সব পথেই জীবন
ভোর থেকে লম্বা কিউ। একটা ইট দিয়ে জায়গা রেখে চলে গেছে কেউ
কেউ। ইটের দেয়া জায়গা মানবে কেন মাটির মানুষ, রাগে ক্ষোভে উঠিয়ে উঠিয়ে ইট দূরে দূরে ফেলে দিয়ে নিজেরাই
দাঁড়িয়ে পড়ছে লাইন ধরে। লাইনটা লম্বা হতে হতে বেলা কিছু বেড়ে গেছে। পুরনো অন্ধকার
সময়ের মানুষেরা বরাদ্দ নিয়ে চলে গেছে। নতুন কিছু মুখ জড়ো হয়ে ফের জায়গা নিয়ে জটলা করছে। কিউ বাড়ছে
রাবারের মতো।
হাঁপাতে হাঁপাতে মোল্লা বাড়ির সেজোছেলে ময়লা নেতানো একটা ব্যাগ
হাতে লাইনের শেষটায় এসে দাঁড়াল। তার আরেক
হাতে বোনের মেয়ে টুকটুকিকে ধরা। ও ক্লাস সিক্স। ব্যাগ থেকে
মেঝেতে বাজার ঢালার দৃশ্যটা টুকির খুব প্রিয়। অল্প সদাই ও মেঝেতে পড়ে অনেক বেশী
চোখে লাগে।
স্কুলের ব্যাগ থেকে টুকি হলুদ রঙের কার্ড বের করে। তাতে বাড়ির সদস্যদের নাম, লোকসংখ্যা, বাড়ির ঠিকানা এবং জিনিসপত্রের বিবরণ দেয়া আছে। অল্প টাকার বিনিময়ে
নেহাৎ মন্দ নয়। বরাদ্দ পেলেই এখান থেকে দে ছুট বাড়িতে। আজ ভাল মন্দ রান্না হবে।
টুকিকে আজ স্কুলে যেতে দেয়নি সেজমামু। কারণ স্কুলে
গেলে রেশনের ব্যাগ মামু একা নেবে নাকি, তাকেও নিতে হবে। সংসারে বাপ ছাড়া মেয়ের অত বসে বসে খাই খাই কিসের! কাজ করে খায় টুকি।
প্রতি বিষ্যুদবারে টুকির স্কুল মিস হয়। মন একটু খারাপ
হয় তার।
সূর্য একদম মাথার ওপর। জামা ঘামে
ভিজে একশেষ। কোন ফাঁকে পায়ের স্পঞ্জের একপাটি ফট
করে ছিঁড়ে গেল খেয়াল করেনি। ক্ষিদের চোটে চোখ বড় হয়ে আসে।
আজ টুকটুকি বাজার নিয়ে দৌড় দেবে ঠিক করেছে। মামু যে বাজারে কিছু
কিছু চাল ডাল বিক্রি করে দিতো রেশন থেকে আগে তা ভাল বুঝতো না টুকি। আজ মামু অন্য রাস্তা
ধরলেই টুকি মাকে বলে দেবে।
সেজমামু শুকনো খরখরে এক পায়েই যেন দাঁড়ানো তালগাছের মতো।
সকালে খালিপেটে ত্রিফলা ভেজানো জল ছাড়া কিছু খায়নি। কতক্ষণ আর ক্ষিদে সহ্য হয়। হুট
করে ধর ধর ধর জটলা মতো হলো, টুকি খানিক সামনে দাঁড়িয়ে ছিল, ভীড় দেখে দৌড়ে এলো মামু... মামু...
সেজমামুর আর নড়চড় নেই। মামুকে লোকজন ধরাধরি করে সদরে
ডাক্তারের কাছে নিল। টুকি বাজারগুলো নিয়ে অন্যপথে পথে। যে ক’টা টাকাই পাক মামু
ফিরলে তাকে দেবে সে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন