শনিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৮

অশোক তাঁতী




এপিটাফ


১৯৬৮ সালের সাথে এই বছরের অনেক পার্থক্য। যেমন চাঁদের সাথে এলইডির, রোমানের সাথে রোহিঙ্গার, মেছোভূতের সাথে কবির, অথবা কুকুরের সাথে কুত্তার বাচ্চার।

জানালার কাছে দাঁড়ালে ঝকঝকে আকাশ। সামনের রাস্তা দিয়ে মেয়ে, মহিলা, মেয়েছেলেরা চমকিলা হেঁটে যাচ্ছে। এই ঝলমলে আলোয় সবাই মশগুল। কেঊ অন্যকে খেয়ালই করছে না। আমিও কত হেঁটেছি, মায়ের হাত ধরে, মেয়ের হাত ধরে। একটা মেয়ে পাশের দোকানের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলেছে – আইস্ক্রিম খাবো। ঠিক তেমনি শব্দ না এলেও কেঊ যেন আঙুল তুলে দোকানের দিকে দেখাল সবাই দোকানের দিকে এগোলো।

মনে হল আমিও একটা আইসক্রিম খাই। মায়ের হাত ধরে থামলাম রাস্তার পাশের দোকানে। সামনে লেটেস্ট মডেলের একটা ঝকঝকে মোটরবাইক রাখা। মাকে বললাম, বড় হয়ে এমনি একটা বাইক আমার চাই। দোকানদার আমাকে বাইকের ওপর বসিয়ে দিল। সুন্দর মখমলের সিট। ঝকঝকে আয়নায় রাস্তার লোকের হেঁটে  যাওয়া।
পেছনে তাকাতেই হাওয়া বদলে গেলশুনশান। সেই দোকানের গায়ে মাকড়সার ঝুল। রঙচটা সাইনবোর্ড। ঠিকানা লেখার জায়গাতে খাঁ খাঁ শূন্যতাখোলা  কোলাপ্শিবল গেটের আধখানা নেই, বাকি আধখানাতে একটা তালা ঝুলছে। সামনে একই জায়গাতে একটা পুরনো বাইক দাঁড়িয়ে। সামনের চাকা মাটির ভেতর অনেকটা গুঁজে আছে। পেছনের চাকা নেই, সিটের ফোম ছিঁড়ে ঝুলন্ত

নিজেকে দেখলাম জানালার গ্রিল ধরে রাস্তায় তাকিয়ে আছি। আলো ম্যাড়ম্যাড়ে হলুদ। জানালার বাইরে থেকে একটা ঠাণ্ডা বাতাস ঘরে ঢুকে সব কিছু ঘুলিয়ে দিয়ে চুলের ভেতর বয়ে গেল। কয়েকটা শুকনো পাতা ঘরের মাঝখানে স্বাধীনভাবে উড়ে বেড়াচ্ছে। সেই হাওয়াতে রাস্তা জুড়ে হেঁটে যায় কিছু অপরিচিত ধুলো। পাশের  তেঁতুল গাছে ডেকে উঠল একটা কাকআকাশ মেঘলা মেঘলা। দূরে কোথাও মেঘের মধ্যে বাজের চমক।

একটা রোগা কঙ্কালসার শরীর আমার জানালার পাশের বিছানায় শুয়ে আছে। স্থির, শান্ত। নিঃশ্বাস পড়ছে কিনা বুঝতে পারছি না।
খাটের পায়া বেয়ে উঠে আসছে লাল পিঁপড়ের ঝাঁক। অবিকল ক্ষেত্রপালের গলায় দুটো কুকুর ডেকে উঠল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন