যাত্রা,
এ যেন এক অন্তঃহীন যাত্রা। আদ্যপ্রান্ত ভদ্র সভ্য বলে পরিচিত তনুময়ের একি বেয়াড়া
কিসিমের অনুভূতি! গায়ের সঙ্গে লেগে থাকা অংশ অবশ হয়েছে। মনের ভিতর অজানা বাসনার
কিলবিল। এই ছাব্বিশ বছর বয়সে বহু মেয়ের সামনাসামনি হয়েছে সে। এই ধরনের কাঁপুনির
অভিজ্ঞতা হয়নি। অবরোধের সরণী বেয়ে বিচিত্র তৃষ্ণার উদয়।
বাসনার তারে লেখক তনুময় থরথর কাঁপছে। মস্তিষ্ক জুড়ে
অদ্ভুত সুবাস। নেশালু চোখে অলৌকিক জলরঙা ছবিদের নড়াচড়া। তারই লেখা এক শয্যাদৃশ্যের
বর্ণনা রিনরিন করে। এই মুহূর্তে যাচ্ছেতাই মনে হল এবং নিজের
লেখাকে দশে শূন্য দিল সে।
অভাবী সাতরঙা যাত্রা
শেষ করে তিনি নিঃশ্চিন্তে অজয়নগরে নেমে গেলেন। তনুময়ের মন জুড়ে তখন চড়া সুর। নতুন
এক তেষ্টায় শরীর শুকিয়ে কাঠ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন