প্রতিবেশী সাহিত্য
ওক্তাভিও পাস-এর কবিতা
(অনুবাদ : জয়া চৌধুরী)
কবি
পরিচিতিঃ
ওক্তাভিও
পাস লোসানো ওরফে ওক্তাভিও পাস মেক্সিকান কবি ও ডিপ্লোম্যাট মেক্সিকোয় ১৯১৪ সালে
জন্মগ্রহণ করেন। মিগেল দে সেরভান্তেস পুরস্কার এবং নোবেল পুরস্কার বিজয়ী এই কবির
জন্মশতবর্ষ ছিল ২০১৪ সালে। মারক্সিজম, সুররিয়ালিজম ও
এক্সিস্ট্যানশিয়ালিজমের বিশেষ প্রভাব দেখা যায় তাঁর কবিতায়। ভারতে রাষ্ট্রদূত
হিসাবে কাজ চলাকালীন তিনি ‘ভিসলুম্ব্রেস দে লা ইন্ডিয়া’ বা ‘ভারতের আভাস’ নামে বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন। ইংরাজী ভাষার প্রাতঃস্মরণীয় বেশ ক’জন কবি তাঁর কবিতার
অনুবাদ করেন - যেমন এলিজাবেথ বিশপ, স্যামুয়েল বেকেট, চার্লস টমলিনসন প্রমুখ। সর্বাধিক বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থের নাম ‘সূর্যের পাথরকুচি’ বা ‘পিয়েদ্রা দে সল’। ১৯৯৮ সালে তিনি প্রয়াত হন।
Objetos (বস্তু)
আমাদের পাশেই বসবাস করে ওরা,
আমরা ওদের পাত্তা দিই না, ওরাও
দেয় না আমাদের।
(‘Uxmal’ - প্রাচীন এক মায়া শহরের
নাম উক্সমাল। সেই বইয়ের অন্তর্ভুক্ত নিচের কবিতাগুলি)
la piedra de dos dias (দু’দিন বয়সী পাথর)
সূর্য স্বয়ং হলেন কাল;
সময় হলেন, সূর্যের পাথরবিশেষ;
পাথর, হল রক্ত।
Mediodía (দুপুর)
আলো চোখ পিটপিট করে না,
সময় শুন্য হয়ে যায় মুহূর্তে,
একটি পাখি আটক হয়েছে আকাশে।
Pleno Sol (পূর্ণ সূর্য)
সময় স্বচ্ছ-
আমরা দেখি, পাখি যদি হয় অদৃশ্য,
তার সংগীতের রঙখানি।
অনুবাদক পরিচিতি :
জয়া চৌধুরী রামকৃষ্ণ মিশন, গোলপার্কে স্প্যানিশ ভাষার শিক্ষক। গত কয়েক বছর ধরে তিনি অনুবাদ চর্চায় রত।
মূলত স্প্যানিশ-বাংলা-স্প্যানিশ ভাষায় অনুবাদ করেন তিনি। প্যারাগুয়ে দূতাবাস থেকে
২০১৩ সালে একটি উপন্যাস ও একটি কাব্যগ্রন্থের দুটি অনুবাদ বই প্রকাশিত হয়েছে। এ
ছাড়াও ছোটগল্প সঙ্কলন ও নাটকের অনূদিত দুটি বই গত বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে। বেশ
কিছু সাময়িকী, সংবাদপত্র
‘আনন্দবাজার পত্রিকা’, ঢাকা
থেকে প্রকাশিত ‘ভোরের কাগজ’ ইত্যাদিতে তাঁর বেশ কিছু অনুবাদ
ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন মঞ্চে নিয়মিত নাটক করেন তিনি, বাংলা ও
স্প্যানিশ দুই ভাষাতেই। সম্প্রতি মৌলিক
কবিতাও কয়েকটি ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে।
মঙ্গলেশ ডাবরাল-এর কবিতা
(অনুবাদ : মিতা দাস)
কবি
পরিচিতিঃ
বিখ্যাত সমকালীন ভারতীয় কবি। তিনি উত্তরাখন্ডের গাঢ়ওয়ালের তেহারী জেলার কপালপাঁনি গ্রামে জন্মগ্রহণ
করেন। জন্ম তারিখ ১৬ই মে ১৯৪৮। উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে শিক্ষা সম্পন্ন হয় তাঁর। তিনি দিল্লিতে
হিন্দী প্যাট্রিয়ট, প্রতাপক, আসপাস ইত্যাদি সংবাদপত্রে চাকরি করেছেন। হিন্দীতে রচিত
তাঁর কবিতা সংকলন ‘কবি কা একেলাপন’, ‘ঘর কা রাস্তা’ , ‘পাহাড় পর ললটন’, ‘হম জো দেখতে হ্যাঁয়’, ‘একবার লোবা’, ‘খোঁজো-পহচানো’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তিনি কবিতা রচনার জন্য
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সাহিত্যসম্মান লাভ করেছেন - ওমপ্রকাশ স্মৃতি
সন্মান, শ্রীকান্ত বর্মা পুরস্কার, শমশের
সন্মান, ইনিশিয়েটিভ অ্যাওয়ার্ড, কুমার বিকল স্মৃতি সম্মান, সাহিত্য একাডেমি
পুরস্কার, হিন্দী একাডেমি'র
সাহিত্য পুরস্কার, পহল সম্মান ইত্যাদি।
ধোঁয়া
এই কথাটি সেই জানতে পারে যে বাইরে থেকে ভেতরে ঢোকে
আমি তো বেশিরভাগ ভেতরেই থাকি
ধোঁয়া ওড়াই, পান করি ও বাইরেও ফেলি
ধোঁয়ায় ঘেরা কাগজের উপর এক নাগারে ঝুঁকে থাকি
ধোঁয়া, তামাকের খেয়াল ও
একটি ওই আগ্নেয়গিরি
যার কিছুটা অংশ আমার
হৃদয়
সেও বাইরে থেকেই ভেতরে আসে
সেই বকাবকি করে আমায়
তারপর এও বলে কী করে থাকো তুমি
এই তীব্র গন্ধেও ওই তোমার ভেতরের
এত ঘন ধোঁয়ায়।
হত্যাকারী
বহুদূর থেকে এসেছে
হত্যাকারী
ওকে পার করতে হয়েছে
দুর্গম ও ভয়াবহ জঙ্গল
নানান মৌসুমের মারও সহ্য করতে হয়েছে
অজানা দুরূহ পথে
ক্ষুধার্ত কাটিয়েছে কতদিন
সেনানীরাও সহ্য করেছে কত অসুবিধে, মুশকিল
সেই হত্যাকারীর জন্য
সেনানীরা শুধু কেটে মরবে আর
জিতবে হত্যাকারী
প্রত্যেকবার জেতার পর
লাশের স্তূপের উপর একলা দাঁড়িয়ে
হত্যাকারী বলবে
এখন আমি চললাম বুদ্ধের আশ্রয়স্থলে।
যে বাচ্চারা পায়ে হেঁটে স্কুল যায়
পায়ে হেঁটে যে বাচ্চারা স্কুল যায় ওদের কোন ভরসা নেই
ওরা বাড়ি থেকে আগে–ভাগেই বেরিয়ে যায়
স্কুলে জন্য
কিন্তু স্কুলে পৌঁছোয় দেরী করেই
পথেই নোংরা হয়ে যায় ওদের জামাকাপড়
সেই নোংরা কাপড় নিয়েই ছুটে যায় স্কুলের দিকে
আর স্কুলে চোখ নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে লাইন ধরে
যদি বাইরে যাও তাহলে দেখা যায় ওদের দ্বারা ছেঁড়াফুল
ঘাস মাড়ানোর দাগ আর মনে হয় মেঘ এক্ষুনি ভেঙ্গে পড়বে
রোজ এবড়ো–খেবড়ো পথ পার করে
যারাই আসা–যাওয়া করে
ওদের ওরা প্রশ্ন করে কী... কটা বাজলো দাদা
কিন্তু ভর বর্ষায় ও ওরা পৌছে যায় স্কুলে
শুধু এই দেখার জন্য কি স্কুল আজ খোলা কি বন্ধ
পথ হাঁটা বাচ্চাদের কাছে লুকানোর মত কিছুই থাকে না
বইয়ের ভেতর প্রজাপতিও থাকে না
পায়ে জুতো ও থাকে না যে সেই জুতোগুলি ওরা লুকিয়ে রাখুক গাছের তলায়
কতবার ওদের শাসন করা হয়
স্কুলে জুতো পরে আসবে
হাত–পায়ের নখগুলি যেন সুন্দর ভাবে কেটে
পরিষ্কার করে আসে
কত বার বেতের মার ও খেতে হয়েছে
আবার অনেকবার ওদের বলা হয়েছে যে আর কক্ষনো নিয়ে যাওয়া
হবে না
বড় বড় মহাপুরুষদের অভিনন্দনের জন্য
পথ হাঁটা বাচ্চাদের মুখের আদল কিন্তু ঠিক ওদের মায়ের
মুখের মতই
সন্ধ্যায় যখন ওরা দল বেঁধে বাড়ি ফেরে, মনে
হয় যেন ওদের ওপর কোনো হামলা করে তাড়ানো হয়েছে
পথ হাঁটা বাচ্চাদের জীবনেও কখনো কখনো ফুলও ফোটে
পথ হাঁটা বাচ্চাদের জীবনে কখনো কখনো হাওয়াও বয়
কখনো কখনো ওদের দেখা যায়
কোমল মানবীয় ভাবনার বিরোধিতায়
কিছু কিছু শব্দ লিখে রাখতে।
মায়ের ছবি
বাড়িতে মায়ের কোনো ছবি নেই
যতবার ছবি তোলার সুযোগ হয়েছে
মা ঘরের কোনো হারিয়ে যাওয়া জিনিস খুঁজতেই ব্যস্ত
আর না হয় কাঠ, ঘাস বা জল আনতে
গেছে
জঙ্গলে মায়ের সঙ্গে একবার বাঘের দেখা
সে কখনো ভয় পায়নি
বাঘকে তাড়িয়েই ঘাস কেটে বাড়ি ফিরেছে সেই দিন
ও আগুন ধরিয়ে সবার জন্য রান্না করেছে
আমি কিন্তু কক্ষনো ঘাস বা কাঠ কাটতে জঙ্গলে যায়নি
কখনো আগুনও ধরায়নি
আমি সব সময় বহু বছর ধরে রাখা
একটি পুরনো নক্কাসী করা চেয়ারে বসেই থাকতাম,
সেই চেয়ারেই বসে সব ছবি তোলা হত
আমি মায়ের মুখে দেখতে পাই ফুটে উঠা
একটা জঙ্গলের ছবি,
কাঠ, ঘাস ও জলের ছবিও
আর দেখতে পাই হারিয়ে যাওয়া জিনিসপত্রের ছবিও।
শহর
আমি দেখলাম শহরকে
আর স্মিত হাসলাম
কেউ এখানে থাকতে পারে কি?
সেই ভেবে আমিও এসেছি শহরে
কিন্তু আমি আর ফিরেই যাইনি।
কবিতা
কবিতাটা ছিল গোটা দিনের ক্লান্তি
কিন্তু রাতে ছিল ঠিক ঘুমের মত
মনে হল সকালটা জানতে চাইছে প্রশ্ন করে :
তুমি কি কাল রাতে খাবার খেয়েছিলে?
অনুবাদক পরিচিতি :
জন্মতারিখ ১২ জুলাই ১৯৬১ মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরে। বর্তমানে বসবাস ছত্তিশগড়ের ভিলাই শহরে। একাধারে কবি, গল্পকার,
প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও সম্পাদক। হিন্দি ও বাংলা দুই ভাষায় সমানভাবে লেখালেখি
ও অনুবাদ করেন। হিন্দিতে তাঁর অনুবাদ সংকলন ‘কবি নবারুণ ভট্টাচার্যের প্রতিনিধি কবিতা’। বাংলায় নিজস্ব কবিতা সংকলন ‘অন্তরমম’। এছাড়া হিন্দি কবিতার বাংলায় অনুবাদের সংকলন ‘ভারতীয় ভাষার অঙ্গনে’। সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছেন হিন্দি ভাষায় খুবচাঁদ বাঘেল সম্মান, মহাত্মা গান্ধী
রাষ্ট্রীয় ভাষা প্রচার-প্রসার সম্মান এবং বাংলা ভাষায় কবি রবীন সুর সম্মান (শিলিগুড়ি)।
অনুবাদ কে স্থান দেয়ার জন্য ধন্যবাদ
উত্তরমুছুন