শনিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৮

অচিন্ত্য দাস




ইমন


আমাদের মহিলা-সমিতির বাকি জনা-ছয়েক ট্রেনে সন্ধ্যের পর পৌঁছোবে, মুকুলিকা আর আমি গাড়িতে দুপুরের দিকে এসে হোটেলে চেক-ইন করেছি। জায়গাটা দারুন, হোটেলটাও ভাল। বাইরের বারান্দায় চা নিয়ে বসেছি। সামনে পাহাড়-ঘেরা লেক, ওপারে ঘন বন। সামনেই গোটাকয়েক আকাশমণি আর শিমূল গাছ। লাউঞ্জে সারাদিন মিউজিক চলে, এখান থেকেও হালকা শোনা যায়। এককালে গান শিখেছিলাম তাই বুঝতে পারলাম – ইমন রাগে আলাপ বাজছে, বাঁশিতে। ভারি সুন্দর, উঁচুদরের শিল্পী নিশ্চয়। কথার ফাঁকে ফাঁকে কান চলে যাচ্ছিল ওদিকে
মুকুলিকা আমার অনেকদিনের বন্ধু। আমারই মত ষাটের ঘরে পা দিতে যাচ্ছে। বর রিটায়ার করেছে, বড় কাজ করতওর ছেলেরা দাঁড়িয়ে গেছে ভালভাবে। তবে মুকুলিকা এখনো সুন্দরী, এখনো অনেকেই ওর প্রেমে পড়তে পারে। আর আজকে এই শেষ-বিকেলের সময়টাতে সবুজ শাড়িতে ওকে দারুন লাগছে। দূরের দিকে একটু যেন আনমনা হয়ে তাকিয়ে ছিল। মুচকি হেসে বললাম -     “তোকে না ঠিক সুচিত্রা সেন সুচিত্রা সেন লাগছে। ‘ওল্ড ফ্লেম’ মানে প্রাক্তন কাউকে মনে পড়ছে না কি রে...”
আমাকে একটু চমকে দিয়ে মুকু বলল - “তুই কী করে জানলি?”
“মানে... ঠিক বললাম বুঝি?”
মুকু বলল – “জানিস, আমি তখন পনেরো, টেন-এ উঠেছিশৌভিক পাশের  বাড়ির ছেলে। অন্য জায়গায় কলেজে পড়ত, ছুটিতে আসত। চিনতাম আগে থেকে কিন্ত সেবার পুজোর প্যাণ্ডেলে দু-তিনদিন ওর সঙ্গে কাছাকাছি ছিলাম, অনেক কথাও হয়েছিল। তারপর কী যে হল, পনেরোতে বোধহয় এরকম হয়,  সারাদিন ওর কথাই মনে হতজেগে জেগে স্বপ্নও দেখতাম।
“তারপর?”
“তখন তো স্মার্টফোন, হোয়াটসঅ্যাপ ছিল না। কোথায় হারিয়ে গেল সেআমিও  কোথায় চলে গেলাম — দেখাই হল না আর”
“এতদিনে একবারও নয়?”
“না। ভুলেও গিয়েছিলাম বোধহয়। তবে আজকে এখন কেন জানি না,  শৌভিককে ভীষণ মনে পড়ছে। কেন বল তো? জায়গাটা সুন্দর বলে? দেশে- বিদেশে এমন অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গায় গেছি, এরকম তো কোনোদিন হয়নি রে!”
চুপ করে রইলাম। মানুষের মনের মনের হদিস কে আর কবে খুঁজে পেয়েছে!  তবে একটা কথা মনে হল। মুকু  বুঝতে পারবে কি না জানি না, তবু বললাম -  “শোন মুকু, সুন্দর জায়গায় এরকম পড়ন্ত বিকেল হয়ত অনেকবার দেখেছিস, কিন্তু তার সঙ্গে তো ইমন কখনো বাজেনি! এতগুলো বছরের ওপার থেকে তোর  কাছে ওকে এমন করে কে আর নিয়ে আসতে পারে বল্, এক ওই ইমন ছাড়া!”  
  
  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন